বুধবার, ২৪ জানুয়ারি, ২০২৪ ০০:০০ টা

ফ্রান্স সৌদি জাপানের শুভেচ্ছা প্রধানমন্ত্রীকে

সহযোগিতা বৃদ্ধির প্রত্যাশা

নিজস্ব প্রতিবেদক

ফ্রান্স সৌদি জাপানের শুভেচ্ছা প্রধানমন্ত্রীকে

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে গতকাল সাক্ষাৎ করেন ফ্রান্সের রাষ্ট্রদূত মিসেস মারি মাসদুপুই। এ সময় তিনি ফ্রান্স প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁর অভিনন্দনপত্র পড়ে শোনান এবং হস্তান্তর করেন -পিআইডি

টানা চতুর্থবার এবং পঞ্চমবারের মতো প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হওয়ায় শেখ হাসিনাকে শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন জানিয়েছে ফ্রান্স, জাপান ও সৌদি আরব। ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁ, জাপানের প্রধানমন্ত্রী ফুমিও কিশিদা এবং সৌদি যুবরাজ মুহাম্মদ বিন সালমান পৃথকভাবে প্রধানমন্ত্রীকে অভিনন্দন বার্তা পাঠিয়েছেন। গতকাল প্রধানমন্ত্রীর প্রেস উইং থেকে এসব তথ্য জানানো হয়। ফ্রান্সের রাষ্ট্রদূত মিসেস মারি মাসদুপুই গতকাল সকালে গণভবনে উপস্থিত হয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁর অভিনন্দনপত্র পড়ে শোনান এবং তা প্রধানমন্ত্রীর হাতে তুলে দেন। ২০২১ সালে প্রধানমন্ত্রীর ফ্রান্স সফর এবং ২০২৩ সালে ফরাসি প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁর বাংলাদেশ সফরের কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, ফ্রান্স ও বাংলাদেশের মধ্যে চমৎকার দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক রয়েছে। এই সফরগুলো দেশ দুটির মধ্যে সম্পর্ককে আরও জোরদার করেছে।

জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলায় বাংলাদেশ একটি উদাহরণ জানিয়ে ফ্রান্সের রাষ্ট্রদূত বলেন, তার দেশ বাংলাদেশকে ‘লস অ্যান্ড ড্যামেজ ফান্ড’ পেতে সহায়তা করবে এবং তারা বাংলাদেশকে এই তহবিল ব্যবহারে অগ্রণী হিসেবে দেখতে চায়। ফ্রান্স বাংলাদেশকে সবুজ জ্বালানি উত্তরণে সহায়তা করতে চায়। রাষ্ট্রদূত আরও বলেন, তার দেশ ব্লু ইকোনমি এবং সাইবার নিরাপত্তা ইস্যুতে বাংলাদেশকে সহযোগিতা করতে চায়। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বাংলাদেশের টেকসই উন্নয়ন নিশ্চিত করতে ফ্রান্সসহ উন্নয়ন অংশীদারদের সহযোগিতা কামনা করে বলেন, বাংলাদেশের উন্নয়নকে টেকসই করতে ফ্রান্সসহ উন্নয়ন সহযোগীদের সহযোগিতা প্রয়োজন। কারণ আমাদের দীর্ঘ পথ পাড়ি দিতে হবে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, এক সময় বাংলাদেশ দারিদ্র্য, বন্যা ও খরার দেশ হিসেবে পরিচিত ছিল, যা এখন ব্যাপক উন্নয়নের মাধ্যমে উন্নয়নশীল দেশ হিসেবে রূপান্তরিত হয়েছে। তৃণমূলে ব্যাপক উন্নয়নের মাধ্যমে আজকের বাংলাদেশ সম্পূর্ণ ভিন্ন। দেশের প্রতিটি গ্রাম বিদ্যুতের আলোয় আলোকিত হয়েছে এবং যোগাযোগ নেটওয়ার্ক স্থাপন করা হয়েছে। গ্রামীণ জনপদ অনেক পরিবর্তিত হয়েছে এবং দারিদ্র্য উল্লেখযোগ্য হারে হ্রাস পেয়েছে। শেখ হাসিনা বলেন, সরকার গ্রামাঞ্চলে দরিদ্র জনগোষ্ঠীর জন্য ফ্ল্যাট নির্মাণের পরিকল্পনা নিয়েছে যা ইতোমধ্যে শহর এলাকায় শুরু হয়েছে। রোহিঙ্গাদের দ্রুত প্রত্যাবাসনের জন্য ফ্রান্সসহ পশ্চিমা দেশগুলোর প্রতি তাদের চাপ আরও বাড়ানোর আহ্বান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুত মিয়ানমারের নাগরিকদের অবশ্যই তাদের নিজ দেশে প্রত্যাবাসন করতে হবে। তারা এখানে মাদক চোরাচালান, অস্ত্র ও মানব পাচারের মতো বিভিন্ন অপরাধমূলক কাজের সঙ্গে জড়িত। বাংলাদেশে আটকে পড়া পাকিস্তানিদের সম্পর্কে প্রধানমন্ত্রী বলেন, তাদের চতুর্থ প্রজন্ম এখানে বসবাস করছে। পাকিস্তান তাদের আর ফিরিয়ে নেবে বলে মনে হয় না। আমরা তাদের স্থায়ী পুনর্বাসন নিশ্চিত করতে তাদের জন্য ফ্ল্যাট নির্মাণের পরিকল্পনা করছি। প্রধানমন্ত্রী ফরাসি গ্যাস কোম্পানিকে বাংলাদেশের গ্যাস খাতে এবং গ্যাস অনুসন্ধানে বিনিয়োগের জন্য অনুরোধ জানান। এয়ারবাস ক্রয় ও বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-২ উৎক্ষেপণসহ কয়েকটি দ্বিপক্ষীয় বিষয়েও আলোচনা করেন তারা।

টানা চতুর্থবার ও পঞ্চমবারের মতো বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হওয়ায় শেখ হাসিনাকে অভিনন্দন বার্তা পাঠিয়েছেন জাপানের প্রধানমন্ত্রী ফুমিও কিশিদা। গতকাল পাঠানো অভিনন্দন বার্তায় শেখ হাসিনার বিচক্ষণ নেতৃত্বের প্রশংসা করেন ফুমিও কিশিদা। পারস্পরিক ও আন্তর্জাতিক স্বার্থে শেখ হাসিনার সঙ্গে কাজ করতে জাপানের ইচ্ছা আছে বলেও জানিয়েছেন দেশটির প্রধানমন্ত্রী। এর আগে, ভোটের পর গত ৯ জানুয়ারি বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করে অভিনন্দন জানান ঢাকায় নিযুক্ত জাপানের রাষ্ট্রদূত ইওয়ামা কিমিনোরি।

???টানা চতুর্থবার সরকার গঠন করায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন জানিয়েছেন সৌদি যুবরাজ মুহাম্মদ বিন সালমান। গতকাল সকালে গণভবনে বাংলাদেশে নিযুক্ত সৌদি আরবের রাষ্ট্রদূত এসা ইউসুফ এসা আলদুহাইলান যুবরাজের পক্ষ থেকে প্রধানমন্ত্রীর হাতে অভিনন্দনপত্র তুলে দেন। বার্তায় যুবরাজ বাংলাদেশের উত্তরোত্তর উন্নতি ও সমৃদ্ধি কামনা করেন। সৌদি রাষ্ট্রদূত বাংলাদেশের উন্নয়ন অগ্রযাত্রা অব্যাহত রাখতে সহযোগিতার অঙ্গীকার করেন। সৌদি রাষ্ট্রদূত বলেন, আগামী দিনে হজ ও ওমরা হজের প্রক্রিয়া আরও সহজ করতে তারা ব্যবস্থা নিচ্ছেন। সৌদি আরব ও বাংলাদেশ ক্রীড়া ও সংস্কৃতিতে সহযোগিতা বাড়াতে পারে। রাষ্ট্রদূত অন্যান্য পেশাদারদের পাশাপাশি বাংলাদেশ থেকে চিকিৎসা কর্মীদের নেওয়ার ব্যাপারে তার দেশের আগ্রহ প্রকাশ করেন। সৌদি রাষ্ট্রদূত বাংলাদেশের আটটি বিভাগে আটটি মসজিদ ও ইসলামী ভাষা ইনস্টিটিউট প্রতিষ্ঠার জন্য তার দেশের ইচ্ছার কথা জানান। প্রধানমন্ত্রী ঢাকায় একটি ইনস্টিটিউট স্থাপনের জন্য উপযুক্ত স্থান খুঁজে বের করতে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে ব্যবস্থা নিতে বলেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশবাসীর আর্থ-সামাজিক অগ্রগতির জন্য তাঁর সরকারের গৃহীত পদক্ষেপগুলোকে এগিয়ে নিতে সৌদি রাষ্ট্রদূতের কাছে বাংলাদেশে আরও বিনিয়োগের প্রত্যাশা করেন। প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশের সরকার ও জনগণ সৌদি আরব এবং দেশটির জনগণের মঙ্গল কামনা করেন। কারণ, তাঁরা মক্কা ও মদিনার দুই পবিত্র মসজিদের খাদেম। ফ্রান্স ও সৌদি আরবের রাষ্ট্রদূতের সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎকালে প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ উপদেষ্টা সালমান ফজলুর রহমান, অ্যাম্বাসাডর অ্যাট লার্জ মো. জিয়াউদ্দিন এবং মুখ্য সচিব মো. তোফাজ্জল হোসেন মিয়া উপস্থিত ছিলেন।

সর্বশেষ খবর