সোমবার, ২২ জানুয়ারি, ২০২৪ ০০:০০ টা
দ্রব্যমূল্য নিয়ে পাঁচ মন্ত্রীর বৈঠক

বাজার সামলাতে চার তরিকা

বিশ্ববাজারে দাম বেশি এমন পণ্যের শুল্ক কমানোর সুপারিশ ♦ ভোগ্যপণ্য আমদানিতে ব্যবসায়ীদের প্রয়োজনীয় ডলার সহায়তা ♦ ডলার সংকট হলে বিকল্প মুদ্রায় আমদানি ♦ অবৈধ মজুতদারি কঠোরভাবে দমন

রুকনুজ্জামান অঞ্জন

আসন্ন রমজানে নিত্যপণ্যের বাজার সামাল দিতে চারটি বিষয়ে গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। এক. আন্তর্জাতিক বাজারে যেসব পণ্যের দাম বেশি সেগুলোর শুল্ক কমানোর সুপারিশ করা হবে; দুই. ভোগ্যপণ্য আমদানিতে ব্যবসায়ীদের প্রয়োজনীয় ডলার সহায়তা দেওয়া হবে; তিন. ডলারের সংকট হলে বিকল্প মুদ্রায় পণ্য আমদানির উদ্যোগ নেওয়া হবে; এবং চার. দেশে উৎপাদিত পণ্যের সরবরাহ বাড়িয়ে দাম সহনীয় রাখার পাশাপাশি মজুতদারি করে কোনো পণ্যের দাম বৃদ্ধি বা বাজার অস্থিতিশীল করার উদ্যোগ নেওয়া হলে তা কঠোরভাবে দমন করা হবে। রমজানে দ্রবমূল্য সহনীয় রাখার পাশাপাশি পণ্যের সরবরাহ স্বাভাবিক রাখতে পাঁচ মন্ত্রীর বৈঠকে এসব বিষয়ে গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে বলে বৈঠক সূত্রে জানা গেছে। গতকাল বিকালে অর্থ মন্ত্রণালয়ে অনুষ্ঠিত এ বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন অর্থমন্ত্রী আবুল হাসান মহামুদ আলীর সভাপতিত্বে অংশ নেন কৃষিমন্ত্রী ড. মো. আবদুস শহীদ, খাদ্যমন্ত্রী সাধন চন্দ্র মজুমদার, মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রী মো. আবদুর রহমান এবং বাণিজ্য প্রতিমন্ত্রী আহসানুল ইসলাম। এ ছাড়াও বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আবদুর রউফ তালুকদার, বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব তপন কান্তি ঘোষসহ সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের সচিব ও এনবিআর প্রতিনিধি উপস্থিত ছিলেন। বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন এমন এক কর্মকর্তা জানান, আন্তর্জাতিক বাজারে এ মুহূর্তে চিনিসহ যেসব পণ্যের দাম বেশি রয়েছে- সেগুলোর আমদানি শুল্ক নিয়ে আলোচনা হয়েছে। প্রয়োজনে এসব পণ্যের শুল্ক কমিয়ে দাম সহনীয় রাখার উদ্যোগ নেওয়া হবে। এ ছাড়া ভারত ও চীন থেকে ডলার ছাড়াই দেশ দুটির নিজ নিজ মুদ্রায় পণ্য আমদানির সুযোগ রয়েছে সরকারের হাতে। এসব বিকল্প মুদ্রা ব্যবহার করে পণ্য আমদানির মাধ্যমে সরবরাহ বাড়ানোর উদ্যোগ নেওয়া হতে পারে। ভোগ্যপণ্য আমদানিতে ব্যবসায়ীরা যাতে কোনো সমস্যায় না পড়েন, সে বিষয়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংক মনিটরিং কার্যক্রম বাড়াবে। আট নিত্যপণ্য আমদানিতে এরই মধ্যে মার্জিন প্রত্যাহারের ঘোষণা দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। প্রয়োজনে বেসরকারি ব্যাংকগুলোকে আরও নির্দেশনা দেওয়া হবে। সভাশেষে অর্থমন্ত্রী বলেন, রমজানে যেসব পণ্যের চাহিদা বাড়ে, সেসব পণ্যের পর্যাপ্ত মজুত রয়েছে। চিন্তার কোনো কারণ নেই। এরপরও কিছু মজুতদার চেষ্টা করে কীভাবে বাজার অস্থিতিশীল করা যায়। বাজার অর্থনীতিতে এ ধরনের কর্মকান্ড ঘটবেই। কেউ কেউ সুযোগ নেওয়ার চেষ্টা করবে। সরকার এ বিষয়ে যথেষ্ট সতর্ক রয়েছে। যেভাবে দ্রব্যমূল্য সহনীয় রাখা যায়, ঠিক সে কাজগুলোই সরকার করছে। তবে এরপরও দরকার হলে আমরা অনেক কঠোর পদক্ষেপের দিকে চলে যাব। পণ্যের এলসি খুলতে ব্যবসায়ীরা যে ডলার সংকটে পড়েছেন সে বিষয়ে সরকারের উদ্যোগ সম্পর্কে জানতে চাইলে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নরকে উত্তর দিতে বলেন অর্থমন্ত্রী। এ সময় গভর্নর ডলার সংকটের বিষয়টি অস্বীকার করে জানান, নিত্যপণ্য আমদানিতে তাঁর কাছে যে তথ্য আছে তাতে গত বছরের একই সময়ের তুলনায় ১০ থেকে ১৫ শতাংশ বেশি এলসি খোলা হয়েছে। ব্যবসায়ীরা যদি ডলার না পেত তবে এত বেশি এলসি কীভাবে খোলা হতো- উল্টো প্রশ্ন রাখেন গভর্নর। পণ্যের সরবরাহ বাড়াতে সরকার আমদানি বাড়াবে কি না এমন প্রশ্নের জবাবে অর্থমন্ত্রী বলেন, সরকার আমদানি করছে। প্রয়োজনে আরও আমদানি করবে। পণ্য আমদানি বাড়ালে ডলার সংকট বাড়বে কি না এমন প্রশ্নের উত্তরে অর্থমন্ত্রী জানান, সরকার শুধু রিজার্ভে ডলারই রাখে না, অন্য দেশের মুদ্রাও রাখে। প্রয়োজনে সেসব মুদ্রা দিয়ে আমদানি করা হবে।

সর্বশেষ খবর