শুক্রবার, ২৬ জানুয়ারি, ২০২৪ ০০:০০ টা

শত কোটি টাকার কোকেনসহ গ্রেফতার আফ্রিকার নাগরিক

বিশেষ প্রতিনিধি

শত কোটি টাকার কোকেনসহ গ্রেফতার আফ্রিকার নাগরিক

শত কোটি টাকা মূল্যের কোকেনের চালান জব্দ করেছে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতর (ডিএনসি)। দেশের ইতিহাসে এটি সর্বাপেক্ষা বড় চালান বলে দাবি করেছে ডিএনসি।

আফ্রিকান দেশে মালউ-এর নাগরিক নোমথেনডাজো তাওয়েরা সোকো ৮ কেজি ৩০০ গ্রামের এই কোকেনের চালানটি বাংলাদেশে নিয়ে আসেন। গত বুধবার রাতে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে কোকেনের চালানসহ তাকে গ্রেফতার করা হয়। ডিএনসি জানায়, কোকেনের এই চালানটি আফ্রিকার দেশ মালউ অথবা ইথিওপিয়া থেকে বাংলাদেশে এসেছে। বাংলাদেশকে ট্রানজিট রুট হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছিল চালানটি পাচার করার জন্য। কারণ এই পরিমাণ কোকেনের চাহিদা বাংলাদেশে নেই।

এ নিয়ে গতকাল সংবাদ সম্মেলন করেছেন মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতরের পরিচালক (অপারেশন) তানভীর মমতাজ। রাজধানীর তেজগাঁওয়ে ডিএনসির উত্তর কার্যালয়ে তিনি বলেন, কোকেন চোরাচালানের আন্তর্জাতিক সিন্ডিকেটের দেশি ও বিদেশি সক্রিয় কয়েকজন সদস্য বাংলাদেশকে ট্রানজিট হিসেবে ব্যবহার করছিল। কোকেনের এই চালান আফ্রিকা থেকে কাতার এয়ারওয়েজের একটি ফ্লাইটে করে আসছিল আফ্রিকান এক নাগরিকের মাধ্যমে। আমরা এমন তথ্যের ভিত্তিতে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে নজরদারি বাড়াই এবং অপারেশন পরিচালনা করি। অপারেশনের আগে ফ্লাইট থেকে নামা সব বিদেশি যাত্রীকেও আমরা ফলো করছিলাম।

আমরা দেখতে পাচ্ছিলাম, নোমথেনডাজো তাওয়েরা সোকো বিমানবন্দরের নিচ তলায় ভিসা অন অ্যারাইভাল ডেস্কে দীর্ঘক্ষণ ধরে অবস্থান করছেন। তার গতিবিধি সন্দেহজনক মনে হচ্ছিল। আমরা তাকে চ্যালেঞ্জ করি। জিজ্ঞাসাবাদের একপর্যায়ে তিনি স্বীকার করেন, তার ব্যবহৃত লাগেজটিতে অবৈধ মাদক (কোকেন) আছে। আমরা লাগেজ খুলে দেখতে পাই এই কোকেন বিশেষভাবে রক্ষিত রয়েছে। তা উদ্ধারের পর দেখা যাচ্ছে এতে ৮ কেজি ৩০০ গ্রাম কোকেন রয়েছে। যার আনুমানিক মূল্য ১০০ কোটি টাকা।

সংবাদ সম্মেলনে তানভীর মমতাজ জানান, এই নারী আফ্রিকার দেশ মালউ-এর নাগরিক। তিনি প্রথমে মালউ থেকে ইথিওপিয়া যান। পরে তিনি সেখান থেকে যান দোহায়। দোহা থেকে কাতার এয়ারলাইনসের একটি ফ্লাইটে বাংলাদেশে আসেন। ৪ ফেব্রুয়ারি বাংলাদেশ থেকে আবারও তার মালউয়ে যাওয়ার কথা ছিল। ডিএনসির এই কর্মকর্তা বলেন, কোকেনের এই চালানটি বাংলাদেশকে ট্রানজিট রুট হিসেবে ব্যবহার করার কথা ছিল। পরে বাংলাদেশ থেকে কোকেনের চালানটি অন্য কোনো দেশে চলে যেত। আমাদের ধারণা, তাওয়েরা সোকো কোকেনের এই চালানটি মালউ থেকে, নয়তো ইথিওপিয়া থেকে সংগ্রহ করেছে।

জিজ্ঞাসাবাদে সোকো জানান, ২০২৩ সালে তিনি বাংলাদেশে একবার এসেছিলেন। গার্মেন্ট ব্যবসার কথা বলে ওই বার আসেন তিনি। এবারও বাংলাদেশের একটি গার্মেন্টের আমন্ত্রণপত্র নিয়ে ঢাকায় আসেন। অন অ্যারাইভাল ভিসা নেওয়ার জন্য পরিচয় লুকিয়ে গার্মেন্ট ব্যবসার নাম করে বাংলাদেশে ঢোকার চেষ্টা করছিলেন তিনি। সোকো মালউয়ে নার্স হিসেবে কাজ করেন। তিনি মূলত কোকেনের এই চালানের বহনকারী। বাংলাদেশে আরেক বিদেশি নাগরিকের কাছে এই চালান পৌঁছে দিয়ে তার নিজ দেশে ফিরে যাওয়ার কথা ছিল।

মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতরের এই কর্মকর্তার কাছে জানতে চাওয়া হয়, বাংলাদেশে কার কাছে এই কোকেন হস্তান্তর করতেন। জবাবে এই কর্মকর্তা জানান, আমরা এ বিষয়ে তদন্ত করে দেখছি। তবে বাংলাদেশ অবস্থানরত কয়েকজন বিদেশি নাগরিকের কাছে এই কোকেন যাওয়ার কথা ছিল। আমরা এক বিদেশিকে সন্দেহ করছি। তদন্তের স্বার্থে এ বিষয়ে বেশি কিছু বলতে চাচ্ছি না। আমরা আশা করি চক্রটিকে ধরতে পারব। এর মূল উৎপাটন করতে সমর্থ হব।

২০২৩ সালে সোকো বাংলাদেশে কোকেনের চালান নিয়ে এসেছিলেন কি না জানতে চাইলে তিনি আরও বলেন, তখনো তিনি গার্মেন্ট ব্যবসার নাম করে এসেছিলেন, তবে আসলে কেন এসেছিলেন সে বিষয়ে আমরা তদন্ত করে যাচ্ছি।

কোকেনের এই আন্তর্জাতিক চক্রের সঙ্গে বাংলাদেশের কেউ জড়িত আছে কি না জানতে চাইলে তানভীর মমতাজ বলেন, কোকেনের চালানের সঙ্গে দেশি ও বিদেশি চক্র জড়িত আছে। এই চক্রটিকে চিহ্নিত করার চেষ্টা করছি। তবে এটা বলতে চাই, কোকেনের চালানটি বাংলাদেশের জন্য ছিল না। কারণ বাংলাদেশে এই পরিমাণ কোকেন কনজিউম করার মার্কেট নেই।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর