রবিবার, ৪ ফেব্রুয়ারি, ২০২৪ ০০:০০ টা
কী করবে দুই দল

এসএসসি রোজা ঈদ মাথায় রেখেই বিএনপির কর্মসূচি

শফিউল আলম দোলন

সাম্প্রতিক এক দফা আন্দোলনে বিজয় পায়নি বিএনপি। তবে নির্বাচন বর্জনের ডাকে সাধারণ জনগণের সাড়া প্রদানকে অভূতপূর্ব সাফল্য বলে মনে করছে দলটি। এমন পরিস্থিতিতে আবারও নতুন কর্মসূচি নিয়ে ভাবছে বিএনপি। ভোটের আগে আত্মগোপনে চলে যাওয়া নেতারাও সরকারের আচরণ বুঝে লোকালয়ে আসতে শুরু করেছেন। আসন্ন এসএসসি পরীক্ষা, রোজা ও ঈদুল ফিতরকে সামনে রেখে ঢেলে সাজানো হচ্ছে নতুন কর্মসূচি। এক দফা দাবির পাশাপাশি জনসম্পৃক্ত ইস্যুতে শিগগিরই এ কর্মসূচি ঘোষণা দেওয়ার কথা রয়েছে। সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে। বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা জয়নুল আবদিন ফারুক এ ব্যাপারে বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, বিএনপির শীর্ষ নেতারা কারাগারে থাকায় কিছুটা হতাশ নেতা-কর্মীরা। তবে হতাশ হওয়ার কিছু নেই। দিন দিন সরকারের পায়ের মাটি সরে যাচ্ছে। তিনি বলেন, এ সরকারকে বিশ্বাস করা যায় না। তাই শিগগিরই সরকার পতনের জোরালো কর্মসূচি আসবে, সবকিছুর হিসাব নেওয়া হবে। লড়াই করে বাংলাদেশের একদলীয় শাসন বিদায় করে তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা ফিরিয়ে আনা হবে। এদিকে জানা গেছে, ৭ জানুয়ারির নির্বাচনের পর তৃণমূলের ব্যাপক চাপে রয়েছে বিএনপি। বিশেষ করে কেন্দ্রীয় পর্যায়ের নেতাদের প্রতি প্রচণ্ড ক্ষোভ বিরাজ করছে তৃণমূল নেতা-কর্মী ও সমর্থকদের। তাদের অভিযোগ, এক দফার আন্দোলনে ধারাবাহিক কর্মসূচি ঘোষণা করেও মাঠে নামেননি কেন্দ্রীয় নেতারা। অধিকাংশ শীর্ষ নেতা ছিলেন লাপাত্তা। আত্মগোপনে চলে গিয়েছিলেন তারা। কর্মসূচি বাস্তবায়নে ছিল না কোনো সমন্বয়। সঠিক সময় কোনো বার্তা দেওয়া হয়নি তাদের। একের পর এক ধারাবাহিক কর্মসূচি ঘোষণা করা হলেও দলীয় হাইকমান্ডের নাম ভাঙিয়ে সক্রিয় নেতাদের গ্রেফতার এড়াতে আত্মগোপনের ‘ভিত্তিহীন’ বার্তা দেওয়া হয়েছে। বিষয়টি নিয়ে এখন অনেকেই মুখ খুলছেন। কয়েকজন কেন্দ্রীয় নেতা আত্মগোপনে থেকেও অনেক সময় তাদের বিভ্রান্তিমূলক তথ্য দিয়েছেন। তবে সরকারবিরোধী আন্দোলনে ব্যর্থতার দায় দেখছেন না বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দ। তাদের মতে, দলীয় হাইকমান্ডের নির্দেশেই আত্মগোপনে ছিলেন তারা। শীর্ষ পর্যায়ের ও কেন্দ্রীয় নেতারা গ্রেফতার হলে সরকারবিরোধী আন্দোলন চালিয়ে যাওয়া সম্ভব হতো না।

