রবিবার, ৪ ফেব্রুয়ারি, ২০২৪ ০০:০০ টা

দ্রব্যমূল্য খাদ্য মজুতসহ আলোচনা ১০ বিষয়ে

সচিবদের সঙ্গে কাল প্রধানমন্ত্রীর বৈঠক

ওয়াজেদ হীরা

দেশের সার্বিক পরিস্থিতি জানতে প্রশাসনের শীর্ষ কর্মকর্তা সচিবদের নিয়ে বৈঠকে বসতে যাচ্ছেন সরকারপ্রধান শেখ হাসিনা। দেশে চলমান ও সম্ভাব্য সব ধরনের পরিস্থিতি জানা এবং মোকাবিলার উপায় খুঁজতে কাল সোমবার এ বৈঠক করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ সূত্র জানিয়েছেন, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে এ বৈঠক হবে এবং বৈঠকে কমপক্ষে ১০ ধরনের বিষয়ে আলোচনা হতে পারে। এর মধ্যে সাধারণ মানুষের জন্য দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে পদক্ষেপ, খাদ্য মজুত পরিস্থিতি, রমজানে সাধারণ মানুষ যেন স্বস্তি পায় সেসব বিষয় গুরুত্ব দিয়ে আলোচনা হবে বলে জানা গেছে। মন্ত্রিপরিষদ সচিব মো. মাহবুব হোসেনের সভাপতিত্বে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে বিভিন্ন বিষয় জানার পর দিকনির্দেশনা দেবেন। সরকারের সব মন্ত্রণালয় ও বিভাগের সচিবদের সঙ্গে বিভিন্ন দফতর বা সংস্থায় কাজ করা প্রায় ৮৪ জন সিনিয়র সচিব বা সচিব উপস্থিত থাকবেন সভায়। জানা গেছে, দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি, ডলার পরিস্থিতিসহ নানা সমস্যার মধ্যেই শেখ হাসিনার নেতৃত্বে নতুন সরকার দায়িত্ব নিয়েছে। নতুন সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকেই দ্রব্যমূল্য সাধারণ মানুষের সাধ্যের মধ্যে রাখতে নানা কৌশলে কাজ করছে। সামনে রোজায় দ্রব্যমূল্য পুরো নিয়ন্ত্রণে রাখতে চায় সরকার। নতুন সরকারের প্রথম সচিব সভায় সে বিষয়ে স্পষ্ট বার্তা দেবেন প্রধানমন্ত্রী। ইতোমধ্যে সভার এজেন্ডাও ঠিক করা হয়েছে। এজেন্ডার বাইরেও অনেক বিষয়ে কথা বলেন, দিকনির্দেশনা দেন সরকারপ্রধান। মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের একাধিক সূত্র জানান, সচিব সভায় বিশেষভাবে যে বিষয়গুলো নিয়ে আলোচনা হবে এর মধ্যে বাজার মনিটরিং, দ্রব্যমূল্য পরিস্থিতি অন্যতম। আসন্ন রোজায় দ্রব্যমূল্য সাধারণ মানুষের জন্য সহনশীল রাখতে আলোচনা হবে। এ ছাড়া কৃষি খাতে সার মনিটরিং, বীজ ব্যবস্থাপনা, খাদ্য মজুদের পরিস্থিতি, গ্যাস-জ্বালানি ও বিদ্যু নিয়েও আলোচনা হবে। গ্যাস সংকটে শিল্পকারখানায় উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে। এসব সমাধানের উপায় খোঁজা হবে সভায়। সার্বিক অর্থনীতি নিয়ে আলোচনার পাশাপাশি এবং অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডের চ্যালেঞ্জ নিয়ে আলোচনা হবে। আলোচনা হবে আইনশৃঙ্খলা, শিক্ষা ও স্বাস্থ্যের বিষয় নিয়েও। বিশেষ করে নির্বাচন-পরবর্তী আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি, আগামীর চ্যালেঞ্জ নিয়ে আলোচনা হবে। কারিগরি শিক্ষা নিয়ে আলোচনা হওয়ার কথা রয়েছে। স্বাস্থ্য খাতে করোনা আবার বাড়ছে সেটি নিয়ন্ত্রণে রাখা, ডেঙ্গুর প্রকোপ কমানো এবং হাসপাতাল ব্যবস্থাপনা নিয়ে আলোচনা হবে বলে জানা গেছে। এ ছাড়া উন্নয়ন প্রকল্প গ্রহণ ও বাস্তবায়নে স্বচ্ছতা নিশ্চিত করা এবং নির্বাচনি ইশতেহার বাস্তবায়নের কর্মপরিকল্পনার বিষয়েও আলোচনা করা হবে। মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সমন্বয় অনুবিভাগ প্রতিটি মন্ত্রণালয় ও বিভাগের প্রতিবেদন সমন্বয় করছে। বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও বিভাগের প্রতিবেদন উপস্থাপন করা হবে ওই বৈঠকে। মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সমন্বয় ও সংস্কার সচিব মো. মাহমুদুল হোসাইন খান বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, অর্থ, বাণিজ্য, কৃষি, খাদ্য, শিল্প এবং বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের সচিবসহ বাজার ব্যবস্থাপনার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সচিবরা বর্তমান যে পরিস্থিতি তা ও মন্ত্রণালয়ের কার্যক্রম সম্পর্কে সচিব সভায় প্রতিবেদন উপস্থাপন করবেন। অন্যান্য মন্ত্রণালয় ও বিভাগের সচিবরাও সার্বিক প্রস্তুতি নিয়ে থাকবেন। প্রধানমন্ত্রী অন্য কোনো মন্ত্রণালয় ও বিভাগ সম্পর্কে জানতে চাইলে সংশ্লিষ্ট সচিব তাঁর মন্ত্রণালয়ের কার্যক্রম সম্পর্কে প্রধানমন্ত্রীকে অবহিত করবেন। এরপর প্রধানমন্ত্রী সার্বিক বিষয়ে বেশ কিছু নির্দেশনা দেবেন। মন্ত্রিপরিষদ থেকে এ সভার সার্বিক প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে।

