রবিবার, ২১ জানুয়ারি, ২০২৪ ০০:০০ টা

উপজেলা নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার প্রস্তুতি

গোলাম রাব্বানী

উপজেলা নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার প্রস্তুতি চলছে নির্বাচন কমিশনে (ইসি)। চলতি সপ্তাহে এ নির্বাচন নিয়ে বৈঠকে বসছে কমিশন। বৈঠকে সিদ্ধান্ত হলে আনুষ্ঠানিকভাবে তফসিল ঘোষণা করবে সাংবিধানিক সংস্থাটি। চলতি সপ্তাহে তফসিল ঘোষণা হলে রোজার আগেই প্রথম ধাপের ভোট গ্রহণ হতে পারে। তবে কোনো কারণে রোজার আগে ভোট না করার সিদ্ধান্ত এলে এপ্রিলের মাঝামাঝি ধাপে ধাপে ভোট গ্রহণের চিন্তা রয়েছে। ভোটের দিন-তারিখ এখনো চূড়ান্ত করেনি কমিশন। কমিশন বৈঠকে এ বিষয়ে আনুষ্ঠানিক সিদ্ধান্ত হবে। ইসির কর্মকর্তারা বলছেন, মার্চের প্রথম দিকে এসএসসি পরীক্ষা শেষ হলেই আবারও শুরু হবে রমজান। তাই নির্বাচন কমিশন রমজান ও পরীক্ষার বিষয় বিবেচনায় নিয়ে ভোটের তারিখ নির্ধারণ করবে। এদিকে দলীয় প্রতীকের এ নির্বাচনে যে-কেউ চাইলেই স্বতন্ত্র প্রার্থী হতে পারবেন; এ ক্ষেত্রে প্রার্থীর সমর্থনে ১ ভাগ ভোটারের স্বাক্ষর সংগ্রহ করতে হবে। ২০১৯ সালের ৩ ফেব্রুয়ারি উপজেলা নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করেছিল ইসি। পাঁচ ধাপে হয়েছিল সে নির্বাচন। দেশের ৪৯৫ উপজেলার মধ্যে ৪৫২টির নির্বাচনের ক্ষণ গণনা শুরু হয়েছে। আগামী জুনের মধ্যেই এসব উপজেলায় নির্বাচন করতে হবে। বাকিগুলোর কিছু হবে চলতি বছরের দ্বিতীয়ার্ধে, আর কিছু ২০২৭ ও ২০২৮ সালে।

