সোমবার, ২২ জানুয়ারি, ২০২৪ ০০:০০ টা
তালিকা সাত দিনের মধ্যে, সারা দেশে হবে চিরুনি অভিযান

অবৈধ হাসপাতালের ছড়াছড়ি

জয়শ্রী ভাদুড়ী, ঢাকা ও রেজা মুজাম্মেল, চট্টগ্রাম

অবৈধ হাসপাতালের ছড়াছড়ি

সারা দেশে ব্যাঙের ছাতার মতো গজিয়ে উঠেছে হাসপাতাল, ক্লিনিক, ব্লাড ব্যাংক। লাইসেন্সবিহীন এসব অবৈধ হাসপাতালের বিরুদ্ধে অভিযানে নামতে দেশব্যাপী তালিকা করছে স্বাস্থ্য অধিদফতর। এর আগে কয়েক দফা অভিযান শুরু হলেও তা ঝিমিয়ে পড়েছে। নানামুখী তদবিরে মুখ থুবড়ে পড়ে অভিযান।

স্বাস্থ্য অধিদফতরের পরিচালক (হাসপাতাল ও ক্লিনিক) ডা. আবু হোসেন মো. মঈনুল আহসান বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘উচ্চ আদালতের নির্দেশনা অনুযায়ী সারা দেশের লাইসেন্সবিহীন হাসপাতাল ও ক্লিনিকের তালিকা তৈরি করা হচ্ছে। গত কয়েকদিনে নারায়ণগঞ্জ, যশোর, গোপালগঞ্জ, রংপুরসহ দেশের বেশ কিছু জায়গায় লাইসেন্সবিহীন হাসপাতাল ও ক্লিনিক সিলগালা করা হয়েছে।’

স্বাস্থ্য অধিদফতর সূত্রে জানা যায়, গত ১৫ জানুয়ারি সারা দেশের অনিবন্ধিত হাসপাতাল, ক্লিনিক, ডায়াগনস্টিক সেন্টার এবং ব্লাড ব্যাংকের তথ্য পাঠাতে বিভাগীয় স্বাস্থ্য পরিচালক ও সিভিল সার্জনদের নির্দেশ দিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদফতর। সাত কার্যদিবসের মধ্যে এ তথ্য পাঠাতে বলা হয়েছে। এর মধ্যে দেশের বিভিন্ন জায়গায় অভিযান চালিয়ে প্রায় ২০০ লাইসেন্সবিহীন ক্লিনিক বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে।

রাজধানীর বাড্ডার সাঁতারকুল এলাকার ইউনাইটেড মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভুল চিকিৎসায় শিশু আয়ানের মৃত্যুর ঘটনার অভিযোগের পর লাইসেন্সবিহীন হাসপাতাল নিয়ে আলোচনা শুরু হয়। স্বাস্থ্য অধিদফতর জানায় লাইসেন্স ছাড়াই কার্যক্রম চালিয়ে আসছিল এ হাসপাতাল। জানা যায়, বিভিন্ন সময় অবৈধ হাসপাতাল, ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারের বিরুদ্ধে অভিযানে নামে স্বাস্থ্য অধিদফতর। বেশ কিছু দিন এ অভিযান চললেও পরবর্তীতে তা ঝিমিয়ে পড়ে। ২০২০ সালে এমন অভিযানে নেমেছিল স্বাস্থ্য অধিদফতর। কিন্তু মালিকপক্ষের চাপে অভিযান আলোর মুখ দেখেনি। ফলে অবৈধ অনেক প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া যায়নি। ২০২২ সালের ২৫ মে আকস্মিক ঘোষণা দিয়ে অবৈধ স্বাস্থ্যসেবা প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে অভিযানে নামে স্বাস্থ্য অধিদফতর। সেই উদ্যোগকে সাধুবাদ জানিয়ে অভিযান অব্যাহত রাখার সুপারিশ করেছিলেন সাধারণ মানুষ থেকে বিশিষ্টজন। এমনকি এ কার্যক্রমকে স্বাগত জানিয়েছিল বাংলাদেশ বেসরকারি হাসপাতাল মালিক সমিতিও। ওই সময় বেশ কিছু প্রতিষ্ঠানকে জরিমানাসহ বন্ধ করে দেওয়া হয়। লাইসেন্স নবায়নের সময়ও বেঁধে দেওয়া হয় কিছু প্রতিষ্ঠানকে। তবে পরবর্তীতে সেই অভিযানের গতি কমে এলে আবারও সক্রিয় হয়ে ওঠে অবৈধ সেবা প্রতিষ্ঠানগুলো। গত বছর ডেঙ্গুর ব্যাপকতা বাড়ার সুযোগ নিয়ে আবার দৌরাত্ম্য বাড়লে অবৈধ সেবা প্রতিষ্ঠানগুলোর বিরুদ্ধে আবারও অভিযানে নামে স্বাস্থ্য অধিদফতর। কিন্তু সেটিও ঝিমিয়ে পড়ে।

