শনিবার, ৩ ফেব্রুয়ারি, ২০২৪ ০০:০০ টা

রাখাইনে তুমুল গোলাগুলি কপ্টার হামলা

কেঁপে উঠছে বাংলাদেশের সীমান্ত এলাকা, রাতে ঘরে থাকছেন না বান্দরবানের বাসিন্দারা

প্রতিদিন ডেস্ক

রাখাইনে তুমুল গোলাগুলি কপ্টার হামলা

মিয়ানমারের রাখাইনে তুমুল গোলাগুলি চলছে। এই সঙ্গে মিয়ানমার বাহিনী কপ্টার ও জঙ্গি বিমান থেকে বোমা বর্ষণ করে চলেছে। কখনো কখনো হেলিকপ্টারগুলো বাংলাদেশ সীমান্তের কাছাকাছিও চলে আসছে। স্বাধীনতাকামী গোষ্ঠীর সঙ্গে এ গোলাগুলি ও রকেটসহ বোমাবর্ষণের সময় বাংলাদেশের সীমান্ত এলাকা কেঁপে কেঁপে উঠছে বলে স্থানীয় বাসিন্দারা জানাচ্ছেন। তারা ভয়ে আতঙ্কে রাতের বেলা বাড়িঘর ছেড়ে নিরাপদ এলাকায় অবস্থান করতে বাধ্য হচ্ছেন। স্থানীয় সূত্রগুলো জানিয়েছে, বান্দরবানের তুমব্রু সীমান্তের ওপারে মিয়ানমারের অভ্যন্তরে চলমান সংঘর্ষে গোলাগুলি ও ভারী অস্ত্রের ব্যবহারে কেঁপে উঠছে বাংলাদেশ সীমান্ত এলাকা। গত বৃহস্পতিবার রাতভর ব্যাপক গোলাগুলি ও মর্টারশেল নিক্ষেপের শব্দ শোনা গেছে। ঘুমধুম ইউনিয়নের তুমব্রু সীমান্তের কাছাকাছি মিয়ানমারের হেলিকপ্টার মহড়া দিচ্ছে সীমান্ত এলাকাগুলোতে। এ ঘটনায় নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার তুমব্রু, বাইশফারি, ফাত্রাঝিরি, রেজু আমতলি, গর্জনিয়াসহ আশপাশের সীমান্ত লাগোয়া গ্রামগুলোর মানুষের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে। তারা রাতের বেলা বাড়িঘর ছেড়ে দূরের পাকা বাড়িঘর এবং নিরাপদ জায়গায় অবস্থান করতে বাধ্য হচ্ছেন। প্রতিদিনই দিনের বেলা বাড়িঘরে কাজকর্ম করে তারা রাতে অন্যত্র থাকছেন। কারণ রাতের বেলায়ই সবচেয়ে বেশি গোলাগুলির ঘটনা ঘটছে।

একটি সূত্র জানিয়েছে, মিয়ানমারের অভ্যন্তরে সশস্ত্র সংগঠনগুলোর সঙ্গে মিয়ানমার সরকারি বাহিনীর চলমান সংঘাত আরও জোরালো হয়ে উঠেছে। মাঝেমধ্যেই গুলি ও মর্টারশেলের গোলা এসে পড়ছে বাংলাদেশের সীমান্ত এলাকার গ্রামগুলোতে। গত বুধবার মধ্যরাত ও বৃহস্পতিবার ভোর রাতে কয়েক দফায় দীর্ঘক্ষণ গোলাগুলি ও ভারী অস্ত্র ব্যবহারের শব্দ শোনা গেছে। গতকাল দিনে অবশ্য খুব বেশি গোলাগুলির শব্দ পাওয়া যায়নি। স্থানীয় বাসিন্দা নূর মোহাম্মদ, আবদুর রশীদ বিভিন্ন গণমাধ্যমকে বলেন, বৃহস্পতিবার সকাল সাড়ে ১০টার দিকে মিয়ানমারের কয়েকটি হেলিকপ্টার তুমব্রু সীমান্ত এলাকায় মহড়া দিয়েছে। ঘুমধুম ইউনিয়নের সীমান্তবর্তী তুমব্রু বাজার থেকে হেলিকপ্টার উড়তে দেখা গেছে। ভারী অস্ত্রের কম্পনে সীমান্তবর্তী বাসিন্দাদের মাটির তৈরি কয়েকটি ঘরে ফাটল ধরেছে।

