রবিবার, ২৮ জানুয়ারি, ২০২৪ ০০:০০ টা

বিপজ্জনক ৬০ পয়েন্ট লালমনিরহাটে

লালমনিরহাট প্রতিনিধি

লালমনিরহাট সীমান্তের ৬০টি পয়েন্ট দিয়ে অবাধে আসছে ফেনসিডিল। সীমান্তের গ্রামগুলোর বাসিন্দারা জানান, সীমান্ত পেরিয়ে প্রতিদিন ২০ থেকে ২৫ হাজার বোতল ফেনসিডিল দেশে প্রবেশ করছে। এসব মাদক পুলিশের সহায়তায় যাচ্ছে রাজধানী ঢাকায়। মাদকবিরোধী বিভিন্ন সংগঠনের মতে জেলায় মাদক সেবনকারীর সংখ্যা ২ লাখেরও ওপরে। তার মধ্যে নারী মাদক সেবনকারীর সংখ্যা ২ হাজারের ওপরে। প্রতিদিন ফেনসিডিলের চাহিদা ৮ থেকে ১০ হাজার বোতল বলে একাধিক সূত্র জানায়। জেলায় ৪০০ মাদক ব্যবসায়ী নিয়ন্ত্রণ করে এ অবৈধ ব্যবসা। এদের অনেকের নাম রয়েছে পুলিশের খাতায়। অনেকের কাছে মাসোহারা নেয় পুলিশ। মাসোহারা দিতে দেরি হলে মাদক মামলায় হতে হয় হাজতবাস। পুলিশ প্রশাসনের চোখ ফাঁকি দিয়ে দ্রুত বাস, ট্রাক, ট্রেনসহ বিভিন্ন যানবাহনে ছড়িয়ে পড়ে দেশের আনাচে-কানাচে। মাদক ব্যবসায়ীদের কাছে নিরাপদ রুট ট্রেন। মাদক আসে সীমান্তের মোগলহাট, কুলাঘাট, ফুলবাড়িঘাট, আদিতমারীর দুর্গাপুর, কালীগঞ্জের চামটা, লতাবর, লোহাকুচি, বলাইরহাট, চন্দ্রপুর, বুড়িরহাট, গোড়ল, তালুক দুলালী, হাতিবান্ধার দইখাওয়া, সিঙ্গিমারী, জাওরানী, উত্তর সিঙ্গিমারী, বড়খাতা, গোতামারী, উত্তর গোতামারী, পাটগ্রামের বুড়িমারী, মৃগলীবাড়ী, পানবাড়ী, দহগ্রাম, ঝালাঙ্গী, শমসের নগর, বাউরা, ধবলগুড়ি, কুচলিবাড়ী, ধবলসূতিসহ বিভিন্ন পথে। সীমান্তের বাসিন্দারা জানায়, সন্ধ্যা হলেই দৌড়ঝাঁপ শুরু হয় মাদক চোরাচালানিদের। গোড়ল গ্রামের শিক্ষক মনিরুজ্জামান জানান, চোরাচালানিদের দৌড়ঝাঁপে রাতে ঘুমাতে পারি না। সীমান্তবাসী প্রতিবাদ করলেই তাদের বিভিন্ন মামলায় জড়িয়ে পাঠিয়ে দেওয়া হয় জেলহাজতে। কুলাঘাট ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান মো. ইদ্রিস আলী জানান, মাদক বন্ধ করতে হলে আগে পুলিশকে কঠোর ব্যবস্থা নিতে হবে। পুলিশ এক ধরনের সোর্স নিয়োগ দিয়েছে যে তারাই মাদক ব্যবসার সঙ্গে জড়িত। সোর্স টাকা না পেলে নিরপরাধ লোকজনদের ধরে মাদক দিয়ে চালান দেয়। এদিকে এসব মাদক তিস্তা সেতু, কাকিনা মহিপুর সেতু, তিস্তা ব্যারাজ, খুনিয়াগাছঘাটসহ একাধিক পয়েন্ট দিয়ে পাচার হয়। এসব এলাকা থেকে ডিবি পুলিশ অভিযান চালিয়ে উদ্ধার করা অর্ধেক মাদক জমা দিয়ে বাকি মালামাল সোর্সের মাধ্যমে বিক্রি করে থাকে বলে অভিযোগ রয়েছে। এ ধরনের ঘটনা লালমনিরহাটে ঘটছে প্রতিনিয়ত। লালমনিরহাট শহরের বাবুপাড়া, সাহেবপাড়া, ওয়ারলেস কলোনি, শাহাজাহান কলোনি, টিউময়েলপাড়া, কাজী কলোনি, শ্মশান কলোনি, বিএনপি কলোনি, সুরকীমিল কলোনি, নবারেরহাট, নয়ারহাট, সুকানদীঘি, নামাটারী, পানির ট্যাংকি, বানভাসামোড়, ফুলগাছ রেল গেট, পুকুরপাড়, গোশালা বাজার এলাকা মাদকে সয়লাব। এ ছাড়াও কুলাঘাট, মোগলহাট, খুনিয়াগাছ, সাপ্টিবাড়ী, বড়বাড়ী, মহেন্দ্রনগর, তিস্তা, গোকুন্ডা, মোস্তফি এলাকাও মাদকের এলাকা বলে পরিচিত। শহরে প্রতিটি ফেনসিডিল ৬০০ টাকা থেকে ৮০০ টাকায় পাওয়া যায়। নেশার টাকা জোগাড় করতে চুরি, ডাকাতি, ছিনতাই, রাহাজানিসহ নানান অপরাধমূলক কাজে জড়িয়ে পড়ছে মাদকসেবীরা। একাধিক মাদক ব্যবসায়ী জানান, পুলিশকে টাকা দিয়ে ব্যবসা করি। মাসোহারা দিতে হয়। মাসোহারার টাকা না দিলে চালান দেয়। ঘাটে ঘাটে পয়সা না দিলে এ ব্যবসা হয় না। জেলা জজ কোর্টের পিপি আকমল হোসেন জানান, পুলিশ মামলার চার্জশিট ও সাক্ষী দুর্বল দেওয়ায় আসামিরা আদালত থেকে বেরিয়ে আসছে। লালমনিরহাটের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মোহাম্মদ আতিকুল হক জানান, মাদকের বিরুদ্ধে সব সময় জিরো টলারেন্স নীতিতে আছি। কোনো মাদক ব্যবসায়ীর সঙ্গে পুলিশের কোনো সখ্য নেই।

 

 

সর্বশেষ খবর