মঙ্গলবার, ২৩ জানুয়ারি, ২০২৪ ০০:০০ টা

পণ্যমূল্য বৃদ্ধির কারসাজি করলে শাস্তি : প্রধানমন্ত্রী

নিজস্ব প্রতিবেদক

পণ্যমূল্য বৃদ্ধির কারসাজি করলে শাস্তি : প্রধানমন্ত্রী

আওয়ামী লীগ সভানেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পণ্যের দাম বাড়ানোর কারসাজির বিরুদ্ধে কড়া হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে বলেছেন, কারসাজি করে অস্বাভাবিক ও দুরভিসন্ধিমূলক মজুত করে যারা দ্রব্যমূল্য বাড়ায় তাদের খুঁজে বের করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে অভিযান চালিয়ে তাদের তাৎক্ষণিক শাস্তি দেওয়া হবে। প্রয়োজনে জেলে দেওয়া হবে। মজুতদারি-কালোবাজারি কেউ যাতে কোনো খেলা খেলতে না পারে সেজন্য দেশবাসীকেও সজাগ থাকতে হবে। কেউ অস্বাভাবিক মজুতদারির খবর পেলে খবর দিন, আমরা ব্যবস্থা নেব। এখানেই আগে আঘাত হানতে হবে। মানুষের ভাগ্য নিয়ে আর কাউকে ছিনিমিনি খেলতে দেব না। প্রধানমন্ত্রী গত রাতে তাঁর সরকারি বাসভবন গণভবনে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের জরুরি বৈঠকে এমন হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেন। দেশে আর কোনো দিন অস্বাভাবিক পরিস্থিতির সৃষ্টি হবে না জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমাদের দেশে একটা শ্রেণি আছে যাদের কোনো কিছুই ভালো লাগে না। দেশে অস্বাভাবিক পরিস্থিতি সৃষ্টি হলে তাদের ভালো লাগে। ইনশা আল্লাহ দেশে আর কখনো অস্বাভাবিক পরিস্থিতি সৃষ্টি হবে না। গণতান্ত্রিক ধারাবাহিকতা অব্যাহত রেখেই আমাদের দেশকে আরও উন্নত-সমৃদ্ধ করে গড়ে তুলব।

 

বিএনপি-জামায়াত জোটের সমালোচনা করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, নির্বাচন বানচালে ব্যর্থ হয়ে তারা (বিএনপি) এখন অন্য পথে হাঁটছে। অন্যভাবে নামতে চাইছে। কিন্তু দেশের মানুষের ভাগ্য নিয়ে আর কাউকে ছিনিমিনি খেলতে দেব না। উন্নয়নের পথে কেউ বাধা দিলে তার উপযুক্ত জবাব দেওয়ার ব্যবস্থা করা হবে। সেটা রাজনৈতিক কিংবা প্র্রশাসনিক যেভাবেই হোক দেওয়া হবে। অপশক্তিকে রাজনৈতিকভাবে মোকাবিলা করতে হবে। আমাদের উন্নয়নের ধারাটা অব্যাহত রাখতে হবে। আর গণতন্ত্র ব্যতিরেকে দেশের উন্নয়ন হয় না। ’৭৫-পরবর্তী দীর্ঘ ২১ বছর যারা ক্ষমতায় ছিল তারা দেশকে এক কদম এগিয়ে নিয়ে যেতে পারেনি।

৭ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে টানা চতুর্থবারের মতো বিপুল সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে সরকার গঠনের পর এটাই ছিল আওয়ামী লীগের সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারক ফোরামের প্রথম বৈঠক। বৈঠকে দলের কেন্দ্রীয় নেতাদের দেশব্যাপী সাংগঠনিক সফর, আসন্ন উপজেলা নির্বাচনে অংশগ্রহণের কৌশল, দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন ঘিরে বিভিন্ন স্থানে দলের মধ্যে দ্বন্দ্ব-বিবাদ দ্রুত নিরসনসহ বিভিন্ন ইস্যুতে গুরুত্বপূর্ণ আলোচনা ও সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়। বৈঠকের শুরুতে শোক প্রস্তাব উত্থাপন করেন দলের কেন্দ্রীয় দফতর সম্পাদক ব্যারিস্টার বিপ্লব বড়ুয়া। পরে রুদ্ধদ্বার বৈঠকে সূচনা বক্তব্য দেন দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের।

সূচনা বক্তব্য দিতে গিয়ে এবারের নির্বাচন নতুন ইতিহাস সৃষ্টি করেছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, নির্বাচন বানচালের চেষ্টা হলেও জনগণ স্বতঃস্ফূর্তভাবে ভোটাধিকার প্রয়োগ করেছে। নির্বাচনে যাবে কি যাবে না, এটা দলগুলোর নিজস্ব সিদ্ধান্তের ব্যাপার। নির্বাচন বানচালে ব্যর্থ হয়ে এখন এবারের নির্বাচন নিয়ে কেউ কেউ ধূম্রজাল তৈরির চেষ্টা করছে। কিন্তু দেশের মানুষ এ নির্বাচন গ্রহণ করেছে। মানুষ যেটা গ্রহণ করেছে, এটা নিয়ে অন্যদের কী বলার আছে! ২০০৮ সালের নির্বাচনেই প্রমাণ হয়েছে দেশে শক্তিশালী দল মানেই একমাত্র আওয়ামী লীগ। ওই নির্বাচনে আওয়ামী লীগ এককভাবে ২৩৩ আসনে বিজয়ী হয়েছিল। বিএনপি-জামায়াতসহ ২০-দলীয় জোট পেয়েছিল মাত্র ৩০টি আসন। ওই নির্বাচন নিয়ে কেউ কোনো কথা বলতে পারেনি।

