বুধবার, ৩১ জানুয়ারি, ২০২৪ ০০:০০ টা

দুর্নীতিতে বাংলাদেশ বিশ্বে দশম

টিআইয়ের তালিকায় দুই ধাপ অবনতি

নিজস্ব প্রতিবেদক

দুর্নীতিতে বাংলাদেশ বিশ্বে দশম

ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনালের তালিকায় বাংলাদেশ এখন দুর্নীতিতে বিশ্বে দশম। গত বছরের চেয়ে এবার দুই ধাপ অবনতি হয়েছে অবস্থানের। আন্তর্জাতিক সংস্থা ট্রান্সপরেন্সি ইন্টারন্যাশনালের বাংলাদেশ চ্যাপ্টার টিআইবি গতকাল ঢাকায় এক সংবাদ সম্মেলনে এই তথ্য জানায়। সিপিআই (দুর্নীতির ধারণা সূচক)-২০২৩ অনুযায়ী বিশ্বের সবচেয়ে দুর্নীতিগ্রস্ত দেশ সোমালিয়া, সবচেয়ে কম দুর্নীতিগ্রস্ত দেশ ডেনমার্ক। সংবাদ সম্মেলনে টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, সূচকের বিশ্লেষণ করলে ২০২৩ সালে বাংলাদেশের স্কোর ও অবস্থান গত এক যুগের মধ্যে সর্বনিম্ন।

দুর্র্নীতির ধারণা সূচক অনুযায়ী বাংলাদেশের অবস্থানকে হতাশাজনক উল্লেখ করে ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, ২০২২ সালের তথ্যের ভিত্তিতে প্রণীত দুর্নীতির ধারণা সূচক অনুযায়ী সবচেয়ে দুর্নীতিগ্রস্ত দেশের তালিকায় বাংলাদেশের অবস্থান ছিল ১২তম ও স্কোর ছিল ২৫। সিপিআই-২০২৩ অনুযায়ী এ বছর বাংলাদেশের স্কোর ২০২২-এর তুলনায় এক পয়েন্ট কমে ২৪। সমান স্কোর নিয়ে বাংলাদেশের সঙ্গে একই অবস্থানে রয়েছে আফ্রিকান রিপাবলিক, ইরান, লেবানন ও জিম্বাবুয়ে। নিম্নক্রম অনুযায়ী অবস্থানের দুই ধাপ অবনতি হয়ে ১৮০টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান বর্তমানে দশম এবং ঊর্ধ্বক্রম অনুযায়ী ১৪৯তম। তিনি বলেন, স্কোর ও অবস্থানের এই অবনমন প্রমাণ করে যে, দুর্নীতির বিরুদ্ধে সরকারের বিভিন্ন অঙ্গীকার ও দুর্নীতির বিরুদ্ধে ‘শূন্য সহনশীলতার’ ঘোষণা উল্লিখিত সময়কালে (নভেম্বর ২০২০-সেপ্টেম্বর ২০২৩) বাস্তবিক অর্থে কার্যকরভাবে প্রয়োগ হয়নি। বরং আইনের যথাযথ প্রয়োগ ও কাঠামোগত দুর্বলতায় বাংলাদেশের অবস্থানের আরও অবনতি হয়েছে। পাশাপাশি দক্ষিণ এশিয়ার ৮টি দেশের মধ্যে এবারও বাংলাদেশের অবস্থান ও স্কোর যথারীতি বিব্রতকরভাবে আফগানিস্তানের পর। নানা আইন করে দুর্নীতি দমন কমিশনের ক্ষমতা খর্ব করা হয়েছে বলে মন্তব্য করে ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, আমাদের এই সূচক আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত ও গ্রহণযোগ্য। সব সরকারই আমাদের প্রতিবেদনকে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত বলতে চেয়েছে। তাদের এসব বক্তব্যই প্রমাণ করে, আমরা যথার্থ প্রতিবেদন প্রকাশ করি। সরকারের উচিত এই প্রতিবেদন আমলে নিয়ে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া। সেটা না করে, তারা একচেটিয়াভাবে প্রত্যাখ্যান করে। তিনি বলেন, টিআইবির ভূমিকা হলো রাষ্ট্রকাঠামোতে দুর্নীতি প্রতিরোধে ও সুশাসনে সহায়ক হওয়া। আইনগত, নীতিগত, কৌশলগত, কাঠামোগত ও প্রাতিষ্ঠানিক অনেক গুরুত্বপূর্ণ সংস্কার আমরা করতে পেরেছি। কিন্তু আমাদের সীমারেখা এই পর্যন্তই। তিনি আরও বলেন, টিআইবির প্রতিবেদন দেশের দুই বৃহৎ রাজনৈতিক দল দ্বারাই প্রত্যাখ্যাত হয়েছে। তাদের এই প্রত্যাখ্যানকে আমি ‘রাজনৈতিক বাগাড়ম্বর’ হিসেবেই মনে করি। দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির পেছনে দুর্নীতির ভূমিকা আছে কি না জানতে চাইলে ইফতেখারুজ্জামান বলেন, সরাসরি না থাকলেও পরোক্ষভাবে ভূমিকা থাকতে পারে। দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণের দায়িত্ব যাদের ওপর তারা যদি তাদের ভূমিকা সিন্ডিকেটের কারণে পালন করতে না পারে তবে নীতিকাঠামো দখলজনিত কারণে দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি রোধ করা সম্ভব হয় না। তিনি বলেন, বাংলাদেশের আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন হয়েছে সেটি আমরা স্বীকার করি ও এটি নিয়ে গর্ববোধ করি। আমরা যদি দুর্নীতি আরও কার্যকরভাবে নিয়ন্ত্রণ করতে পারতাম উন্নয়ন আরও বেশি হারে হতে পারত এবং এই উন্নয়ন জনগণের জন্য আরও অর্থবহ হতে পারত।

প্রতিবেদন অনুসারে, ১০০ স্কোরের মধ্যে ৯০ পেয়ে সবচেয়ে কম দুর্নীতিগ্রস্ত দেশ হিসেবে তালিকার শীর্ষে আছে ডেনমার্ক। ৮৭ পেয়ে দ্বিতীয় স্থানে ফিনল্যান্ড এবং ৮৫ স্কোর পেয়ে তৃতীয় অবস্থানে রয়েছে নিউজিল্যান্ড। সূচকে সবচেয়ে কম ১১ স্কোর পেয়ে দুর্নীতিগ্রস্ত দেশের তালিকায় শীর্ষ অবস্থানে রয়েছে সোমালিয়া। ১৩ স্কোর পেয়ে নিম্নক্রম অনুযায়ী যৌথভাবে দ্বিতীয় হয়েছে দক্ষিণ সুদান, সিরিয়া ও ভেনেজুয়েলা। এ ছাড়া ১৬ স্কোর নিয়ে তালিকার তৃতীয় স্থানে রয়েছে ইয়েমেন।

১৯৯৫ সাল থেকে বেসরকারি সংস্থা ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল প্রতি বছর এই সূচক প্রকাশ করে আসছে। ২০০১ সালে বাংলাদেশ প্রথম এতে তালিকাভুক্ত হয়।

সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন টিআইবির চেয়ারপারসন সুলতানা কামাল, টিআইবির উপদেষ্টা (নির্বাহী ব্যবস্থাপনা) অধ্যাপক সুমাইয়া খায়ের।

সর্বশেষ খবর