শনিবার, ৩ ফেব্রুয়ারি, ২০২৪ ০০:০০ টা

ফেরত যাচ্ছে হজ কোটা

♦ দ্বিগুণ বিমান ভাড়ায় যেতে পারছেন না আগ্রহীরা ♦ ৬ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত নিবন্ধন করা যাবে

শফিকুল ইসলাম সোহাগ

হজ নিবন্ধনের সময় তিন দফা বাড়িয়েও কাক্সিক্ষত যাত্রী পাওয়া যায়নি। অবশেষে বাড়ানো হলো চতুর্থ দফা। ৬ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত নিবন্ধন করা যাবে। গতকাল ধর্ম মন্ত্রণালয় এ তথ্য জানায়। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, দ্বিগুণ বিমান ভাড়ায় যেতে পারছেন না আগ্রহীরা। তিন এয়ারলাইনসে পরিবহনের কারণে যে সংকটের সৃষ্টি হয়েছে, তার সমাধান হয়নি। নিবন্ধনের জন্য সময় বাড়ানোর পরও কোটা পূরণ সম্ভব হবে না বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। ফলে ফেরত যাচ্ছে হজ কোটা। এবার বাংলাদেশ থেকে ১ লাখ ২৭ হাজার ১৯৮ জন হজ করতে পারবেন। সৌদি আরবের সঙ্গে হজ চুক্তি অনুযায়ী এখনো অনেক আসন ফাঁকা রয়েছে। ‘

গতকাল সন্ধ্যা সোয়া ৬টার দিকে হজ পোর্টাল থেকে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী, ৭৯ হাজার ৮৬৩ জন হজযাত্রী নিবন্ধন সম্পন্ন করেছেন। এর মধ্যে সরকারি ব্যবস্থাপনায় ৪ হাজার ১৬৫ জন ও বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় ৭৫ হাজার ৬৯৭ জন। সে অনুযায়ী, এখনো ৪৭ হাজার ৩৭৭ জন নিবন্ধন করেননি।

জানা গেছে, চলতি ২০২৪ সালে সরকারি ব্যবস্থাপনায় হজে যাওয়ার দুটি প্যাকেজ নির্ধারণ করা হয়েছে। এর মধ্যে সর্বনিম্ন প্যাকেজের মূল্য ৫ লাখ ৭৮ হাজার ৮৪০ টাকা। বিশেষ প্যাকেজের মূল্য ৯ লাখ ৩৬ হাজার ৩২০ টাকা। বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় দুটি প্যাকেজের মূল্য যথাক্রমে ৫ লাখ ৮৯ হাজার ৮০০ টাকা এবং ৮ লাখ ২৮ হাজার ৮১৮ টাকা। যদিও গত বছরের চেয়ে এ বছর সরকারি ও বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় প্রায় ৯০ হাজার টাকা কমানো হয়েছে ব্যয়। তবুও বর্তমান হজ প্যাকেজের মূল্যকে অনেক বেশি মনে করছেন হজে যেতে আগ্রহীরা।

জানা যায়, এর আগে সবশেষ তৃতীয় দফা ২৫ জানুয়ারি থেকে ১ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত সময় বাড়িয়েছিল ধর্ম মন্ত্রণালয়। বাধ্যবাধকতা থাকা সত্ত্বেও হজযাত্রী ও এজেন্সিগুলোর অনুরোধে সময়সীমা বাড়ানো হয়েছে বলে জানিয়েছিল মন্ত্রণালয়। গত বছরের ১৫ নভেম্বর থেকে এবারের হজ নিবন্ধন শুরু হয় এবং সময়সীমা ছিল গত ১০ ডিসেম্বর পর্যন্ত। পরে হজ নিবন্ধনের সময় ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত বাড়ানো হয়। এরপর দ্বিতীয় দফায় ১৮ জানুয়ারি পর্যন্ত নিবন্ধনের সময় বাড়ানো হয়। চাঁদ দেখা সাপেক্ষে আগামী ১৬ জুন (১৪৪৫ হিজরি সনের ৯ জিলহজ) পবিত্র হজ অনুষ্ঠিত হবে। চলতি বছর হজ পালনে সৌদি সরকারের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় চুক্তি হয় গত ৮ জানুয়ারি।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বারবার সময় বৃদ্ধির পরও মূলত দ্বিগুণের বেশি বিমান ভাড়া আর প্যাকেজের অস্বাভাবিক উচ্চমূল্যের কারণে সরকারি ও বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় হজ গমনেচ্ছুদের নিবন্ধনে ভাটা পড়েছে।