কিন্তু কেন্দ্রীয় নেতাদের এ ধরনের ভূমিকায় সরকারবিরোধী আন্দোলনের সাফল্য নিয়ে আশাবাদী হতে পারছেন না দলটির তৃণমূল নেতা-কর্মীরা। কর্মসূচি সফলে কেন্দ্রীয় নেতাদের সমন্বয়ের অভাবও দেখছেন তারা। তাদের মতে, দলীয় হাইকমান্ডের নাম ব্যবহার করে নিজেদের অন্য এজেন্ডা বাস্তবায়নের চেষ্টা করছেন সংশ্লিষ্ট কয়েকজন নেতা। এ ছাড়া ভোটের আগে আত্মগোপনে যাওয়া অনেক নেতা এখনো কর্মসূচিতে অংশ নিচ্ছেন না, যা নিয়ে দেশব্যাপী তৃণমূল নেতা-কর্মী ও সমর্থকদের মধ্যে প্রশ্ন উঠছে। তাদের মতে, চলমান আন্দোলনে মূল দল বিএনপির চেয়ে অঙ্গ-সহযোগী সংগঠনের নেতা-কর্মীদেরই বরং সারা দেশে ভূমিকা ছিল সক্রিয়। এদিকে ১৭ বছর ক্ষমতার বাইরে থাকা বিএনপি এক যুগেরও বেশি সময় ধরে আন্দোলন করছে। এর মধ্যে তিনটি জাতীয় সংসদ নির্বাচন করে টানা চতুর্থবারের মতো ক্ষমতায় আওয়ামী লীগ। দীর্ঘ আন্দোলনেও নির্দিষ্ট লক্ষ্যে পৌঁছাতে পারেনি বিএনপি। এজন্য দলের কেন্দ্রীয় নেতাদের দায়ী করছেন তৃণমূল পর্যায়ের নেতা-কর্মীরা। যদিও আন্দোলনের অংশ হিসেবে ভোট বর্জনের ডাকে সাধারণ জনগণ ব্যাপক সাড়া দিয়েছে দাবি করে এটিকে তাদের বড় সাফল্য মনে করছেন কেন্দ্রীয় বিএনপির নেতারা। বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী আহমেদ এ প্রসঙ্গে বলেন, দলের কেন্দ্র থেকে তৃণমূল পর্যন্ত সব নেতা-কর্মীই আন্দোলনে সক্রিয় ছিলেন। কিন্তু ক্ষমতাসীন সরকার এমন একটা পরিস্থিতি তৈরি করেছে- যা ছিল তাদের দমননীতির বাস্তবায়ন। তার মধ্যেও আমাদের শীর্ষ নেতারা ভার্চুয়ালি নিয়মিত যোগাযোগ করেছেন। তৃণমূলের নেতাদের সঙ্গে সার্বিক বিষয়ে কথা বলেছেন। আমি নিজেও কর্মসূচি ঘোষণাসহ প্রতিদিনই কোথাও না কোথাও কর্মসূচি পালন করেছি। তবে সরকারের কঠোর দমনপীড়নের কারণে এক দফার আন্দোলনে কিছুটা গতি কমেছে। এটা আবারও গতিশীল হবে। সর্বশেষ ৩০ জানুয়ারি কালো পতাকা মিছিলেও সরকার তাণ্ডব চালিয়েছে। স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. আবদুল মঈন খানকে হেনস্তা করেছে পুলিশ। তারপরও আন্দোলন থেমে নেই। সরকারের পতন না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চলবেই। জেলা বিএনপির সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক পর্যায়ের কয়েকজন নেতা প্রায় অভিন্ন তথ্য দিয়ে বলেছেন, গত ২৮ অক্টোবর নয়াপল্টনের মহাসমাবেশ পণ্ডের পর থেকেই কেন্দ্রীয় নেতারা আত্মগোপনে চলে যান। যেসব কেন্দ্রীয় নেতা জেলা ও মহানগরের দায়িত্বে ছিলেন তাদেরও এই সময়ে পাওয়া যায়নি। উপরন্তু ধারাবাহিক হরতাল, অবরোধে কেন্দ্রীয় নেতারা ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের বরাত দিয়ে মাঠে আন্দোলনরত সক্রিয় নেতাদেরও গ্রেফতার এড়িয়ে থাকার নির্দেশনা দিয়েছেন। এর ফলে অনেকেই আন্দোলনের মাঠ ছেড়ে আত্মগোপনে চলে গিয়েছিলেন। এ ছাড়াও তৃণমূলের সঙ্গে কোনো সমন্বয় ছাড়াই অনেক কর্মসূচি ঘোষণা করেছে বিএনপি। এক দফার আন্দোলনে অসহযোগসহ যেসব কর্মসূচি ঘোষণা হয়েছে, প্রকৃতপক্ষে তা কতটুকু বাস্তবায়ন করা সম্ভব- সে বিষয়গুলোও দেখা হয়নি। কয়েকজনকে নির্বাচনের আগে দেশ ছেড়ে পালিয়ে বিদেশে চলে যেতেও দেখা গেছে। অসংখ্য কেন্দ্রীয় নেতা এলাকায়ও যাননি। এখনো ঢাকায় আত্মগোপনে রয়েছেন অনেকে।

সর্বশেষ খবর