রবিবার, ২৮ জানুয়ারি, ২০২৪ ০০:০০ টা

বাইকে চেপে তারা যান সীমান্ত এলাকায়

দিনাজপুর প্রতিনিধি

দিনাজপুরের নেশাখোর যুবক-তরুণরা মোটরবাইক নিয়ে ছুটে যান সীমান্ত এলাকার গ্রামগুলোতে। সেখানে মেলে তাদের পছন্দের নানান মাদকদ্রব্য। নেশার কাজ শেষ করে তারা আবার শহরে ফেরেন। এই নেশাখোরদের পছন্দের তালিকায় রয়েছে বুপ্রেনরফিন ইনজেকশন, টাফেন্টাডল, ফেনসিডিল, গাঁজা, ইয়াবা, চোলাই মদ। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা জানিয়েছেন, এক সময়ে দিনাজপুরের সীমান্ত এলাকাগুলো দিয়ে অবৈধভাবে পাচার হয়ে আসত গরু, লবণ, চিনি, সাইকেল ও কাপড়। কিন্তু এখন লাভ বেশি হওয়ায় এসব পণ্যের বদলে আসছে মাদক। যার বেশির ভাগই ফেনসিডিলসহ ইয়াবা, মদ ও নেশাজাতীয় ইনজেকশন। প্রতিদিন বিকালের পর থেকে শুরু হয় মাদকসেবীদের ছোটাছুটি। ফেনসিডিলের খোঁজে এরা মোটরবাইকে করে চলে যায় সীমান্ত ঘেঁষা এলাকাগুলোতে। রামসাগর, খানপুর, কমলপুর, মালিগ্রাম, বনতাড়া, চিরিরবন্দরের কারেন্টের হাট এলাকা মাদক বিক্রির কেন্দ্র বলে পরিচিত রয়েছে। মাদক সেবন শেষে এসব তরুণ-যুবকরা শহরের পুলহাট, বড়মাঠ, মহারাজার মোড়, কলেজ মোড়সহ নির্দিষ্ট কিছু জায়গার চায়ের দোকানে আড্ডায় বসে। দোকানির কাছে তাদের চাহিদা থাকে, বেশি চিনির চা। দিনাজপুর মাদ্রকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতর দিনাজপুরের তথ্যানুযায়ী, জেলার হিলিসহ প্রায় ২৫০ জায়গায় স্পট রয়েছে। এসব জায়গায় সীমান্ত পথে চোরাচালানে আসে ফেনসিডিল, বুপ্রেনরফিন ইনজেকশন, টাফেন্টাডল। আর বেশির ভাগ গাঁজা আসছে কুমিল্লা-ব্রাহ্মণবাড়িয়াসহ দক্ষিণাঞ্চল থেকে। সীমান্ত পার হয়ে আসা ফেনসিডিলের দাম বেশি হওয়ায় মাদকসেবীদের কাছে ‘গরিবের মাদক’ বলে পরিচিত বুপ্রেনরফিন ইনজেকশন, টাফেন্টাডল ট্যাবলেট ও গাঁজা। একটি ফেনসিডিলের দাম যেখানে ১ হাজার ৪০০ টাকা, সেখানে প্রতিটি টাফেন্টাডল ট্যাবলেটের দাম ৭০ টাকা। গাঁজার পুরিয়া ৫০ টাকা। সূত্র জানায়, দিনাজপুরের ১৩ উপজেলার বিভিন্ন স্পটে বুপ্রেনরফিন ইনজেকশন, টাফেন্টাডল, ফেনসিডিল, গাঁজা, ইয়াবা, চোলাই মদ ইত্যাদি কেনাবেচা হয়। এসব স্থানে মাদ্রকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতর দিনাজপুর, র‌্যাব-১৩ দিনাজপুর, পুলিশ, বিজিবি প্রতিনিয়তই তাদের মাদকবিরোধী অভিযান পরিচালনা করে আসছে। মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতর দিনাজপুরের উপপরিচালক মোহাম্মদ শহীদুল মান্নাফ কবীর জানান, মাদক কেনাবেচায় চোরাচালানিরা নেটওয়ার্ক পরিবর্তন করায় তাদের গতিপথ সহজে নির্ণয় করা কঠিন হচ্ছে। তারা মোবাইল ফোন ব্যবহার করলে ট্রাকিংয়ের মাধ্যমে জানা যেত, কিন্তু এখন তারা হোয়াটসঅ্যাপ ব্যবহার করছে। র‌্যাব-১৩ দিনাজপুরের ক্রাইম প্রিভেনশন কোম্পানি দিনাজপুর-১-এর কোম্পানি অধিনায়ক অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আবদুর রাজ্জাক খান জানান, দিনাজপুর জেলায় মাদকদ্রব্য বিক্রয়ের নির্দিষ্ট কোনো পয়েন্ট নেই। মাদক ক্রেতা-বিক্রেতারা বিভিন্ন সময়ে অবৈধভাবে বিভিন্ন সীমান্ত দিয়ে মাদক ফেনসিডিল নিয়ে আসে এবং বিভিন্ন জায়গায় সরবরাহ করে। চলতি জানুয়ারি মাসে অভিযান চালিয়ে ১৩ জনকে মাদকসহ গ্রেফতার করা হয়েছে। উদ্ধার করা হয় ৩২.৫ কেজি গাঁজা, ৮৯ বোতল ফেনসিডিল, ২০.৪৮৮ লিটার চোলাই মদ, ৯৩ বোতল বিদেশি মদ। জেলার হিলি ও ঘুঘুডাঙ্গা সীমান্ত দিয়ে ফেনসিডিল বেশি আসছে। দিনাজপুর জেলায় সবচেয়ে বেশি ফেনসিডিল বিক্রি হয় এবং ফেনসিডিলসহ গ্রেফতারের সংখ্যাও সবচেয়ে বেশি।

সর্বশেষ খবর