শনিবার, ৩ ফেব্রুয়ারি, ২০২৪ ০০:০০ টা

সাত বছরে ২১৯ কোটি টাকা ব্যয়, প্রকল্পের অগ্রগতি শূন্য

রুকনুজ্জামান অঞ্জন

সরকারের একটি প্রকল্পে ২১৯ কোটি টাকা ব্যয়ের পর জানা গেল এর বাস্তব অগ্রগতি শূন্য। ২০১৫ সালের জুলাই থেকে ২০২২-এর ডিসেম্বর পর্যন্ত সাত বছর সময়ে এ অর্থ ব্যয় হয়েছে, যা মোট ব্যয়ের অর্ধেকেরও বেশি। শুধু তাই নয়, দুই দফা মেয়াদ বাড়ানোর পর ১৩৩ কোটি টাকার প্রকল্পটির ব্যয় বেড়ে ৪২৮ কোটি টাকায় উন্নীত হয়। তাতেও কাজ না হওয়ায় সময় ও ব্যয় দুটোই বাড়িয়ে তৃতীয় সংশোধনী প্রস্তাব দেওয়া হয়। ওই সংশোধনীতে একটি নলকূপ স্থাপনে খরচ ধরা হয় প্রায় আড়াই কোটি টাকা। খাল কাটায় খরচ ধরা হয় ২০ কোটি টাকার বেশি। খোদ পরিকল্পনা কমিশন এ ব্যয়কে ‘অত্যধিক ও অতিরিক্ত’ অভিহিত করে যৌক্তিক পর্যায়ে কমিয়ে আনার পরামর্শ দিয়েছে। বলা হচ্ছে, বিসিক প্লাস্টিক শিল্পনগরী শীর্ষক প্রকল্প সম্পর্কে।

পুরান ঢাকায় অপরিকল্পিতভাবে গড়ে ওঠা প্লাস্টিক শিল্প-কারখানাগুলো পাশের জেলা মুন্সীগঞ্জের সিরাজদিখানে স্থানান্তরের লক্ষ্যে ২০১৫ সালে এ প্রকল্পটি গ্রহণ করে শিল্প মন্ত্রণালয়। প্রকল্পটি বাস্তবায়নকারী কর্তৃপক্ষ হচ্ছে বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুটিরশিল্প করপোরেশন (বিসিক)। প্রথম দফায় ১৩৩ কোটি টাকা প্রাক্কলিত ব্যয়ে প্রকল্পটি ২০১৫ সালের জুলাইয়ে অনুমোদিত হয়, যেটি ২০১৮ সালে বাস্তবায়নের মেয়াদ ছিল। কয়েক দফা সংশোধন করে ব্যয় ও বাস্তবায়ন মেয়াদকাল বাড়ানোর পরও প্রকল্পটির কাজই শুরু করা যায়নি। অথচ জমি অধিগ্রহণ বাবদ তহবিল থেকে ২১৯ কোটি টাকা চলে গেছে। এ অবস্থায় ৫১২ কোটি টাকা বাড়তি ব্যয় ধরে প্রকল্পটির তৃতীয় সংশোধনীর প্রস্তাব করা হয়। সর্বশেষ তথ্য হচ্ছে, বিগত সরকারের শেষ একনেক সভায় বাড়তি ব্যয় ধরেই আলোচ্য প্রকল্পটির তৃতীয় সংশোধনী প্রস্তাব অনুমোদিত হয়েছে। ২০২৫ সালের ডিসেম্বরের মধ্যে এটি বাস্তবায়ন করতে বলা হয়েছে। প্রস্তাবিত এলাকায় জমি না পাওয়ার কারণে পার্শ্ববর্তী নতুন এলাকায় প্রকল্পটি স্থানান্তর করা হচ্ছে। দ্বিতীয় সংশোধনীতে প্রকল্পটির মোট ব্যয় ছিল ৪২৮ কোটি টাকা। এবার সেটি বাড়িয়ে ৫০৯ কোটি টাকা করা হয়েছে। প্রকল্পের প্রায় ৫১ শতাংশ অর্থ ব্যয়ের পরও ‘বাস্তব অগ্রগতি শূন্য’ হওয়ার কারণ জানতে চাইলে প্রকল্প পরিচালক মো. আনিসউদ্দিন বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, আগের ডিপিপিতে মুন্সীগঞ্জ জেলার সিরাজদিখান উপজেলার বড়বর্ত্তা মৌজায় প্রকল্পটি বাস্তবায়নের সিদ্ধান্ত ছিল। ওই এলাকার ভূমি অধিগ্রহণ বাবদ ২১৮ কোটি ১৭ লাখ টাকা জেলা প্রশাসক বরাবর প্রদান করা হয়। তবে এলাকাটি ঘনবসতিপূর্ণ হওয়ায় এবং স্থানীয়দের বাধার কারণে জেলা প্রশাসক প্রকল্পের জমি বুঝিয়ে দিতে পারেননি। প্রকল্পের জমি বুঝে না পাওয়ার কারণে পূর্ত কাজ শুরু করা যায়নি। এ কারণে জমি কেনা বাবদ অর্থ দেওয়া হলেও প্রকৃত অর্থে জমি না পাওয়ার কারণেই প্রকল্পের কাজ শুরু করা যায়নি। এখন স্থানান্তরিত এলাকায় জমি অধিগ্রহণ করে দ্রুত কাজ শুরু করা যাবে বলে আশা প্রকাশ করেন প্রকল্প কর্মকর্তা।