হজ এজেন্সিগুলো বলছে, প্যাকেজে বাড়ি ভাড়া, বিমান ভাড়া, সৌদি আরবে যাতায়াত খরচ মাত্রাতিরিক্ত ধার্য করা হয়েছে। সেই সঙ্গে বিভিন্ন ট্যাক্সও অস্বাভাবিক। নির্ধারিত এয়ারলাইনস ছাড়া হজযাত্রী পরিবহনে নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। বাংলাদেশ বিমান, সাউদিয়া এয়ারলাইনস এবং নাস এয়ার ছাড়া অন্য কোনো উড়োজাহাজে হজে যাওয়া-আসা করার সুযোগ বন্ধ রাখা হয়েছে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, একটি চিহ্নিত সিন্ডিকেট হজযাত্রীদের জিম্মি করে অতিরিক্ত অর্থ আদায়ের জন্য থার্ড ক্যারিয়ারের সুযোগ বন্ধ করেছে। সিন্ডিকেটমুক্ত হলে ৫ লাখ টাকার মধ্যে কোরবানিসহ হজ করা সম্ভব।

এজেন্সি মালিকরা জানান, বর্তমানে দেশে অর্থনৈতিক সংকট চলছে। নিত্যপণ্যের আকাশচুম্বী দাম। সংসার চালাতে সাধারণ মানুষের হিমশিম অবস্থা। শিক্ষা-চিকিৎসাসহ সব খাতে খরচ বেড়েছে কয়েকগুণ। হজের জন্য যারা অল্প অল্প করে দীর্ঘদিন টাকা জমিয়েছেন তাদেরও বাজেটে টানাটানি। সাধারণ মানুষ বিশেষ করে মধ্যবিত্তরা এবার হজের প্রতি আগ্রহ কমিয়ে দিয়েছেন। তাদের অনেকেই হজের পরিবর্তে অল্প টাকায় ওমরাহর দিকে ঝুঁকছেন। দেশের অর্থনীতির চাকা সচল হলে ফের হজযাত্রীর সংখ্যা বাড়তে পারে বলে মনে করছেন তারা।

হজ এজেন্সিজ অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (হাব) সভাপতি এম শাহাদত হোসাইন তসলিম জানান, জাতীয় নির্বাচন, করোনাসহ নানা কারণে হজে যাবেন কি না অনেকে মনস্থির করতে পারেননি। এ ছাড়া অনেকে ওমরাহ হজে গুরুত্ব দিচ্ছেন। তসলিম জানান, সময় বেড়েছে। আশা করছি আরও ১০ হাজার নিবন্ধন বাড়বে।

ধর্ম মন্ত্রণালয় চলতি বছরের হজের খরচের যে হিসাব দিয়েছে, তাতে দেখা যাচ্ছে বাড়ি ভাড়া, বিমান টিকিট ও সার্ভিস চার্জ কমেছে আগের বছরের চেয়ে। এ বছর বিমান ভাড়া ১ লাখ ৯৪ হাজার ৮০০ টাকা, যা ২০২৩ সালে ছিল ১ লাখ ৯৭ হাজার ৭৯৭ টাকা। এবার মক্কা ও মদিনায় বাড়ি ভাড়া ১ লাখ ৬৯ হাজার ৪১০ টাকা। এই খাতে গত বছর হাজিদের ২ লাখ ৪ হাজার ৪৪৫ টাকা ব্যয় করতে হয়েছিল। ২০২৩ সালে তাঁবু, ম্যাট্রেস, বিছানা, চাদর, বালিশ কম্বল, খাবার সরবরাহে মোয়াল্লেম সেবার সার্ভিস চার্জ ১ লাখ ৬০ হাজার ৬৩০ টাকা। এবার এই সার্ভিস চার্জ ও অন্যান্য চার্জের মোট অঙ্ক ১ লাখ ২৬ হাজার ৩৮৪ টাকা। এর বাইরে পরিবহন ব্যয় বা ভিসা ফির মতো খরচগুলো প্রায় অপরিবর্তিতই রয়েছে। জানা যায়, পার্শ্ববর্তী দেশগুলোয় হজের খরচ তুলনামূলক অনেক কম। ভারত, পাকিস্তান, শ্রীলঙ্কা, মালয়েশিয়া, ইন্দোনেশিয়াসহ কোনো দেশেই হজ করতে এমন উচ্চমূল্য দিতে হয় না বলে বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে।

এই রকম আরও টপিক

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর