শনিবার, ২০ জানুয়ারি, ২০২৪ ০০:০০ টা

সূর্যের উঁকিতে কমল শীত

হাসপাতাল ভরে গেছে ঠান্ডাজনিত রোগীতে, অনেকের মৃত্যু

নিজস্ব প্রতিবেদক

সূর্যের উঁকিতে কমল শীত

হালকা বৃষ্টির পর কুয়াশা কেটে যাওয়ায় দেশের অধিকাংশ স্থানে গতকাল উঁকি দেয় সূর্য। এতে কমেছে শীতের দাপট। এক দিনের ব্যবধানে অধিকাংশ এলাকায় সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ২-৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস বেড়েছে। গতকাল শুধু পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়ায় ১০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের নিচে তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়। শীত কমায় চালু হয়েছে বন্ধ থাকা বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। তবে শৈত্যপ্রবাহ কাটলেও উত্তরের জেলাগুলোয় এখনো রয়েছে শীতের দাপট। হাসপাতালগুলো ভরে গেছে শীতকালীন রোগে আক্রান্ত রোগীতে।

আবহাওয়া অধিদফতরের বিজ্ঞপ্তিতে দেখা গেছে, গতকাল দেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল তেঁতুলিয়ায় ৯.৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস, যা আগের দিন ছিল ৮.৭ ডিগ্রি। বৃহস্পতিবার দেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল দিনাজপুরে ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস, যা গতকাল বেড়ে দাঁড়ায় ১০.৯ ডিগ্রি সেলসিয়াসে। বৃহস্পতিবার সকালে রংপুর বিভাগের পাঁচ জেলার সব আবহাওয়া পর্যবেক্ষণাগারে ১০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের নিচে তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়। গতকাল সকালে তেঁতুলিয়া ছাড়া আর কোথাও তাপমাত্রা ১০ ডিগ্রির নিচে ছিল না। এক দিনের ব্যবধানে গতকাল রাজশাহীতেও সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ৩.২ ডিগ্রি বেড়ে ১৩.৮ ডিগ্রি সেলসিয়াসে দাঁড়ায়। ঢাকায় সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ১২.৮ ডিগ্রি থেকে বেড়ে দাঁড়ায় ১৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসে। তবে উত্তরের জেলাগুলোয় এখনো তাপমাত্রা ১১ ডিগ্রি সেলসিয়াসের আশপাশে রয়েছে।

আবহাওয়া অধিদফতর বলছে, আজ মধ্যরাত থেকে আগামীকাল সকাল পর্যন্ত নদী অববাহিকায় মাঝারি থেকে ঘন কুয়াশা এবং অন্যত্র হালকা থেকে মাঝারি কুয়াশা পড়তে পারে। রাতের তাপমাত্রা সামান্য কমতে পারে, তবে দিনের তাপমাত্রা পরিবর্তনের তেমন কোনো সম্ভাবনা নেই। ২২ জানুয়ারির পর বৃষ্টিপাতের পূর্বাভাস রয়েছে। এদিকে শীত কিছুটা কমলেও দেশের হাসপাতালগুলো ভরে গেছে শীতকালীন রোগে আক্রান্ত রোগীতে। অধিকাংশই শিশু ও বৃদ্ধ। অনেক শিশুই নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত। প্রাণহানিও ঘটছে। আমাদের প্রতিনিধিদের পাঠানো তথ্যে দেশের বিভিন্ন স্থানে শীতের পরিস্থিতি তুলে ধরা হলো-