স্থানীয় সূত্রগুলো বলেছে, গতকাল মিয়ানমারের সামরিক হেলিকপ্টার সীমান্ত বরাবর টহল দিয়েছে। এ ঘটনায় সীমান্তের এপারে তুমব্রু, কোনারপাড়া, বাইশফাঁড়ি, ফাত্রাঝিরি, রেজু আমতলী, গর্জনবনিয়াসহ আশপাশের কয়েকটি গ্রামে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। ঘুমধুম ইউনিয়নের চেয়ারম্যান জাহাঙ্গীর আজিজ বলেন, প্রতিদিনই গোলাগুলির শব্দে কেঁপে উঠছে সীমান্ত এলাকা। ফলে সীমান্তের অনেক মানুষ ঘর ছেড়ে আত্মীয়-স্বজনের বাড়িতে আশ্রয় নিয়েছেন। শুনেছি কিছু রোহিঙ্গা সীমান্তের কাছাকাছি অবস্থান করছে। বিষয়টি আমরা সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছি। আরেকটি সূত্র জানিয়েছে, মিয়ানমারের মংডু ও বলিবাজার থেকে পালিয়ে বাংলাদেশের সীমানার কাছাকাছি অবস্থান করছে রোহিঙ্গারা। আবার কিছু রোহিঙ্গা ডিঙি নৌকা করে নাফ নদীতে অবস্থান করছে। মিয়ানমার সীমান্তরক্ষী বাহিনী (বিজিপি) রোহিঙ্গাদের কোনো বাধা দিচ্ছে না। এ বিষয়ে বিজিবি ৩৪ ব্যাটালিয়ানের অধিনায়ক জোন কমান্ডার লে. কর্নেল মোহাম্মদ সাইফুল ইসলাম চৌধুরী জানান, রোহিঙ্গাদের সম্ভাব্য অনুপ্রবেশ নিয়ে সতর্ক অবস্থানে আছে বিজিবি। সীমান্ত এলাকায় নজরদারি বাড়ানো হয়েছে। কোনো রোহিঙ্গাকে প্রবেশ করতে দেওয়া হবে না। এদিকে জাতিসংঘ থেকে বলা হয়েছে, মিয়ানমারের রাখাইনে বিদ্রোহী গোষ্ঠীর সঙ্গে জান্তা বাহিনীর তুমুল সংঘর্ষের মধ্যে প্রাণ বাঁচাতে রাজ্য ছেড়ে পালাচ্ছেন হাজারো মানুষ। নিরাপদ আশ্রয়ের খোঁজে সাগরপথে ঢল নেমেছে রোহিঙ্গাদের। এ অবস্থায় গত বৃহস্পতিবার নতুন করে ১৩০ জনের বেশি রোহিঙ্গা পৌঁছেছে ইন্দোনেশিয়ায়। সূত্র জানায়, রাখাইন রাজ্যে জান্তা বাহিনীর সঙ্গে বিদ্রোহী আরাকান আর্মির সংঘাতের মধ্যে পড়ে প্রাণহানির পাশাপাশি বাড়ছে বাস্তুচ্যুত মানুষের সংখ্যা। রাখাইনে থাকা বাকি রোহিঙ্গাদের সীমান্ত পেরিয়ে অনুপ্রবেশের শঙ্কা বেড়েছে থাইল্যান্ড, মালয়েশিয়া ও ইন্দোনেশিয়ায়। ইউএনএইচসিআরের তথ্যানুযায়ী, গেল চার মাসে এ পর্যন্ত প্রায় ২ হাজার রোহিঙ্গা ইন্দোনেশিয়ার আচেহ প্রদেশে অনুপ্রবেশের ঘটনা ঘটেছে। সাধারণত নভেম্বর থেকে এপ্রিল পর্যন্ত সমুদ্র শান্ত থাকায় এই সময়ে মিয়ানমার থেকে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে সমুদ্রপথে মালয়েশিয়া, থাইল্যান্ড এবং ইন্দোনেশিয়ার উদ্দেশ্যে যাত্রা করে রোহিঙ্গারা। মিয়ানমারে চলমান সেনাবাহিনী ও বিদ্রোহী গোষ্ঠীর সংঘর্ষের পর চলতি মৌসুমে সেই চেষ্টা আরও বেড়েছে। বান্দরবান থেকে আমাদের প্রতিনিধি জানিয়েছেন, বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলা-সংলগ্ন বাংলাদেশ-মিয়ানমার সীমান্তের ওপারে গতকাল ভোরে গোলাগুলির ঘটনা ঘটলেও দিনভর এপার থেকে তেমন গুলির শব্দ শোনা যায়নি।

সর্বশেষ খবর