স্বাস্থ্য অধিদফতরের নির্দেশনায় চট্টগ্রামেও শুরু হয়েছে লাইসেন্সবিহীন ও মেয়াদোত্তীর্ণ বেসরকারি হাসপাতাল-ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারের বিরুদ্ধে অভিযান। অভিযানে নামলেই মিলছে অবৈধ ও লাইসেন্সবিহীন হাসপাতাল-ল্যাব। গত বুধবার থেকে অভিযানে চট্টগ্রাম নগরে ৬টি হাসপাতাল ও থেরাপি সেন্টার বন্ধের নির্দেশ দেওয়া হয়। তবে অভিযোগ পাওয়া গেছে, অভিযান পরিচালনা করতে গেলেই প্রভাবশালী, ক্ষমতাসীন ও রাঘববোয়ালদের তদবির আসে। ফলে নানাভাবে নেতিবাচক প্রভাব পড়ে অভিযানে। বিষয়টি চট্টগ্রামে আলোচনায় থাকলেও এ নিয়ে কেউ মুখ খুলেন না। নেপথ্য থেকে ভূমিকা পালন করে অবৈধ হাসপাতাল-ল্যাবের পক্ষে অবস্থান নেন। জানা যায়, গত বুধবার থেকে পরিচালিত অভিযানে চট্টগ্রাম বিভাগের ১১টি জেলায় লাইসেন্সবিহীন ও মেয়াদোত্তীর্ণ শতাধিক হাসপাতাল-ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টার বন্ধ করে দেওয়া হয়। চট্টগ্রামের সিভিল সার্জন ডা. মোহাম্মদ ইলিয়াস চৌধুরী বলেন, স্বাস্থ্য অধিদফতরের নির্দেশনায় চট্টগ্রাম নগরে পরিচালিত অভিযানে ৬টি হাসপাতাল-ল্যাব ও থেরাপি সেন্টার বন্ধ করা হয়। জনস্বার্থে অভিযান অব্যাহত থাকবে। একই সঙ্গে অবৈধ হাসপাতাল-ক্লিনিক ও রোগ নির্ণয় কেন্দ্রের তালিকাও তৈরি করা হচ্ছে।

জনস্বাস্থ্য রক্ষা আন্দোলন চট্টগ্রামের সদস্য সচিব ডা. সুশান্ত বড়ুয়া বলেন, অবৈধ হাসপাতাল ও রোগ নির্ণয় কেন্দ্রগুলোর তালিকা তৈরি করে তা জনসম্মুখে প্রকাশ করা হোক। তাতে করে অবৈধভাবে স্বাস্থ্যসেবা প্রদানকারী প্রতিষ্ঠান বিষয়ে মানুষ সচেতন থাকবে। জানা যায়, বর্তমানে চট্টগ্রাম নগর ও জেলায় ছোট-বড় মিলে বেসরকারি   হাসপাতাল, ক্লিনিক, ডায়াগনস্টিক সেন্টার আছে ৫৮০টি। চট্টগ্রাম নগরে নিবন্ধিত হাসপাতাল-ল্যাব আছে ২৯০টি। এর মধ্যে হাসপাতাল-ক্লিনিক আছে ৯৮টি এবং রোগ নির্ণয় কেন্দ্র আছে ১৯২টি। প্রাইভেট হাসপাতাল মালিক সমিতির অন্তর্ভুক্ত হাসপাতাল-ল্যাবের সংখ্যা ৫০টি।

সর্বশেষ খবর