ঠাকুরগাঁও : ঠান্ডার কারণে শিশুদের নিউমোনিয়া, সর্দি, কাশি, জ্বরসহ ডায়রিয়ার প্রকোপ বেড়েছে। হঠাৎ রোগীর চাপ বাড়ায় হিমশিম খাচ্ছেন চিকিৎসকরা। ঠাকুরগাঁও ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালে শিশু ওয়ার্ডে শয্যার সংখ্যা ৪৫। গতকাল শিশু বিভাগে ভর্তি ছিল ১৮৫ শিশু। সদর উপজেলার জামালপুর ইউপি চেয়ারম্যান এম এস মোস্তাক বলেন, ‘অতিরিক্ত ঠান্ডার কারণে গত সাত দিনে আমার ইউনিয়নে প্রায় ১৫ জন মারা গেছে। সবারই শীতনিবারণে তেমন কোনো বস্ত্র ছিল না।’ ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালের শিশুবিষয়ক চিকিৎসক সাজ্জাদ হায়দার শাহীন বলেন, শীতের এই সময়ে ভাইরাসের প্রবণতা বাড়ায় শিশুরা বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হচ্ছে। কুড়িগ্রাম : কুড়িগ্রামে গতকাল সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ১.১ ডিগ্রি সেলসিয়াস বেড়ে ১০.১ ডিগ্রি সেলসিয়াসে দাঁড়ায়। তবে আজকের পর আবারও মৃদু শৈত্যপ্রবাহ দেখা দিতে পারে বলে জানিয়েছেন রাজারহাট কৃষি আবহাওয়া পর্যবেক্ষণাগারের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা সুবলচন্দ্র সরকার। এক সপ্তাহ পর গতকাল দুপুরে সূর্যের দেখা গেলেও উত্তাপ ছিল কম। তাই ঠান্ডার মাত্রা খুব একটা কমেনি। সন্ধ্যার আগে আবারও কুয়াশায় ছেয়ে যায় গোটা জনপদ। কনকনে শীতে বিপাকে আছে নিম্ন আয়ের মানুষ। অনেক কৃষক চটের বস্তা দিয়ে গরু-ছাগলের শরীর ঢেকে রাখছে। গত এক সপ্তাহে সদ্য বেড়ে ওঠা বোরো বীজতলার কিছু কিছু খেত হলুদাভ ধারণ করেছে। জেলা কৃষি বিভাগ ওইসব বোরো বীজতলায় স্প্রে করার পরামর্শ দিয়েছে। এদিকে জেলার ২৫০ শয্যার জেনারেল হাসপাতালসহ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সগুলোয় প্রতিদিন ডায়রিয়া, আমাশয়, নিউমোনিয়া, কাশি, অ্যাজমাসহ নানা শীতজনিত রোগে আক্রান্তের সংখ্যা বেড়েই চলেছে। গত ২৪ ঘণ্টায় জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি হয় ৩০-৩২ জন। অধিকাংশই শিশু ও বৃদ্ধ।

চুয়াডাঙ্গা : চলতি শীত মৌসুমে চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে ডায়রিয়া, নিউমোনিয়াসহ শীতজনিত রোগীর সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়েছে। গত সাত দিনে এ হাসপাতালে ৭৮২ জন শীতজনিত রোগী ভর্তি হয়েছে। এর মধ্যে শিশু ওয়ার্ডে ৩৩৯ আর ডায়রিয়া ওয়ার্ডে ৪৪৩। বেশির ভাগই শিশু ও বয়স্ক। ১০০ শয্যার চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে শিশু ওয়ার্ডে ১২ শয্যার বিপরীতে গতকাল বেলা ১১টা পর্যন্ত ভর্তি ছিল ৫১ শিশু। কয়েক গুণ রোগীর চাপে প্রয়োজনীয় স্বাস্থ্যসেবা দিতে হিমশিম খাচ্ছেন চিকিৎসক ও নার্সেরা। চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালের শিশু কনসালট্যান্ট ডা. আসাদুর রহমান মালিক বলেন, আবহাওয়া পরিবর্তনের কারণে অনেকে ঠান্ডা-কাশি ও রোটাভাইরাসজনিত ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হচ্ছে। শীতের এ মৌসুমে শিশুদের বিশেষ যতেœ রাখতে হবে। সব সময় গরম কাপড় পরাতে হবে। তবে কোনোভাবেই যেন শিশুরা ঘেমে না যায়, সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে।

সর্বশেষ খবর