বৃহস্পতিবার, ১ ফেব্রুয়ারি, ২০২৪ ০০:০০ টা
এম এম আকাশ

অর্থ পাচারে কঠোর শাস্তির উদাহরণ কম

মানিক মুনতাসির

অর্থ পাচারে কঠোর শাস্তির উদাহরণ কম

অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক ড. এম এম আকাশ বলেছেন, ডলার সংকটের মূল কারণ চাহিদার চেয়ে জোগান কম। এ ছাড়া ডলার পাচারও হচ্ছে। আবার পাচারকারীদের কঠোর শাস্তির আওতায় আনার উদাহরণও কম। এক পক্ষকে কঠোর শাস্তি দেওয়া হলেও অন্য পক্ষের বিরুদ্ধে তা নেওয়া হয় না। এ রকম পক্ষপাতিত্বপূর্ণ আইনের প্রয়োগ কখনো এ ধরনের ক্রাইমের প্রতিনিধিত্ব করতে পারবে না। তিনি আরও বলেন, ব্যাংক ও আর্থিক খাতের বিশৃঙ্খলার কারণ ধনী ব্যক্তি খাতের স্বেচ্ছাচারকে কঠোরভাবে দমন না করে তাদের কাছে জিম্মি হয়ে পড়া। বাংলাদেশ প্রতিদিনকে দেওয়া এক লিখিত সাক্ষাৎকারে তিনি এসব কথা বলেন।

বাংলাদেশ প্রতিদিন : ডলার সংকটের সমাধান কেন আসছে না?

এম এম আকাশ : এর প্রত্যক্ষ কারণ ডলারের অভ্যন্তরীণ সরবরাহ ডলারের চাহিদার চেয়ে কম হওয়া। পরোক্ষ কারণ ডলার দেশের বাইরে পাচার হয়ে যাওয়া। আমদানির জন্য আগের তুলনায় বেশি ডলার লাগে। এবং হিসাববহির্ভূত ডলার হুন্ডির মাধ্যমে আসা-যাওয়া করে। দূরবর্তী কারণ হলো সরকারের চৈতন্যের অভাব এবং উপযুক্ত সময়ে উপযুক্ত কাজ না করে চলা। উন্নয়নের বা রপ্তানির সুসময় দেখে দীর্ঘকাল আত্মতুষ্টিতে ভোগা। মুদ্রাস্ফীতির সঙ্গে তাল মিলিয়ে ডলারের অবমূল্যায়ন করতে পারলে হঠাৎ করে এত বেশি অবমূল্যায়ন এখন করতে হতো না।

বাংলাদেশ প্রতিদিন : বৈদেশিক ঋণ পরিশোধের চাপ নিতে আমরা কতটা প্রস্তুত।

এম এম আকাশ : আমার মনে হয় এটা নির্ভর করে আমাদের দর কষাকষির ক্ষমতা এবং বৈদেশিক বিনিয়োগ আকর্ষণের ওপর। আমরা যদি বিশ্বব্যাংক, আইএমএফ ও পশ্চিমা উন্নয়ন সহযোগীদের সঙ্গে ভালো দর কষাকাষি করতে পারি এবং জাপান, চীন, ভারত, রাশিয়ার সঙ্গে সহযোগিতামূলক সম্পর্ক অব্যাহত রাখতে পারি তাহলে এ ক্ষেত্রে সমস্যা হওয়ার কথা নয়। শ্রীলঙ্কার মতো দেউলিয়া হওয়ার সম্ভাবনা আমি দেখি না। তবে এখানেও আত্মতুষ্টির কোনো অবকাশ নেই।

বাংলাদেশ প্রতিদিন : বাজেট বাস্তবায়ন ও জিডিপি টার্গেট পূরণ কতখানি সম্ভব বলে মনে করেন?

এম এম আকাশ : প্রবৃদ্ধির হার কমিয়ে যে টার্গেট সরকার নিয়েছে তা অর্জন করা অসম্ভব নয়- যদি (ক) সুশাসন প্রতিষ্ঠা করা যায়। বিশেষত আর্থিক খাতে এবং মেগা প্রকল্পগুলোর আয়-ব্যয়ের দুর্নীতি ও স্বজনপ্রীতির ক্ষেত্রে সুশাসন কায়েম করা যায়। তবে সরকার বাজেট বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে তার লক্ষ্যে পৌঁছতে পারবে বলে আমি মনে করি। (খ) সে জন্য রাষ্ট্রযন্ত্র ও শাসক দলের নেতৃত্বকে শুদ্ধি অভিযানে সফল হতে হবে।

