শনিবার, ২৭ জানুয়ারি, ২০২৪ ০০:০০ টা

নীরবে প্রাণ কাড়ছে ডেঙ্গু

♦ ২৬ দিনে ১৪ জনের মৃত্যু হাসপাতালে ভর্তি ৯৪৫ জন ♦ ডিসেম্বরে মিলেছে তিন গুণ বেশি লার্ভা

জয়শ্রী ভাদুড়ী

নীরবে প্রাণ কাড়ছে ডেঙ্গু

মৌসুম শেষ হয়ে তীব্র শীত চলে এলেও থেমে নেই ডেঙ্গুর মরণ কামড়। বিভিন্ন ইস্যুর ডামাডোলে নীরবে প্রাণ কাড়ছে ডেঙ্গু। ২০২২ সালের ডিসেম্বরের তুলনায় গত ডিসেম্বরের জরিপে তিন গুণ বেশি এডিসের লার্ভা মিলেছে বলে জানিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদফতর। তাই দ্রুত ব্যবস্থা না নিলে চলতি বছরেও ডেঙ্গু বিপদ বাড়াতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন কীটতত্ত্ববিদরা। স্বাস্থ্য অধিদফতর সূত্রে জানা যায়, গতকাল ডেঙ্গুজ্বরে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন ১৪ জন। চলতি মাসের ২৬ দিনে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন ৯৫৯ জন, মারা গিয়েছেন ১৪ জন। গত বছর ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে সারা দেশের হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন ৩ লাখ ২১ হাজার ১৭৯ জন। মারা গিয়েছেন ১ হাজার ৭০৫ জন। ঢাকার হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন ১ লাখ ১০ হাজার আটজন। ঢাকার বাইরের হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন ২ লাখ ১১ হাজার ১৭১ জন। এত দিন ঢাকা মহানগরীতে ডেঙ্গুর প্রকোপ ছিল। কিন্তু গত বছর প্রত্যন্ত গ্রামে পৌঁছে গিয়েছে ডেঙ্গু। বাংলাদেশে প্রথম ডেঙ্গু শনাক্ত হয় ১৯৬৫ সালে। তখন এই রোগটি ঢাকা ফিভার নামে পরিচিত ছিল। কিন্তু ২০০০ সালের পর থেকে রোগটির সংক্রমণ বাড়তে শুরু করে। দেশে ২০০০ থেকে ২০২২ সাল পর্যন্ত ডেঙ্গুতে আক্রান্তের সংখ্যা ছিল ২ লাখ ৪৪ হাজার ২৪৬। এ সময় মৃত্যু হয় ৮৪৯ জনের। গত এক বছরেই ডেঙ্গু ছাড়িয়ে গিয়েছে এর আগের ২২ বছরের আক্রান্তের সংখ্যাকে এবং মারা গিয়েছেন দ্বিগুণ সংখ্যক মানুষ। স্বাস্থ্য অধিদফতরের রোগনিয়ন্ত্রণ শাখা বছরে তিনবার (প্রাক্?-বর্ষা, বর্ষা এবং বর্ষা-পরবর্তী) রাজধানীতে লার্ভা জরিপ করে। গত ৮ ডিসেম্বর থেকে ১৮ ডিসেম্বরে ঢাকার দুই সিটির ৯৯টি ওয়ার্ডে বর্ষা পরবর্তী লার্ভা জরিপ হয়েছে। এর মধ্যে উত্তর সিটির ৪০টি ও দক্ষিণের ৫৯টি ওয়ার্ডে জরিপের কাজ চলে। ৩ হাজার ২৮৩টি বাড়ি থেকে সংগৃহীত নমুনায় উত্তর সিটির ১১ শতাংশের বেশি ও দক্ষিণের ১২ শতাংশের বেশি বাড়িতে এডিস মশার লার্ভা পাওয়া গেছে। জরিপে যে লার্ভা পাওয়া গেছে তা ২০২২ সালের প্রায় তিন গুণ। রোগনিয়ন্ত্রণ শাখার ২০২২ সালের বর্ষা-পরবর্তী জরিপের তথ্য বলছে, সে বছর উত্তর সিটির প্রায় ৪ শতাংশ ও দক্ষিণের ৪ শতাংশের বেশি বাড়িতে লার্ভা পাওয়া গিয়েছিল।

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক কীটতত্ত্ববিদ ড. কবিরুল বাশার বলেন, বাংলাদেশের ডেঙ্গু ইতিহাসের রেকর্ড ভেঙে আক্রান্ত এবং মৃতের সংখ্যা সর্বোচ্চতে পৌঁছেছে। সরকারি হিসাবের তুলনায় আক্রান্তের সংখ্যা আরও অনেক বেশি। ঢাকা শহর ছাড়িয়ে ডেঙ্গু এখন দেশের ৬৪ জেলায় শক্ত অবস্থান তৈরি করেছে। শহরের বাইরে গ্রামাঞ্চলের ছড়িয়েছে ডেঙ্গু। এখনই সমন্বিত মশক নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থাপনার বিজ্ঞানভিত্তিক প্রয়োগ না করলে ভবিষ্যতে পরিস্থিতি খারাপ হতে পারে। জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ মুশতাক হোসেন বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘রাজধানী পেরিয়ে সারা দেশে ছড়িয়ে পড়েছে ডেঙ্গু রোগী। প্রত্যন্ত গ্রামেও ডেঙ্গু আক্রান্ত হচ্ছে মানুষ। বিশাল জনগোষ্ঠীর মধ্যে রোগ এবং মশার গতিপ্রকৃতি বোঝার জন্য এখন নজরদারি দরকার। এর মাধ্যমে মূলত যা যা করণীয় তা নির্ধারণ হয়। দ্বিতীয় বা তৃতীয়বার আক্রান্ত হলে ঝুঁকি বেশি থাকে। এক বছরে ৩ লাখের বেশি মানুষ আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে। অনেকে বাড়িতে চিকিৎসা নিয়েছে। তাই চলতি বছরে ডেঙ্গু আরও বেশি শঙ্কা নিয়ে হাজির হতে পারে। তাই এখন থেকেই এডিস মশা নিয়ন্ত্রণ এবং চিকিৎসা ব্যবস্থা নিয়ে বিস্তৃত পরিকল্পনা নিতে হবে।’

সর্বশেষ খবর