নির্বাচনের পর হঠাৎ দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির পেছনে কারসাজি আছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এই ভরা মৌসুমে চালের দাম কমার কথা, কিন্তু কেন বাড়ল সেটাই প্রশ্ন। কেউ যদি অবৈধভাবে মজুত করে থাকে, তাকে সাজা পেতে হবে। দুরভিসন্ধিমূলক কেউ যদি অস্বাভাবিক মজুতদারি করে দাম বাড়ানোর সঙ্গে জড়িত থাকে তাদের খুঁজে বের করে তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে। প্রয়োজনে মোবাইল কোর্টের মাধ্যমে অভিযান চালিয়ে শাস্তির ব্যবস্থা করে জেলে ভরা হবে। এ জায়গাটাতেই প্রথম আঘাত করতে হবে।

 

টানা চতুর্থবারের প্রধানমন্ত্রী আগামীতে উন্নত-সমৃদ্ধ স্মার্ট সোনার বাংলা বিনির্মাণের কথা উল্লেখ করে বলেন, ২০২১ সালের রূপরেখায় আমরা বলেছিলাম ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ে তুলব। আমরা ডিজিটাল বাংলাদেশ করেছি। এখন আমাদের স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ার কাজ এগিয়ে নিতে হবে। আমরা উন্নয়নশীল দেশের মর্যাদা অর্জন করেছি। এটাকে ধরে রেখেই আমাদের এগিয়ে যেতে হবে। উন্নয়ন টেকসই করতে হবে, যেন দেশের মানুষ তার শুভফল পায়।

আসন্ন উপজেলা নির্বাচন প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এ নির্বাচন আমরা কীভাবে করব সে ব্যাপারে আলোচনা হবে। এবারে আমরা আইন কমিশন গঠন করে জাতীয় নির্বাচন করেছি। বর্তমান নির্বাচন কমিশন অতীতের যে কোনো সময়ের তুলনায় অনেক শক্তিশালী। নির্বাচনের পরও আমাদের এক মন্ত্রীকে ডেকে নিয়ে জবাবদিহি করেছে নির্বাচন কমিশন। বিএনপি আমলে ইসির কেউ এমন করার কোনো সাহসও দেখাতে পারত না।

উন্নয়নের ধারাবাহিকতা অব্যাহত রাখার প্রয়োজনীয়তার কথা উল্লেখ করে আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, উন্নয়নের ধারাটা আমাদের অব্যাহত রাখতে হবে। গণতান্ত্রিক ধারাবাহিকতা না থাকলে দেশের কোনো উন্নয়ন হয় না, আমরা তা প্রমাণ করেছি। ’৭৫-পরবর্তী দীর্ঘ ২১ বছর যারা ক্ষমতায় ছিল তারা দেশকে এক কদমও এগিয়ে নিয়ে যেতে পারেনি। আগে মানুষের খাদ্যের জন্য হাহাকার ছিল। সামান্য নুন-ভাত জোটাতেই হিমশিম খেত। এখন মানুষের খাদ্যনিরাপত্তা আমরা নিশ্চিত করেছি। এখন নুন-ভাত নয়, দেশের মানুষ মাছ-মাংস-ডিমের কথা বলে। মরিচ পোড়া ভাত দেশের মানুষকে খেতে হয় না।

ক্ষুধা-দারিদ্র্যমুক্ত, উন্নত-সমৃদ্ধ বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলা গড়ে তোলার প্রত্যয় ব্যক্ত করে তাঁর কন্যা শেখ হাসিনা বলেন, উন্নয়নশীল দেশের মর্যাদা ধরে রেখেই আমরা বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের ক্ষুধা-দারিদ্র্যমুক্ত উন্নত-সমৃদ্ধ দেশ গড়ে তুলব। আধুনিক স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ে তুলব, সেভাবেই আমরা দেশকে আরও এগিয়ে নিয়ে যাব।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, জনগণের ভোটে বিজয়ী হয়ে সরকার গঠন করতে পেরেছি। এবারের নির্বাচনের মাধ্যমে জনগণের ভোটের অধিকার প্রতিষ্ঠা করেছি। এবারের নির্বাচন নতুন ইতিহাস সৃষ্টি করেছে। জনগণের মতের প্রতিফলন ঘটেছে। এখন আর্থসামাজিক উন্নয়নে রাজনৈতিক স্থিতিশীলিতা দরকার। ভোট হতে দেবে না, ভোটার যেতে দেবে না- এমন হুমকির পরও জনগণ স্বতঃস্ফূর্তভাবে ভোটাধিকার প্রয়োগ করেছে।

তিনি বলেন, বিএনপির শাসনামলে তাদের অত্যাচারে অতিষ্ঠ ছিল দেশের মানুষ। তাই ২০০৮ সালের নির্বাচনে তারা পেয়েছে মাত্র ৩০ আসন। এর পর থেকে তারা দেশজুড়ে সহিংসতা, অগ্নিসন্ত্রাস চালায়। নির্বাচন করবে না সেটা তাদের ব্যাপার। কিন্তু এ দেশের মানুষ নির্বাচন গ্রহণ করেছে। অথচ কিছু আঁতেল ভোট নিয়ে ধূম্রজাল তৈরির চেষ্টা করছে। এ নির্বাচনের আগেও তারা অগ্নিসন্ত্রাস করেছে, ট্রেনে আগুন দিয়ে মা-শিশুকে পুড়িয়ে মেরেছে, পুলিশকে পিটিয়ে হত্যা করেছে, প্রধান বিচারপতির বাসভবনে হামলা করেছে। এর আগেও বিএনপি প্রধান বিচারপতির বাসভবনে লাথি মেরেছিল। এসবই তাদের চরিত্র।

 

সর্বশেষ খবর