শনিবার, ২৭ জানুয়ারি, ২০২৪ ০০:০০ টা

রমজানে শঙ্কা দ্রব্যমূল্য সিন্ডিকেট

রাশেদ হোসাইন

রমজানে দ্রব্যমূল্য নিয়ে তৈরি হয়েছে শঙ্কা। বিভিন্ন ক্ষেত্রে সিন্ডিকেট করে রমজানের পণ্যের দাম বাড়ানোর পাঁয়তারা চলছে। ফলে প্রতিবারের মতো এবারও গভীর উদ্বেগের মধ্যে রয়েছে সাধারণ মানুষ। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, প্রতিকারমূলক পদক্ষেপ এখনই না নিলে সিন্ডিকেটের কাছে আবারও নাজেহাল হতে হবে ভোক্তাদের। তাই অবৈধ মজুতদারের বিরুদ্ধে কঠোর অভিযান চালানোর কোনো বিকল্প নেই। বাণিজ্য প্রতিমন্ত্রী আহসানুল ইসলাম টিটু বলেছেন, রমজানের আগে সব নিত্যপণ্যের দাম নিয়ন্ত্রণে আনা হবে। এজন্য প্রয়োজনীয় সব ব্যবস্থাই নেওয়া হবে। এবার রমজান উপলক্ষে খাদ্য মজুত যথেষ্ট রয়েছে। ভারত দীর্ঘদিন রপ্তানি বন্ধ রেখেছিল। ভারতের বাণিজ্যমন্ত্রীর সঙ্গে কথা হয়েছে। রমজানের আগেই ভারত বাংলাদেশে চিনি ও পিঁয়াজ রপ্তানি করবে। ভারত থেকে অতি শিগগির ২০ হাজার মেট্রিক টন পিঁয়াজ ও ৫০ হাজার মেট্রিক টন চিনি আমদানি করা হবে। আগে যে শুল্ক ছিল এখন তা অনেক কমিয়ে আনা হবে। এ ছাড়া ব্রাজিল ও বিভিন্ন দেশ থেকে চিনিসহ পণ্যসামগ্রী আসছে।

বাজার বিশ্লেষকরা বলছেন, সরকারের পক্ষ থেকে বাজার পর্যবেক্ষণসহ নানা পদক্ষেপ নেওয়ার পরও রোজার বাজারে পণ্যমূল্য অনিয়ন্ত্রিতই থেকে যাচ্ছে। রমজান ঘনিয়ে এলেই একশ্রেণির ব্যবসায়ী নিত্যপণ্যের দাম বাড়িয়ে দেয়। বাজার নিয়ন্ত্রণে সরকার বিভিন্ন উদ্যোগ নিলেও তা সুফল আনে না। চাল, ডাল, চিনি, সয়াবিন সব ক্ষেত্রে সিন্ডিকেট। পর্যাপ্ত সরবরাহ থাকা সত্ত্বেও নানা কারণ দেখিয়ে দাম বাড়িয়ে দেয় অসাধু সিন্ডিকেট। বৃষ্টি হলেও দাম বাড়ে, না হলেও দাম বাড়ে। আন্তর্জাতিক বাজারে দাম কম কিংবা বেশি যা-ই হোক না কেন, অসাধু সিন্ডিকেট দাম বাড়ায় ইচ্ছামতো। রমজানে মানুষের নির্বিঘ্ন সিয়াম সাধনার স্বার্থে দুষ্টচক্রের বিরুদ্ধে সরকারকে কঠোর হতে হবে।

জানা যায়, অসাধু সিন্ডিকেটের দৌরাত্ম্য থামাতে এবং পণ্যদ্রব্য ক্রয়সীমার মধ্যে রাখতে সরকারের পক্ষ থেকে নানা উদ্যোগ নেওয়া হয়। মনিটরিংয়ের পাশাপাশি বাজার স্থিতিশীল রাখার জন্য বিশেষ অভিযান, মোবাইল কোর্ট, জেল-জরিমানাও করা হয়। এত সব সত্ত্বেও সিন্ডিকেটের দৌরাত্ম্য যেন থামানোই যাচ্ছে না। এর কারণ সম্পর্কে ব্যবসায়ীরা বলেন, ‘যখন বাজার মনিটরিংয়ের লোক আসে তখন নির্ধারিত দামেই পণ্য বেচাকেনা চলে। মনিটরিং আওয়ার শেষ হলেই আবার আমাদের দামে কেনাবেচা হয়।’

ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতর বলছে, দেশের ত্রুটিপূর্ণ বিপণনব্যবস্থার কারণে একই পণ্যের মূল্য বিভিন্ন হাতবদলের মাধ্যমে অতিরিক্ত বেড়ে যায়। পণ্যের অবৈধ মজুত করলে সাপ্লাই চেইনের সমস্যা তৈরি হয়। কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি করে বাজারে সরবরাহব্যবস্থা মন্থর করে অসাধু ব্যবসায়ীরা। এজন্য অসাধু ব্যবসায়ীদের আইনের আওতায় এনে শাস্তির ব্যবস্থা করা হবে। অপরাধীর পরিচয় অপরাধী, তারা ব্যবসায়ী নয়। রমজানে যে কোনো ভোগ্যপণ্যের অযৌক্তিক মূল্য বৃদ্ধি হলে অধিদফতর যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করবে।

সরকারি তথ্যানুযায়ী, দেশে নিত্যপণ্যের মজুত পর্যাপ্ত। দাম বাড়ানোর কোনো যৌক্তিক কারণ নেই। রমজানে নিত্যপণ্যের মধ্যে ভোজ্য তেল, চিনি, ছোলা, পিঁয়াজ, ডাল ও খেজুর ন্যায্যমূল্যে বিক্রির চিন্তা করছে সরকার। রমজানের চাহিদা মেটাতে ভোজ্য তেল, ছোলা, আদা, রসুন, খেজুরসহ সব নিত্যপণ্যের চাহিদা, উৎপাদন, আমদানি পর্যালোচনা করে প্রয়োজনীয় মজুত করা হচ্ছে। যাতে রমজানে মানুষের পণ্যের সংকট না হয়। সহনীয় দামে কিনতে পারে। সেজন্য একাধিক সংস্থা কঠোর মনিটরিং করছে।

জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতরের মহাপরিচালক (ডিজি) এ এইচ এম সফিকুজ্জামান বলেন, ‘দেশে পর্যাপ্ত নিত্যপণ্য রয়েছে। রমজানে কোথাও ঘাটতি হওয়ার কথা না। আমরা রুট পর্যায়ে যাচ্ছি। কেউ অবৈধ মজুত করলে সে বিষয়গুলো দেখছি। অবৈধ মজুতদারের বিরুদ্ধে অভিযান চলমান থাকবে।’ তিনি বলেন, ‘রমজান কেন্দ্র করে আমাদের মনিটরিং ব্যবস্থা জোরদার করছি। আমরা এসব বিষয়ে খোঁজখবর নিচ্ছি এজন্য রুট লেভেলে যাচ্ছি। যেখানে বিভিন্ন পণ্যের মজুত আছে। পণ্যের দাম কীভাবে নিয়ন্ত্রণ করা যায় এগুলো নিয়ে মিটিং করছি। বিভিন্ন সংস্থাও কাজ করছে।’

বাংলাদেশ অর্থনীতি সমিতির সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক ড. আইনুল ইসলাম বলেন, ‘রমজানে দ্রব্যমূল্যের সিন্ডিকেট নিয়ন্ত্রণে আলাদা বিশেষায়িত বাজার তৈরি করা যেতে পারে। সেখানে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ অধিদফতরের মতো সুলভ মূল্যে মাছ, মাংস, দুধ, ডিমসহ রমজানের অন্যান্য পণ্যসামগ্রী বিক্রির ব্যবস্থা করা যেতে পারে।’ তিনি বলেন, ‘রমজানে আমাদের বাজার ঠিক রাখতে টিসিবির কার্যক্রম আরও বেশি মানুষের কাছে পৌঁছে দিতে হবে। সেই সঙ্গে বাড়াতে হবে কৃষি সেক্টরে সরকারের নিয়ন্ত্রণ।’

অবৈধ মজুতদারের বিরুদ্ধে অভিযান চলতে থাকবে

সাপ্লাই চেইন ব্যবস্থার আধুনিকায়ন করতে হবে

বিশেষায়িত বাজার করা যেতে পারে

 

সর্বশেষ খবর