জানা গেছে, প্রতি বছর কমপক্ষে একটি করে সচিব কমিটির সভা হয়। তবে গত বছর এ সভা হতে চেয়েও পরে নির্বাচনের ব্যবস্থাসহ নানা কারণে হয়নি। এর আগে প্রধানমন্ত্রীর উপস্থিতিতে সর্বশেষ সচিব সভা হয়েছিল ২০২২ সালের ২৭ নভেম্বর। সে হিসেবে ১৪ মাস পর সচিব কমিটির সভা হতে যাচ্ছে।

সরকারের এক সিনিয়র সচিব নাম প্রকাশ না করে বলেন, প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে এ বৈঠকে প্রশাসনের শীর্ষ কর্মকর্তাদের নানা বিষয়ে আলোচনার সুযোগ তৈরি হয়। দেশের সার্বিক অবস্থা নিয়ে আলোচনা করা হয়। এ ধরনের বৈঠকে জনসম্পৃক্ত বিষয়গুলো সর্বোচ্চ গুরুত্ব পায়। যে দল সরকার গঠন করে তাদের নির্বাচনি ইশতেহার তখন সরকারি ইশতেহার হয়ে যায়। অর্থাৎ মন্ত্রণালয়ের কার্যক্রমে ইশতেহারের কিছু থাকলে তা বাবস্তবায়নে পরিকল্পনা করা হয়। মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানান, দেশের অবস্থার সঙ্গে প্রশাসনিক অনেক বিষয়ও আলোচনায় আসে। অন্যান্য সময় সচিবরাও নিজেদের নানা বিষয় উত্থাপনের সুযোগ পান। তবে একাধিক সচিব বাংলাদেশ প্রকিদিনকে জানিয়েছেন, যেহেতু এটি সরকারের প্রথম সভা তাই কোনো দাবিদাওয়া থাকলেও উত্থাপন হবে না এবার। দেশের পরিস্থিতি, উন্নয়ন-অগ্রগতি কীভাবে আরও ত্বরান্বিত করা যায় সে বিষয়েই সবাই দৃষ্টি দেবে। মন্ত্রিসভা বিভাগ সূত্র জানান, নির্বাচন নিয়ে কী হবে কী হবে একটা আতঙ্ক থাকলেও নির্বাচনের পর সবাই এখন বাজার পরিস্থিতি, অর্থনৈতিক পরিস্থিতি, দেশের সার্বিক উন্নয়ন নিয়ে কাজ করছেন। এমন সময়ে এ সভা খুব গুরুত্ব বহন করে। সচিবরা প্রধানমন্ত্রীর নির্দশনা পেলে বিভিন্ন কাজে আরও গতি আসবে। একই সঙ্গে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে আলোচনার সুযোগে অনেক পরিস্থিতি মোকাবিলা সহজ হয়ে যাবে। সর্বশেষ ২০২২ সালের সচিব সভায় বৈশ্বিক প্রেক্ষাপটে দেশের অর্থনীতি সুসংহত রাখা, জ্বালানি নিরাপত্তা, প্রকল্প গ্রহণ ও বাস্তবায়নে স্বচ্ছতা, খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণ, কৃষির উৎপাদন বাড়াতে সারের জোগান নিশ্চিত করা, বন্যা ও প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবিলায় প্রয়োজনীয় প্রস্তুতিসহ বিবিধ প্রশাসনিক বিষয়ে আলোচনা হয়েছিল।

সর্বশেষ খবর