সোমবার, ২২ জানুয়ারি, ২০২৪ ০০:০০ টা

বিরোধ মেটাতে সাংগঠনিক সফরে আওয়ামী লীগ

রফিকুল ইসলাম রনি

দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের বিজয়ের পর প্রথম কার্যনির্বাহী সংসদের জরুরি বৈঠক বসছে আজ। এ বৈঠক থেকে সংসদ নির্বাচনের পর নৌকার প্রার্থী বনাম স্বতন্ত্র প্রার্থীর কর্মী-সমর্থকদের কোন্দল নিরসনে সারা দেশে সাংগঠনিক সফরসহ নানা কর্মসূচি আসতে পারে। এই সফরের আগে কেন্দ্রীয়ভাবে একটি বিশেষ বর্ধিত সভা ডাকার সিদ্ধান্ত আসতে পারে। বর্ধিত সভায় সারা দেশের নৌকার প্রার্থী, স্বতন্ত্র প্রার্থী, জেলা-উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি-সাধারণ সম্পাদক ডাক পেতে পারেন। দলের কার্যনির্বাহী সংসদের একাধিক নেতা এমন আভাস দিয়েছেন। দলীয় সূত্রমতে, দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দলীয় ও স্বতন্ত্র প্রার্থিতায় যে অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্ব ও বিভেদের সৃষ্টি তা দ্রুত নিরসন করতে চায় আওয়ামী লীগ। এ সমস্যা সমাধানে বেশ কিছু উদ্যোগ নিতে যাচ্ছে দলটি। তৃণমূলকে ঐক্যবদ্ধ এবং আরও শক্তিশালী করতে জেলা-উপজেলা পর্যায়ে বর্ধিত সভা করা হবে। সমস্যাসঙ্কুল জেলাগুলোতে সফর করবেন দলের কেন্দ্রীয় নেতাদের সমন্বয়ে গঠিত বিভাগীয় সাংগঠনিক টিমের দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতারা। সবার সঙ্গে আলোচনা করে দ্রুত সমস্যা নিরসনে দিকনির্দেশনা দেবেন তারা। ঐক্যবদ্ধ হয়ে না চললে বা বিভেদ জিইয়ে রাখলে দায়ীদের বিরুদ্ধে কঠোর সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হতে পারে।

এ প্রসঙ্গে আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য ডা. মোস্তফা জালাল মহিউদ্দিন বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘সংসদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে দলের ভিতরে বিভিন্ন জেলা-উপজেলায় কোন্দল প্রকাশ্যে চলে এসেছে। অনেক জায়গায় নিজ দলের নেতা-কর্মীদের মধ্যেই মুখ দেখাদেখি বন্ধের উপক্রম। এসব কোন্দল নিরসন করতে হবে। এ জন্য দলীয় সভানেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আমাদের একটা গাইড লাইন দেবেন। সে অনুযায়ী আমরা জেলা-উপজেলায় সফর করব। আশা করি অভ্যন্তরীণ কোন্দলগুলো নিরসনে আবার দলকে ঐক্যবদ্ধ করে বিএনপি-জামায়াতের দেশবিরোধী ষড়যন্ত্র চক্রান্ত মোকাবিলা করতে সক্ষম হব।’

প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ নির্বাচনের স্বার্থে এবার দলীয় প্রার্থীদের পাশাপাশি স্বতন্ত্র প্রার্থীদেরও মাঠে রেখেছিল আওয়ামী লীগ। এতে দলীয় ও স্বতন্ত্র প্রার্থীদের পক্ষে-বিপক্ষে অনেক জায়গায় বিভক্ত হয়ে পড়ে আওয়ামী লীগের তৃণমূল। শুরু হয় নিজেদের মধ্যে দ্বন্দ্ব-সংঘাত, যা ভোটের পরেও অব্যাহত রয়েছে। দেশের বিভিন্ন স্থানে এখনো ঘটছে অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্ব-সংঘর্ষের ঘটনা। আজকের বৈঠকে এসব সমাধানের পথ খোঁজা হতে পারে। এ প্রসঙ্গে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে নৌকার প্রার্থী বনাম স্বতন্ত্র প্রার্থী নিয়ে একটা সংকট সৃষ্টি হয়েছে। সেগুলো নিরসন করা নিয়ে কথাবার্তা হবে। জেলা সফর শুরু করার আগে একটা বিশেষ বর্ধিত সভা ডাকা যায় কি না সেসব নিয়ে আলোচনা হবে।’

দলীয় সূত্র জানায়, আজকের জরুরি সভায় নির্বাচনকে ঘিরে দেশের বিভিন্ন স্থানে দলীয় ও স্বতন্ত্র প্রার্থীদের সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষের বিষয়টি উঠে আসতে পারে। দলীয় সভানেত্রী শেখ হাসিনাসহ অনেক কেন্দ্রীয় নেতাই নির্বাচনকে ঘিরে সারা দেশে যে সাংগঠনিক ক্ষত তৈরি হয়েছে তা দ্রুত নিরসন করে দলকে আরও ঐক্যবদ্ধ, সুশৃঙ্খল ও শক্তিশালী করার তাগিদ দেবেন। এতদিন কোনো হস্তক্ষেপ করা না হলেও এখন থেকে দলের মধ্যে বিভেদ সৃষ্টিকারীদের বিরুদ্ধে আওয়ামী লীগ কঠোর অ্যাকশনে যাবে, এমন কড়া বার্তা দ্রুত তৃণমূল নেতাদের মধ্যে পাঠানোরও পরামর্শ দেওয়া হবে। আগামী ২৫ তারিখ ঢাকায় বিশেষ বর্ধিত সভা ডাকা হতে পারে। জানুয়ারির শেষে অথবা ফেব্রুয়ারির শুরুতে সাংগঠনিক সফরে যাবেন কেন্দ্রীয় নেতারা। জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মির্জা আজম বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, নির্বাচন পরবর্তী আমরা জেলা-উপজেলা সফর করতে যাচ্ছি। সেই সফর শুরু করার আগে একটি বিশেষ বর্ধিত সভা ডাকার কথা ভাবছি। আমরা দলের সাধারণ সম্পাদক ও সভানেত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ করেছি। সোমবারের জরুরি সভায় সিদ্ধান্ত আসতে পারে।

সর্বশেষ খবর