বাংলাদেশ প্রতিদিন : ব্যাংক ও আর্থিক খাতে শৃঙ্খলা ফেরানোর কার্যকর উদ্যোগ নতুন সরকার কতটা নিতে পারবে বলে আপনার মনে হয়।

এম এম আকাশ : এটা অতীতে সম্ভব হয়নি। তিনটি কর্র্তৃপক্ষ সঠিকভাবে দায়িত্ব পালন করেনি। প্রথমত বাংলাদেশ ব্যাংক ব্যাংকগুলোকে সঠিকভাবে তদারকি ও নিয়ন্ত্রণ করেনি। দ্বিতীয়ত অর্থমন্ত্রণালয় বাংলাদেশ ব্যাংককে বিশেষ বিশেষ গ্রাহকদের বিশেষ ছাড় দিতে বাংলাদেশ ব্যাংক ও সরকারি ব্যাংকগুলোকে বাধ্য করেছে। তৃতীয়ত সরকার বৃহৎ ধনী ব্যক্তি খাতের স্বেচ্ছাচারকে কঠোরভাবে দমন না করে তাদের কাছে জিম্মি হয়ে পড়েছে। তৃতীয় কারণটি দূর করা কঠিন। প্রথম দুটি আইএমএফ ও আসন্ন সংকটের চাপে কিছুটা সংস্কার শুরু হয়েছে। কিন্তু যথার্থ ও আন্তরিক অঙ্গীকার ছাড়া (শীর্ষ নেতৃত্বের) এটা সম্ভব নয় বলে আমার ধারণা।

বাংলাদেশ প্রতিদিন : রপ্তানি আয় রেমিট্যান্স বৃদ্ধিই কি ডলার সংকট মেটানোর একমাত্র সমাধান।

এম এম আকাশ : না। এর বহুমাত্রিক সমাধান প্রচেষ্টা নেওয়ার সুযোগ আছে। যেমন-(ক) জাতীয় স্বার্থ বজায় রেখে বিদেশি ঋণ ও বিদেশি বিনিয়োগের ব্যবস্থা করা। এগুলোর উৎসকে বহুমুখীকরণ করা। (খ) ডলার পাচার কমানো। আমদানি-রপ্তানির দাম কারসাজি করে যে ডলার পাচার হয় তা ঠেকানোর জন্য উপযুক্ত আইন প্রয়োগ ও বাস্তবায়নের ব্যবস্থা করা। (গ) বিকল্প মুদ্রা ব্যবহার করে বৈদেশিক বাণিজ্য নির্বাহ করা। (ঘ) দেশের ভিতরে রপ্তানিমুখী ও আমদানি প্রতিস্থাপক উদ্যোকগুলোকে সমতাভিত্তিক অর্থনৈতিক প্রণোদনা প্রদান।

বাংলাদেশ প্রতিদিন : পাচার বন্ধে কি করা উচিত বলে আপনি মনে করেন?

এম এম আকাশ : আমাদের প্রধানমন্ত্রী প্রায়ই দুর্নীতি প্রসঙ্গে জিরো টলারেন্স স্লোগানটি উল্লেখ করেন। কিন্তু পাচারকারী কাউকে ধরে কঠোর শাস্তির উদাহরণ কম দেখা যায়। কোকো বা তারেক যারা রাজনৈতিকভাবে সরকারবিরোধী তাদের বিরুদ্ধে কঠোর শাস্তির উদাহরণ রয়েছে। কিন্তু নিজস্ব দলীয় কারও বিরুদ্ধে বা আরও বিপুল অর্থ পাচারের অভিযোগে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে এরূপ কঠোর শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণের নজির দেখা যায় না। পক্ষপাতিত্বপূর্ণ আইনের প্রয়োগ কখনো এ ধরনের ক্রাইমের প্রতিনিধিত্ব করতে পারবে না।

বাংলাদেশ প্রতিদিন : দেশের অর্থনীতির গতি প্রকৃতি এই মুহূর্তে কোন পথে আছে বলে মনে করেন?

এম এম আকাশ : দ্রব্যমূল্য বেকারত্ব প্রশমিত করতে না পারলে অর্থনৈতিক সংকট অচিরেই রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতার জন্ম দেবে তখন অর্থনৈতিক অবস্থা সামাল দেওয়া খুবই কঠিন হয়ে পড়বে।

বাংলাদেশ প্রতিদিন : আপনাকে ধন্যবাদ।

এম এম আকাশ : আপনাকেও ধন্যবাদ।

 

সর্বশেষ খবর