রবিবার, ৪ ফেব্রুয়ারি, ২০২৪ ০০:০০ টা

সুদহার নিয়ে উৎকণ্ঠা

♦ ঋণের সুদ বেড়ে ১২.৪৩ শতাংশ ♦ ভোক্তাঋণে ১৩.৫ শতাংশ ♦ চড়া সুদে অস্থিরতা বাড়বে ব্যবসায়

শাহেদ আলী ইরশাদ

ফেব্রুয়ারির শুরুতেই শিল্পঋণের সুদহার বেড়ে ১২ দশমিক ৪৩ শতাংশ হয়েছে। একই সঙ্গে ভোক্তাঋণের সুদহার বেড়ে দাঁড়িয়েছে প্রায় সাড়ে ১৩ শতাংশে। জানুয়ারিতে শিল্পঋণের সুদহার ছিল ১১ দশমিক ৮৯ আর ভোক্তাঋণের ১২ দশমিক ৮৯ শতাংশ। গত বছরের জুলাই থেকে প্রতি মাসের শুরুতেই সুদের স্মার্ট রেট জানিয়ে দিচ্ছে বাংলাদেশ ব্যাংক। মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে বাজারে টাকার সরবরাহ কমাতে কয়েক মাস ধরে ধারাবাহিক সুদহার বাড়ানো হচ্ছে। এ ছাড়া দাম বাড়ার পরও চাহিদামতো মিলছে না গ্যাস, বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও শিল্পের কাঁচামাল। আরেক দফা ঋণের সুদ বাড়ায় ব্যবসায়ীদের মধ্যে তৈরি হয়েছে উৎকণ্ঠা।

ব্যবসায়ীরা বলেছেন, উচ্চ মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ করতে কেন্দ্রীয় ব্যাংক সংকোচনমুখী মুদ্রানীতি অনুসরণ করছে। এতে বাজারে টাকার সরবরাহ কমেছে। চাহিদা কমানোর মাধ্যমে মূল্যস্ফীতির উচ্চ হারে লাগাম টানতে ঋণের সুদহার বাড়ানো হয়েছে। এর ফলে ব্যবসার খরচ অপ্রত্যাশিত গতিতে বেড়ে যাচ্ছে। ফলে করপোরেট খাত বা ব্যবসাবাণিজ্যে অস্থিরতা দেখা দেবে। পাশাপাশি অর্থনৈতিক মন্দার নেতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে। এ বিষয়ে পোশাক প্রস্তুত ও রপ্তানিকারকদের সংগঠন বিজিএমইএ’র ভারপ্রাপ্ত সভাপতি এস এম মান্নান কচি বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, বড় মাপের বিপর্যয় নেমে আসবে ব্যবসায়। তেল, গ্যাস, বিদ্যুতের দাম বাড়ানো হয়েছে ধাপে ধাপে। প্রত্যাহার করে নেওয়া হয়েছে পোশাক রপ্তানিতে প্রণোদনা। আবার ঋণের সুদহার বেড়ে প্রায় ১৩ শতাংশ। তিনি আরও বলেন, ডলার সংকটে এলসি খোলা যাচ্ছে না। চাহিদামতো জ্বালানি পাওয়া যাচ্ছে না। মানসম্মত পণ্য তৈরি করতে না পারলে আমরা ক্রেতা হারাব। বেতন দিতে পারব না। কারখানা বন্ধ হবে। আমাদের সবারই ঋণ আছে। টিকে থাকার জন্য সরকারের উচিত আমাদের পাশে দাঁড়ানো।

চলতি বছরের জানুয়ারিতে ১৮২ দিন মেয়াদি ট্রেজারি বিলের ছয় মাসের গড় সুদহার (স্মার্ট রেট) ছিল ৮ দশমিক ৬৮ শতাংশ। জানুয়ারির ‘স্মার্ট’ হারের সঙ্গে সর্বোচ্চ ৩ দশমিক ৭৫ শতাংশ হারে মার্জিন বা সুদ যোগ করে ফেব্রুয়ারিতে ঋণ দিতে পারবে ব্যাংক। সে হিসেবে ২০২৪ সালের দ্বিতীয় মাস ফেব্রুয়ারিতে বড় অঙ্কের ঋণে সর্বোচ্চ ১২ দশমিক ৪৩ শতাংশ সুদ নিতে পারবে। প্রি-শিপমেন্ট রপ্তানি ও কৃষি ও পল্লী ঋণের ‘স্মার্ট’ হারের সঙ্গে সর্বোচ্চ ২ দশমিক ৭৫ শতাংশ হারে মার্জিন যোগ হবে। অর্থাৎ ফেব্রুয়ারিতে প্রি-শিপমেন্ট রপ্তানি ঋণ এবং কৃষি ও পল্লী ঋণের সর্বোচ্চ সুদহার হবে ১১ দশমিক ৪৩ শতাংশ; যা জানুয়ারিতে ছিল ১০ দশমিক ৮৯ শতাংশ। ফেব্রুয়ারিতে ভোক্তাঋণে ব্যাংক সুদ নিতে পারবে ১৩ দশমিক ৪৩ শতাংশ। সিএমএসএমই, ব্যক্তিগত ও গাড়ি কেনার ঋণে অতিরিক্ত ১ শতাংশ তদারকি বা সুপারভিশন চার্জ নেওয়ার সুযোগ রয়েছে; যা জানুয়ারিতে ছিল ১২ দশমিক ৮৯ শতাংশ।

সুদহার বৃদ্ধির বিষয়ে জানতে চাইলে বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক মো. মেজবাউল হক সাংবাদিকদের বলেন, মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে সব ধরনের সুদহার আরও বাড়তে পারে। এ ক্ষেত্রে ব্যাংকগুলো যাতে কোনো ধরনের সমস্যায় না পড়ে সে বিষয়ে প্রস্তুত থাকতে বলা হয়েছে।

বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) তথ্য বলছে, ১২ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ মূল্যস্ফীতি ছিল গত বছরের অক্টোবরে। ওই মাসে খাদ্য মূল্যস্ফীতি বেড়ে ১২ দশমিক ৫৬ শতাংশ হয়েছিল। ২০২৩ সালের ডিসেম্বরে সার্বিক খাদ্য মূল্যস্ফীতি ছিল ৯ দশমিক ৫৮ শতাংশ। নভেম্বরে ছিল ১০ দশমিক ৭৬ শতাংশ।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর