বুধবার, ২৪ জানুয়ারি, ২০২৪ ০০:০০ টা
সুজনের প্রতিবেদন

৯০ শতাংশ এমপি কোটিপতি

নিজস্ব প্রতিবেদক

একাদশ জাতীয় সংসদের তুলনায় দ্বাদশ জাতীয় সংসদে কোটিপতি সদস্যের সংখ্যা বেড়েছে। নবনির্বাচিত সংসদ সদস্যের প্রায় ৯০ শতাংশই কোটিপতি। গতকাল ‘দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিজয়ীদের তথ্য উপস্থাপন ও সুজনের পর্যবেক্ষণ’ শীর্ষক ভার্চুয়াল সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানিয়েছে সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন)। সদ্য শেষ হওয়া নির্বাচনে বিজয়ী সংসদ সদস্যদের হলফনামার তথ্য বিশ্লেষণ করে এসব পর্যবেক্ষণ তুলে ধরা হয়। সুজনের কেন্দ্রীয় সমন্বয়কারী দিলীপ কুমার সরকার লিখিত পর্যবেক্ষণগুলো তুলে ধরেন। এসব পর্যবেক্ষণ থেকে জানা যায়, বর্তমান সংসদের ৬৭ শতাংশ সংসদ সদস্যই ব্যবসায়ী, ঋণগ্রস্ত সংসদ সদস্যের সংখ্যা ৪৫ শতাংশ, সামান্য বেড়েছে উচ্চশিক্ষিত সংসদ সদস্যের সংখ্যা, মামলা আছে ২০ জনের বিরুদ্ধে, ৩০২ ধারার মামলা আছে তিনজনের বিরুদ্ধে। সুজনের পর্যবেক্ষণ থেকে জানা যায়, নবনির্বাচিত ২৯৯ জন সংসদ সদস্যের মধ্যে ২৬৯ জনের বা ৮৯.৯৭ শতাংশ সংসদ সদস্যের সম্পদ কোটি টাকার ওপরে। আওয়ামী লীগ থেকে নির্বাচিত সংসদ সদস্যদের মধ্যে এই হার শতকরা ৯৫.০৬ শতাংশ বা ২১২ জন। জাতীয় পার্টি থেকে নির্বাচিতদের মধ্যে এই হার শতকরা ৯০.৯১ শতাংশ বা ১০ জন। অন্যান্য রাজনৈতিক দলের মধ্যে ১০০ শতাংশ বা তিনজন এবং স্বতন্ত্র থেকে নির্বাচিতদের মধ্যে এই হার ৭০.৯৬ শতাংশ বা ৪৪ জন। নবনির্বাচিত চার সংসদ সদস্যের হলফনামা অপূর্ণাঙ্গ পাওয়া গেছে। এদের মধ্যে তিনজন আওয়ামী লীগের এবং একজন স্বতন্ত্র। সংবাদ সম্মেলন শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে বদিউল আলম মজুমদার বলেন, দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন একপক্ষীয় হয়েছে। সুষ্ঠু নির্বাচনের কিছু বৈশিষ্ট্য রয়েছে। এর মধ্যে আছে যথার্থ বিকল্প থাকা, সবার জন্য সমতল ক্ষেত্র থাকা, ফলাফল ঘোষণার আগপর্যন্ত ফলাফল কী হবে, তা অজানা থাকা, ক্ষমতার রদবদলের সুযোগ থাকা ইত্যাদি। এবারের নির্বাচনে এগুলোর মধ্যে অনেক বৈশিষ্ট্য বিদ্যমান ছিল না। সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, জাতীয় সংসদে অধিক সম্পদের অধিকারীদের অংশগ্রহণ ক্রমশ বাড়ছে। একাদশ জাতীয় সংসদে কোটিপতির শতকরা হার ছিল ৮২.৩৩ শতাংশ বা ২৪৭ জন, দ্বাদশ জাতীয় সংসদে এই হার ৮৯.৯ শতাংশ বা ২৬৯ জন। যা পূর্ববতী সংসদের তুলনায় ৭.