রবিবার, ২১ জানুয়ারি, ২০২৪ ০০:০০ টা

ওষুধের দাম বাড়াতে চায় কোম্পানিগুলো

ভোক্তার ওপর চাপ না দেওয়ার পরামর্শ

শাহেদ আলী ইরশাদ

ডলার ও জ্বালানি সংকটের প্রভাব পড়েছে ওষুধ শিল্পে। কাঁচামালের দর আর উৎপাদন খরচ বেড়ে যাওয়ায় দেশের বাজারে ওষুধের দাম বাড়াতে চায় কোম্পানিগুলো। তবে দাম সহনীয় পর্যায়ে রাখতে ওষুধ প্রস্তুতকারকদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগবিষয়ক উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান। সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্রে জানা গেছে, সম্প্রতি প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ উপদেষ্টা সালমান এফ রহমানের সঙ্গে বৈঠক করেন ওষুধ কোম্পানির মালিকরা। বৈঠকে কোম্পানির মালিকরা জানান, দেশে যত ওষুধ উৎপাদন হয়, এর ৮০ থেকে ৮৫ শতাংশ কাঁচামালই আমদানি করতে হয়। এসব কাঁচামালের দামও পরিশোধ করতে হয় ডলারে। কখনো কখনো প্রতি ডলার ১৩০ টাকা দিয়েও মিলছে না।

এখন টাকার বিপরীতে ডলারের বিনিময় মূল্য বেড়ে যাওয়ায় কাঁচামাল আমদানিতে ব্যয় বেড়েছে ওষুধ প্রস্তুতকারক কোম্পানিগুলোর। এর মধ্যে নতুন করে শুরু হয়েছে গ্যাস সংকট। এ অবস্থায় ওষুধের দাম বৃদ্ধি করা ছাড়া কোনো বিকল্প নেই। কোম্পানির কর্মকর্তারা বলেছেন, দেশের জিডিপিতে ১ দশমিক ৮৩ শতাংশ অবদান রাখার পাশাপাশি দেশের ১৮ কোটি মানুষের ৯৮ শতাংশের জন্য ওষুধ সরবরাহ করছে দেশি কোম্পানিগুলো। ১৫০টির বেশি দেশে সহজলভ্য মূল্যে ওষুধ রপ্তানি করা হচ্ছে। দেশে সরবরাহ স্বাভাবিক এবং বিদেশে রপ্তানির ধারাবাহিকতা বজায় রাখতে টাকার বিপরীতে ডলারের বিনিময় হারের সঙ্গে সমন্বয় করে ওষুধের মূল্য পুনর্নির্ধারণ করার জন্য প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ উপদেষ্টার কাছে অনুরোধ করেছেন ওষুধ কোম্পানির মালিকরা। উপদেষ্টার সঙ্গে বৈঠক শেষে বাংলাদেশ ওষুধ শিল্প সমিতির সিনিয়র ভাইস-প্রেসিডেন্ট আবদুল মোকতাদির সাংবাদিকদের বলেন, আমরা ওষুধের জোগান দিয়ে যাচ্ছি, কিন্তু এরকম অবস্থায় আর বেশি দিন চলা সম্ভব নয়। আমরা পর্যায়ক্রমে (যে দাম মানুষের জন্য সহনশীল হয়) ওষুধের দাম সরকারের পরামর্শে নির্ধারণ করব। কিন্তু এটা করতে গিয়ে আমাদের অনেক অসুবিধা হচ্ছে। এই দামটা যাতে সহনশীল পর্যায়ে আসতে পারে, নিজেদের মধ্যে আলাপ করে সেটাই নির্ধারণ করার চেষ্টা করব। ওই বৈঠকে জ্বালানি সংকটের পরিস্থিতি সামাল দিতে উপদেষ্টার কাছে বিকল্প জ্বালানি ব্যবহারের পরিকল্পনাও তুলে ধরে ওষুধ শিল্প সমিতি।

এ সময় উপদেষ্টা ওষুধ শিল্পপার্কে জমি বরাদ্দ পাওয়া কোম্পানিগুলোকে দ্রুত উৎপাদন শুরু করার তাগিদ দেন। উপদেষ্টা ওষুধ শিল্প সমিতির নেতৃবৃন্দকে বলেন, ওষুধের দাম সহনীয় পর্যায়ে বাড়তে পারে। হঠাৎ করেই ওষুধে দাম বাড়ানো ঠিক হবে না। একই সঙ্গে স্বাস্থ্যমন্ত্রী ও প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠক করে ওষুধ শিল্পের সব সমস্যা দ্রুত সমাধানের উপদেষ্টা আশ্বাস দিয়েছেন বলে বৈঠক সূত্রে জানা গেছে। এ বিষয়ে বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব ফার্মাসিউটিক্যাল ইন্ডাস্ট্রিজের (বাপি) মহাসচিব এস এম শফিউজ্জামান গতকাল বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, মার্কিন ডলারের ঘাটতির কারণে উৎপাদন খরচ প্রায় ৩০ শতাংশ বেড়েছে।

ফার্মাসিউটিক্যাল কোম্পানিগুলো সেই অনুযায়ী ওষুধের দাম সমন্বয় করবে। কবে থেকে দাম বাড়বে এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, সময় হলে জানতে পারবেন। বাংলাদেশ ইনভেস্টমেন্ট ডেভেলপমেন্ট অথরিটির বাজার বিশ্লেষণ অনুযায়ী, বাংলাদেশিরা দেশের জিডিপির অন্তত ২ শতাংশ চিকিৎসায় ব্যয় করে। খাতসংশ্লিষ্টদের মতে, দেশে বাজার এখন প্রায় ৩৫ হাজার কোটি টাকায় পৌঁছেছে, যেখানে ২০১৯ সালে এর মূল্য ছিল প্রায় ২৫ হাজার কোটি টাকা। প্রায় ২৫০টি কোম্পানি দেশে ওষুধ প্রস্তুত করে।

সর্বশেষ খবর