মঙ্গলবার, ২৩ জানুয়ারি, ২০২৪ ০০:০০ টা

ধরা পড়লেও শাহজালালে থামছে না চক্র

নিজস্ব প্রতিবেদক

বিমানের সিট-টয়লেট, বিমানবন্দরের ডাস্টবিন, যাত্রীর পকেট-শরীর এমন কোনো জায়গা নেই যেখান থেকে স্বর্ণের চোরাচালান আটক করছে না আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। কিছুদিন পরপর ঢাকার হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে ধরা পড়ছে সোনার চালান। গত ২০ ডিসেম্বর ঢাকার হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে এক নারী যাত্রীর ব্যাগ থেকে সোনার ৬৯টি বার ও একটি চেইন স্বর্ণালংকার জব্দ করেন শুল্ক গোয়েন্দারা। তারা জানান, জব্দ করা সোনার বাজারমূল্য আনুমানিক ৬ কোটি ৫৭ লাখ ৩৬ হাজার টাকা। ওই যাত্রীর নাম রেখা পারভীন। তিনি দুবাই থেকে ইমেরিটাস এয়ারলাইনসের একটি ফ্লাইটে ঢাকায় আসেন। এর আগে গত ৮ ডিসেম্বর শাহজালালে ৪ কোটি ৪১ লাখ টাকা মূল্যের ৪৯টি সোনার বারসহ এক যাত্রীকে আটক করে শুল্ক গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদফতর। ওই যাত্রীর নাম ফজলে রাব্বী। তিনি দুবাই থেকে ঢাকায় এসেছিলেন।    

শুল্ক গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদফতরের তথ্যানুযায়ী, ২০১৩ থেকে ২০২২ সাল পর্যন্ত সারা দেশে অভিযান চালিয়ে ২ হাজার ৫৮৩ কেজি সোনা জব্দ করা হয়েছে। এসব অভিযানে অংশ নেয় শুল্ক গোয়েন্দা, কাস্টম হাউস, বিজিবি ও এয়ারপোর্ট এপিবিএন। গত বছরের ১২ জুন শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের ডাস্টবিন থেকে সাত কেজি সোনা জব্দ করা হয়। এ সময় আটক করা হয় একজন পরিচ্ছন্নতাকর্মীকে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী সূত্র জানায়, দক্ষিণ এশিয়া ও মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলো থেকে আসা বারগুলো প্রধানত হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর ও চট্টগ্রামের শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর দিয়ে দেশে প্রবেশ করে। যেসব বাংলাদেশি স্বর্ণ বহন করেন দুবাই থেকেই তাদের ও তাদের একজন স্বজনের ফোন নম্বর, পাসপোর্টের কপি, বর্তমান ও স্থায়ী ঠিকানা, এনআইডির ফটোকপি রেখে দেওয়া হয়। প্রবাসীরা প্লেন থেকে নামার পর প্রথমে যান কাস্টম কর্তৃপক্ষের কাউন্টারে। সেখানে গিয়ে বারের ট্যাক্স দিয়ে রসিদ নেন। বার বৈধ করার সঙ্গে সঙ্গেই বাংলাদেশি ডিলারের প্রতিনিধি বিমানবন্দরের আশপাশের এলাকা থেকে রশিদসহ স্বর্ণ বুঝে নেন। অবৈধভাবে কতটুকু সোনা দেশে আসে এ বিষয়ে কোনো হিসাব নেই বিমানবন্দরে কর্মরত কোনো সংস্থার কাছে। শুল্ক গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদফতরের মতে, বিদেশ থেকে স্বর্ণ দেশে আসার পর মূলত দুটি জায়গায় যায়। প্রথমত, বাংলাদেশের সোনা ব্যবসায়ীরা এটা কিনে নেন। দ্বিতীয়ত, ভারতে পাচার করা হয়। বিশ্বে স্বর্ণের দ্বিতীয় বৃহত্তম ভোক্তা দেশ ভারত। সূত্র জানায়, ২০১৩ সালের ২৪ জুলাই বাংলাদেশের ইতিহাসে সবচেয়ে বড় সোনা চোরাচালান আটক করেছিল শুল্ক গোয়েন্দারা। এদিন বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসের একটি ফ্লাইটের কার্গো হোল্ড থেকে ১২৪ কেজি সোনা জব্দ করা হয়। এ ঘটনায় বিমানবন্দর থানায় মামলা হয়। তদন্ত শেষে ওই বছর বিমানের ১০ কর্মীসহ ১৮ জনের বিরুদ্ধে চার্জশিট দেয় ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)। গত ১০ বছরেও এ মামলার বিচার কার্যক্রম শেষ হয়নি। আসামিরাও বর্তমানে জামিনে রয়েছেন। ২০১৪ সালেও বিমানের এক ফ্লাইটের টয়লেটে লুকিয়ে রাখা ১০৬ কেজি সোনা জব্দ করা হয়। এটা ছিল জব্দ হওয়া দ্বিতীয় বৃহত্তম সোনার চালান। এ ঘটনার তিন বছর পর আদালতে চার্জশিট জমা দেয় ডিবি। তবে এখনো শাস্তি হয়নি কারও। শুধু এই দুটি নয়, নিম্ন আদালত সূত্রে জানা যায়, ২০১৯ সাল থেকে ২০২১ সাল পর্যন্ত ঢাকায় সোনা জব্দের ঘটনায় হওয়া ১৮৭টি মামলা এখন আদালতে বিচারাধীন বলে জানা গেছে।

 

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর