রবিবার, ২৮ জানুয়ারি, ২০২৪ ০০:০০ টা
শোডাউনের পর ফের পাল্টাপাল্টি

বিদেশি শক্তি আমাদের বসায়নি : কাদের

৩০ জানুয়ারি বিএনপির কালো পতাকা, আওয়ামী লীগের শান্তি সমাবেশ

নিজস্ব প্রতিবেদক

বিদেশি শক্তি আমাদের বসায়নি : কাদের

বিএনপিকে উদ্দেশ করে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক, সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেছেন, বিদেশিদের ভয় দেখান? ৪১.৮ শতাংশ লোকের ভোটারের ভোটে শেখ হাসিনার নেতৃত্বে সরকার গঠিত হয়েছে। এ সরকার জনগণের সরকার, নির্বাচিত সরকার। যেখানে ২৮ দল নির্বাচনে অংশ নিয়েছে। চীন বা রাশিয়া আমাদের বন্ধু হতে পারে। আমাদের সরকার কোনো বিদেশি শক্তি বসায়নি। বাংলাদেশের জনগণের ভোটে শেখ হাসিনা বিপুল ভোটে নির্বাচিত হয়েছে। গতকাল বিকালে বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ে ঢাকা মহানগরী দক্ষিণ আওয়ামী লীগ আয়োজিত শান্তি ও গণতন্ত্র সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। এ সময় ৩০ জানুয়ারি দেশব্যাপী জেলা-মহানগর-উপজেলায় লাল-সবুজ পতাকা নিয়ে শান্তি সমাবেশ করার ঘোষণা দেন ওবায়দুল কাদের। ওইদিন দেশব্যাপী বিএনপি কালো পতাকা মিছিলের ঘোষণা দিয়েছে।

৭ জানুয়ারি নির্বাচনের পর গতকাল দুই প্রধান রাজনৈতিক দল পাল্টাপাল্টি কর্মসূচি পালন করে। নয়াপল্টনে বিএনপি এবং বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ে আওয়ামী লীগ। বিকাল ৩টায় আওয়ামী লীগের শান্তি সমাবেশ শুরু হওয়ার কথা থাকলেও দুপুর থেকেই নেতা-কর্মীরা মিছিল নিয়ে কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে হাজির হন। ৩টার আগেই কানায় কানায় পূর্ণ হয় সমাবেশস্থল। সবচেয়ে বড় মিছিল নিয়ে আসেন ঢাকা-৫ আসন থেকে নির্বাচিত স্বতন্ত্র এমপি মশিউর রহমান মোল্লা সজল। পরে তাঁকে মঞ্চে ডেকে নেওয়া হয়। সমাবেশের সামনে কোনো ব্যানার না থাকায় আয়োজকদের ধন্যবাদ জানান ওবায়দুল কাদের। কিন্তু তাঁর নিজের ছবি দিয়ে মহানগরী দক্ষিণের দফতর সম্পাদকের করা চারটি ঢাউস আকারের ব্যানার দেখে খুব কষ্ট পেয়েছেন বলে উল্লেখ করেন আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক। ভবিষ্যতে এ ধরনের কাজ থেকে বিরত থাকার আহ্বান করেন তিনি।

ওবায়দুল কাদের বলেন, খেলা একটা হয়ে গেছে। নির্বাচনের খেলা শেষ পাঁচ বছরের জন্য। এখন খেলা হবে রাজনীতির। এখন খেলা হবে দুর্নীতি, সাম্প্রদায়িকতা, জঙ্গিবাদ, হরতাল, আগুনসন্ত্রাসের বিরুদ্ধে। ৩০ তারিখ আবার বিএনপি কালো পতাকা মিছিল করবে। সেদিন আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা মহানগর, জেলা, উপজেলায় লাল-সবুজ পতাকা হাতে গণতন্ত্র, শান্তি ও উন্নয়ন সমাবেশ করবেন। সারা দেশে দলীয় নেতা-কর্মীদের পাহারায় থাকার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, এ অপশক্তিকে আমরা আর বাড়তে দিতে পারি না। তাদের রুখতে হবে। মুক্তিযুদ্ধের সপক্ষের শক্তিকে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। ঢাকা মহানগরী দক্ষিণ আওয়ামী লীগের সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা আবু আহমেদ মন্নাফীর সভাপতিত্বে আরও বক্তব্য দেন আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য ড. আবদুর রাজ্জাক, অ্যাডভোকেট কামরুল ইসলাম, ডা. মোস্তফা জালাল মহিউদ্দিন, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ, মাহবুব-উল আলম হানিফ, সাংগঠনিক সম্পাদক বি এম মোজাম্মেল হক, সংস্কৃতি সম্পাদক অসীম কুমার উকিল, সদস্য সানজিদা খানম, দক্ষিণের সাধারণ সম্পাদক হুমায়ুন কবির, ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ইসহাক আলী খান পান্না প্রমুখ। সভা পরিচালনা করেন যৌথভাবে নগর নেতা সাইফুন্নবী চৌধুরী সাগর, রিয়াজ উদ্দিন রিয়াজ ও আসাদুজ্জামান। ওবায়দুল কাদের আরও বলেন, বিএনপি নেতারা সরকারের বিরুদ্ধে বিদেশিদের ডেকে আনে। বিদেশিদের ভয় দেখায়। এদের কোনো দেশপ্রেম নেই। এরা আটলান্টিকের ওপার থেকে নিষেধাজ্ঞা আনতে চায়, ভিসানীতি আনতে চায়। বিএনপির কালো পতাকা মিছিলকে শোকমিছিল অভিহিত করে ওবায়দুল কাদের বলেন, মাঠে নেমেছেন। কালো পতাকা মিছিল। কালো পতাকা মানে হচ্ছে শোকমিছিল। এ আরেক ভুয়া। আন্দোলনের নামে ভুয়া। ৩০ তারিখে (জানুয়ারি) আবার কালো পতাকা মিছিল ডেকেছে, সেটাও ভুয়া। নেতা-কর্মীরা এখন আর তারেকের ফরমায়েশে কান দেয় না। বিএনপি নেতা গয়েশ্বর রায়কে উদ্দেশ করে ওবায়দুল কাদের বলেন, কোথায় ছিলেন এতদিন? কোথায় ছিলেন গয়েশ্বর বাবু? তিনি শনিবার পল্টনে হাজির হয়েছেন। বলেছিলেন অলিগলি খুঁজে পাব না, আমরা পালিয়ে যাব। কে পালিয়েছে? ডিবি অফিসে কোরাল মাছ খেয়ে পালিয়েছিল কারা? তিনি বলেন, দেখতে দেখতে ১৫ বছর। সামনে আরও পাঁচ বছর। মানুষ বাঁচে কয় বছর! কবে হবে আন্দোলন?

আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য সাবেক কৃষিমন্ত্রী ড. আবদুর রাজ্জাক বলেন, জাতীয় নির্বাচন বানচাল করতে এমন কোনো ষড়যন্ত্র নেই যা বিএনপি করেনি। তাদের ষড়যন্ত্র মোকাবিলা করে নির্বাচন হয়েছে। আমাদের নেত্রী পঞ্চমবারের মতো প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব নিয়েছেন। এখন বিএনপির উচিত জাতির কাছে ক্ষমা চাওয়া। তিনি বলেন, আজকে বিএনপি কাদের কালো পতাকা দেখাবে? বিএনপির উচিত ছিল কেন্দ্রীয় নেতাদের কালো পতাকা দেখিয়ে বিদায় দিয়ে তৃণমূলের নেতাদের সামনে আনা। প্রেসিডিয়াম সদস্য অ্যাডভোকেট কামরুল ইসলাম বিএনপির উদ্দেশে বলেন, আবার আগুনসন্ত্রাসের পথে হাঁটবেন না। সন্ত্রাস করলে কাউকে ছাড় দেওয়া হবে না। তিনি বলেন, আন্দোলনের নামে বিএনপি যে অমার্জনীয় অপরাধ করেছে, তারা ভুল স্বীকার করে জনগণের কাছে ক্ষমা চাইবে। কিন্তু তারা সন্ত্রাসের জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছে। আরেক প্রেসিডিয়াম সদস্য ডা. মোস্তফা জালাল মহিউদ্দিন বলেন, বিএনপি যদি আবার অতীতের মতো সন্ত্রাস করে তাহলে আর মাঠে নামতে দেওয়া হবে না। নাশকতা করলে আর ছাড় দেওয়া হবে না। যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ বলেন, নির্বাচনের পর সমস্ত পৃথিবী প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে কাজ করার অভিপ্রায় ব্যক্ত করেছে। বিএনপিকে জনগণ আগেই কালো পতাকা দেখিয়েছে। বিদেশিরা তাদের ডাকে সাড়া দেয়নি। তারা নানা কায়দা করার চেষ্টা করেছে, কিন্তু বিদেশিরা বিএনপিকে লাল পতাকা দেখিয়েছে। যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল আলম হানিফ বলেন, এ নির্বাচনের মধ্য দিয়ে প্রমাণ হয়েছে, এ দেশে নির্বাচন বয়কটের রাজনীতি আর চলবে না। তিনি আরও বলেন, বিএনপি মানুষের কাছে সন্ত্রাসী সংগঠন। সন্ত্রাস করে দেশের মঙ্গল করা যায় না, সেটা প্রমাণিত হয়েছে।

সর্বশেষ খবর