নির্বাচন কমিশন (ইসি) সূত্রগুলো বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। সম্প্রতি নির্বাচন সম্পন্ন করার লক্ষ্যে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়কে নির্বাচন উপযোগী উপজেলাগুলোর তথ্য জানাতে বলেছিল কমিশন। সে আলোকে মন্ত্রণালয়ের যুগ্মসচিব মোহাম্মদ সাইফুল ইসলাম মজুমদার একটি তালিকা ইসি সচিব মো. জাহাংগীর আলমকে পাঠিয়েছেন। তালিকায় উল্লেখ করা হয়েছে, ২০১৯ সালের ১৬ জুন পর্যন্ত ৪৫২ উপজেলার প্রথম সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। বাকি ৪৩টির মধ্যে বেশ কিছু উপজেলার প্রথম সভা অনুষ্ঠিত হয় ১৭ জুন থেকে ২০১৯ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত। অন্যগুলোর ২০২০, ২০২২ ও ২০২৩ সালে প্রথম সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। চট্টগ্রামের কর্ণফুলীর প্রথম সভা হয়েছিল ২০২২ সালের ১৮ ডিসেম্বর, চাঁদপুরের হাইমচরের প্রথম সভা হয়েছে ২০২০ সালের ১৯ ফেব্রুয়ারি, কুমিল্লার দাউদকান্দির প্রথম সভা হয়েছে ২০২০ সালের ৯ ডিসেম্বর, খাগড়াছড়ির গুইমারার প্রথম সভা হয়েছে ২০২২ সালের ১৬ আগস্ট, ময়মনসিংহের তারাকান্দায় প্রথম সভা হয়েছে ২০২৩ সালের ৮ নভেম্বর, সুনামগঞ্জের জগন্নাথপুরে ২০২২ সালের ৮ ডিসেম্বর ও সিলেটের ওসমানীনগরে ২০২২ সালের ৫ ডিসেস্বর। এ ছাড়া নারায়ণগঞ্জ সদর উপজেলায় সীমানা জটিলতায় মামলার কারণে ২০০৯ সালে নির্বাচন আটকে গেছে। সে সময় চতুর্থ উপজেলা নির্বাচন সম্ভব হয়নি। কক্সবাজারের ঈদগাঁও নবগঠিত হওয়ায় আগে নির্বাচন হয়নি। আইন অনুযায়ী, উপজেলা পরিষদের মেয়াদ হচ্ছে প্রথম সভা থেকে পরবর্তী পাঁচ বছর। আর নির্বাচন করতে হয় মেয়াদপূর্তির আগের ১৮০ দিনের মধ্যে। এ হিসেবে ৪৫২ উপজেলার নির্বাচনের সময় গণনা ইতোমধ্যে শুরু হয়ে গেছে। জানুয়ারিতে আরও কয়েকটি উপজেলার নির্বাচনের সময় গণনা শুরু হবে। এ ছাড়া কয়েকটির সময় গণনা শুরু হবে ফেব্রুয়ারি থেকে ডিসেম্বরের মধ্যে। কয়েকটির সময় গণনা শুরু হবে ২০২৭ ও ২০২৮ সালে। ইসি কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, ২০১৯ সালের পঞ্চম উপজেলা পরিষদ পাঁচ ধাপে অনুষ্ঠিত হয়েছিল। সে সময় ৪৮৮ উপজেলা পরিষদের তফসিল ঘোষণা করা হয়। এর মধ্যে ৪৫৫টির নির্বাচন যথাযথ সময়ে, পরে অন্যগুলোর নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। ওই বছর ১০ মার্চ প্রথম ধাপে ৭৮টি, ১৮ মার্চ দ্বিতীয় ধাপে ১১৬টি, ২৪ মার্চ তৃতীয় ধাপে ১১৭টি, ৩১ মার্চ চতুর্থ ধাপে ১০৭টি এবং ১৮ জুন পঞ্চম ধাপে ২০টি উপজেলায় ভোট গ্রহণ অনুষ্ঠিত হয়। বেশ কিছু নির্বাচন মামলার কারণে আটকেও ছিল। নির্বাচন নিয়ে ইসির অতিরিক্ত সচিব অশোক কুমার দেবনাথ জানিয়েছেন, গতবারের মতো এবারও কয়েক ধাপে উপজেলা নির্বাচন হবে। এ ক্ষেত্রে প্রথম ধাপের ভোট রোজার আগে (মার্চের প্রথমার্ধে) হবে। বাকিগুলোয় ভোট হবে ঈদের পর। সর্বশেষ নির্বাচনে ১৪ উপজেলায় ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন (ইভিএম) ও ট্যাব ব্যবহার করা হয়েছিল। জানা গেছে, ১৫ ফেব্রুয়ারি শুরু হচ্ছে এসএসসি পরীক্ষা; লিখিত পরীক্ষা শেষ হবে ১২ মার্চ। আর ১২-১৩ মার্চ রমজান শুরু হতে পারে। আর এইচএসসি পরীক্ষা হতে পারে জুনের দ্বিতীয় সপ্তাহে। তাই রমজান শেষে এইচএসসি পরীক্ষার আগের দুই মাসের মধ্যে উপজেলা নির্বাচন করতে হবে ইসিকে। ফলে ভোটের তারিখ নির্ধারণের ক্ষেত্রে ইসি এসব বিষয় আমলে নেবে বলে মনে করছেন কর্মকর্তারা।

 

সর্বশেষ খবর