উপকরণে অযৌক্তিক ব্যয়, বাদ গেল গুরুত্বপূর্ণ ফায়ার স্টেশন : দ্বিতীয় দফা সংশোধন অনুযায়ী প্রকল্পটির মেয়াদ ছিল ২০২২ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত। মেয়াদ শেষেও যখন কোনো কাজ শুরুই করা গেল না, তখন তৃতীয় সংশোধনীর প্রস্তাব দিয়ে পরিকল্পনা কমিশনে ডিপিপি পাঠানো হয়। গত ২৩ অক্টোবর প্রস্তাবিত ডিপিপির ওপর মূল্যায়ন কমিটি (পিইসি)-এর সভা হয়। ওই সভার কার্যবিবরণীর তথ্যে দেখা গেছে, একটি নলকূপ স্থাপনে ব্যয় ৪৪ লাখ টাকা বাড়িয়ে ২ কোটি ৫২ লাখ করা হয়েছে। এ ছাড়া পানি সরবরাহ লাইন স্থাপনে ৪ কোটি ৩৭ লাখ টাকা, বৈদ্যুতিক লাইন ও সাবস্টেশন স্থাপনে ৩৯ কোটি ৭৪ লাখ টাকা, লেক নির্মাণে ২০ কোটি ৩৩ লাখ টাকা এবং প্রকল্পটির মেইনগেট নির্মাণে ৭৮ লাখ টাকা ব্যয় ধরা হয়েছে। এসব ব্যয় অত্যধিক এবং অতিরিক্ত বলে বিবেচিত হয়েছে পরিকল্পনা কমিশনের কাছে। শুধু তাই নয়, অতিরিক্ত এসব ব্যয় সামাল দিতে প্রকল্পের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা ফায়ার স্টেশন বাদ দেওয়া হয়েছে। এ প্রসঙ্গে প্রকল্প পরিচালক বলেন, প্রতিটি উপাদানের ব্যয় নির্ধারণ হয়েছে পিডব্লিউডির স্বীকৃত রেট অনুযায়ী। ২০১৮ সালে যে রেট ধরে ব্যয় নির্ধারণ হয়েছিল, ২০২২ সালে এসে তা বেড়েছে। ফলে কিছু উপাদানে ব্যয়ও বেড়েছে। এরপরও যেসব ব্যয় নিয়ে পরিকল্পনা কমিশনের আপত্তি ছিল, সেগুলো কমানো হয়েছে। কিন্তু প্লাস্টিক শিল্পনগরীর মতো গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনায় থাকছে না কোনো ফায়ার স্টেশন! পুরো উপাদানটিই বাদ গেছে সংশোধিত প্রকল্প থেকে! পিডি জানান, বর্তমানে স্থান বদল করে যেখানে প্রকল্পটি হবে-তার ১ কিলোমিটার দূরে বিসিক কেমিক্যাল পল্লী রয়েছে। সেখানে থাকছে বিশেষায়িত ফায়ার স্টেশন। সে কারণে এবং ব্যয় কমাতে আলোচ্য প্রকল্প থেকে ফায়ার স্টেশন বাদ দেওয়া হয়েছে।

সর্বশেষ খবর