৬৪ শতাংশ বেশি। নির্বাচিত ২৯৯ জন সংসদ সদস্যের মধ্যে ২০০ জনের পেশা ব্যবসা। শতকরা হিসাবে সংসদ সদস্যদের ৬৬ দশমিক ৮৯ শতাংশ ব্যবসায়ী। একাদশ জাতীয় সংসদে ব্যবসায়ী ছিলেন ১৮৫ জন বা মোট সংসদ সদস্যের ৬১ দশমিক ৬৬ শতাংশ। সুজন জানায়, নবনির্বাচিত সংসদ সদস্যের মধ্যে ২৫ লাখ টাকার কম সম্পদের মালিক রয়েছেন ৯ জন বা ৩.০১ শতাংশ; সম্পদের ঘর পূরণ না করা দুজনসহ ৩.৬৭ শতাংশ বা ১১ জন। বিশ্লেষণে দেখা যায়, স্বল্প সম্পদের অধিকারীদের নির্বাচিত হওয়ার হার যথেষ্ট কম এবং অধিক সম্পদের মালিকদের নির্বাচিত হওয়ার হার অনেক বেশি। ৩৬.৪৫ শতাংশ কোটিপতি প্রার্থীর মধ্যে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে নির্বাচিত হয়েছেন ৮৯.৯৬ শতাংশ। পক্ষান্তরে ২৫ লাখ টাকা ও তার কম মূল্যের সম্পদের মালিক ৪৩.৮৫ শতাংশ নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে নির্বাচিত হয়েছেন ৩.৬৭ শতাংশ। এ ছাড়া নির্বাচিতদের মধ্যে দেনাদারের হার অনেক বৃদ্ধি পেয়েছে। একাদশ জাতীয় সংসদে দেনাদার ছিলেন ৪৩ জন বা ১৩ দশমিক ৩৩ শতাংশ। এবারের ২৯৯ সংসদ সদস্যের মধ্যে ঋণগ্রস্ত রয়েছেন ১৩৪ জন বা ৪৪ দশমিক ৮১ শতাংশ। কোটি টাকার অধিক দায়-দেনা রয়েছেন ৭৫ জন সংসদ সদস্যের। দায়-দেনা ও ঋণের ক্ষেত্রে ২১ জন ঋণের ঘরে তথ্য দিয়েছেন; যা দায়-দেনাতে উল্লেখ নেই। এদের মধ্যে ১১ জন আওয়ামী লীগ থেকে এবং ১০ জন স্বতন্ত্র হিসেবে নির্বাচিত। দ্বাদশ জাতীয় সংসদে বৃদ্ধি পেয়েছে উচ্চশিক্ষিত সংসদ সদস্যের হার। একাদশ জাতীয় সংসদে উচ্চশিক্ষিতের (স্নাতক বা স্নাতকোত্তর) হার ছিল শতকরা ৮১% (২৪৩ জন); দ্বাদশ জাতীয় সংসদে যা সামান্য বৃদ্ধি পেয়েছে (৮২.৬০%)। সুজনের পর্যবেক্ষণে উঠে এসেছে, একাদশ জাতীয় সংসদের তুলনায় নবনির্বাচিত সংসদ সদস্যদের বিরুদ্ধে মামলার হার বর্তমান, অতীত ও উভয় সময়ের ক্ষেত্রে কিছুটা হ্রাস পেয়েছে। এবারের নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতাকারী ও বিজয়ীদের মধ্যে সিংহভাগই ক্ষমতাসংশ্লিষ্ট হওয়ায় তাদের বিরুদ্ধে বর্তমান মামলার হার কম এবং অতীত মামলার হার বেশি। নবনির্বাচিত ২৯৯ জন সংসদ সদস্যের মধ্যে ২০ জনের (৬.৬৯%) বিরুদ্ধে বর্তমানে মামলা আছে, অতীতে মামলা ছিল ১২১ জনের (৪০.৪৭%) বিরুদ্ধে। অতীত ও বর্তমান উভয় সময়ে মামলা ছিল বা রয়েছে এমন সংসদ সদস্যের সংখ্যা ১২ জন (৪.০১%)। ৩০২ ধারায় বর্তমানে মামলা আছে তিনজনের (১.০০%) বিরুদ্ধে। অতীতে ছিল ৪০ জনের (১৩.৩৮%) বিরুদ্ধে।

 

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর