সোমবার, ৫ ফেব্রুয়ারি, ২০২৪ ০০:০০ টা

খেলাপি ঋণ কমাতে হার্ডলাইন

ইচ্ছাকৃত খেলাপিরা জমি-বাড়ি গাড়ি কিনতে পারবেন না, খুলতে পারবেন না ব্যবসা, ৮ শতাংশে নামিয়ে আনার রোডম্যাপ

নিজস্ব প্রতিবেদক

ব্যাংক খাতে সুশাসন ফিরিয়ে আনতে এবং খেলাপি ঋণ উদ্ধারে দুই বছরের রোডম্যাপ গ্রহণ করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। ২০২৬ সালের ৩০ জুন পর্যন্ত থাকবে এই রোডম্যাপের মেয়াদ। এই সময়ে মধ্যে রাষ্ট্র মালিকানাধীন ব্যাংকের খেলাপি ঋণ ১০ শতাংশ এবং বেসরকারি ব্যাংকের খেলাপি ঋণ ৫ শতাংশের নিচে নামিয়ে আনা হবে। এ ছাড়াও ব্যাংক খাতে সুশাসন নিশ্চিত করার মাধ্যমে সীমাতিরিক্ত, বেনামি স্বার্থ সংশ্লিষ্ট এবং জালিয়াতি-প্রতারণার মাধ্যমে ঋণ বিতরণের পরিমাণ শূন্যে নামাতে চায় বাংলাদেশ ব্যাংক।

গতকাল গভর্নর আবদুর রউফ তালুকদারের সভাপতিত্বে বাংলাদেশ ব্যাংকের পর্ষদ সভা অনুষ্ঠিত হয়। এ সময় কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র মো. মেজবাউল হকসহ অন্যান্য কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। পর্ষদ সভা শেষে সাংবাদিকদের এসব তথ্য জানিয়েছেন কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ডেপুটি গভর্নর আবু ফারাহ মো. নাসের। তিনি বলেন, ব্যাংক খাতের খেলাপি ঋণ হ্রাস ও সুশাসন নিশ্চিত করার একটি রোডম্যাপ কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পর্ষদ সভায় অনুমোদন হয়েছে। সেই রোডম্যাপ অনুযায়ী কাজ শুরু হবে। নিয়মিত ঋণ পরিশোধ না করলে তাকে ইচ্ছাকৃত খেলাপি হিসেবে চিহ্নিত করা হবে। এসব ঋণখেলাপিরা বিভিন্ন সুবিধা থেকে বঞ্চিত হবেন। তারা নতুন করে জমি, বাড়ি ও গাড়ি কিনতে পারবেন না। নতুন ব্যবসাও খুলতে পারবেন না তারা। কোনো ঋণ একনাগারে দুই বছর মন্দমানে থাকলে সেই ঋণের বিপরীতে ১০০ ভাগ প্রভিশন রাখা সাপেক্ষে অবলোপন করা হবে। এতে মোট খেলাপি ঋণের ২ দশমিক ৭৬ বা ৪৩ হাজার ৩০০ কোটি টাকা কমবে। এ জন্য ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালকের (এমডি) তত্ত্ব¡াবধানে অবলোপনকৃত ঋণ আদায় ইউনিট গঠন করা হবে। খেলাপি ঋণ আদায় এমডির পারফরম্যান্সে যুক্ত করা হবে। ডেপুটি গভর্নর বলেন, মন্দ ঋণ এবং অবলোপনকৃত ঋণ আদায়ে বেসরকারি উদ্যোগে সম্পদ ব্যবস্থাপনা কোম্পানি গঠন করা হবে। সম্পদ ব্যবস্থাপনা কোম্পানির মাধ্যমে আদায়কৃত অর্থ ব্যাংকের আয় খাতে যুক্ত হবে। অবলোপনকৃত সম্পদের বিপরীতে সুদ আদায় না করে আয় খাতে স্থানান্তর করা যাবে না। অবলোপনকৃত সম্পদ আদায় বা নিয়মিত না হওয়া পর্যন্ত ব্যালান্সশিটেও আলাদা ভাবে দেখাতে হবে।

আবু ফরাহ মো. নাসের বলেন, মেয়াদি ঋণ পরিশোধের জন্য দেওয়া সুবিধাসমূহ বাড়ানো হবে না। এতে ঋণ পরিশোধের হার বাড়বে, ব্যাংকে তারল্য সংকট কমে আসবে। নতুন ঋণ প্রবাহ বাড়বে। মেয়াদি ঋণের মেয়াদোত্তীর্ণ হওয়ার সংজ্ঞা সংশোধন করে আন্তর্জাতিকমানের করা হবে। ব্যাংকের আইন বিভাগকে শক্তিশালী করার মাধ্যমে অর্থঋণ আদালতে বিচারাধীন ৭২ হাজার ৫৪৩টি মামলা নিষ্পত্তি করে ১ লাখ ৭৮ হাজার ২৭৭ কোটি টাকা আদায় করা যাবে। ইচ্ছাকৃত খেলাপিদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় নীতিমালা সংশোধন ও বাস্তবায়ন করা হবে। তিনি আরও বলেন, খেলাপি ঋণ আদায়ে ব্যাংক কর্মকর্তাদের বিশেষ ভাতা দেওয়া হবে। ব্যাংকের নিজস্ব মূল্যায়নের পাশাপাশি তালিকাভুক্ত জামানত প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে ঋণের বিপরীতে দেওয়া জামানত মূল্যায়ন করা হবে।

ডেপুটি গভর্নর বলেন, সুশাসন নিশ্চিত করতে ব্যাংকের শেয়ারহোল্ডার পরিচালক নিয়োগে বর্তমান ফিট অ্যান্ড প্রপার টেস্ট প্রক্রিয়া এবং দায়িত্ব ও কর্তব্য সম্পর্কিত নুতন নীতিমালা প্রণয়ন করা হবে। স্বতন্ত্র পরিচালক নিয়োগ, সম্মানী নির্ধারণ এবং দায়িত্ব ও কর্তব্য সম্পর্কিত নীতিমালা প্রণয়ন করা হবে। ব্যবস্থাপনা পরিচালক নিয়োগ ও পুনর্নিয়োগের বাছাই প্রক্রিয়া কঠোরভাবে বাস্তবায়ন করা হবে। একক গ্রাহক সীমা কোনোভাবেই অতিক্রম না করার ব্যাপারে প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দেওয়া হবে। তিনি আরও বলেন, একত্রীকরণের তিন বছরের মধ্যে কোনো কর্মীকে ছাঁটাই না করার শর্তে সবল ব্যাংকের সঙ্গে দুর্বল ব্যাংক একীভূত করা হবে। ব্যাংক কর্মকর্তাদের পদোন্নতির ক্ষেত্রে মৌলিক প্রশিক্ষণ এবং ব্যাংকিং প্রফেশনাল পরীক্ষা পাস বাধ্যতামূলক করা হবে। বাংলাদেশ ব্যাংকের খেলাপি ঋণ-সংক্রান্ত হালনাগাদ প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, ব্যাংকিং খাতে খেলাপি ঋণ এখন বেড়ে ১ লাখ ৫৬ হাজার ৩৯ কোটি টাকা ছাড়িয়ে গেছে। অর্থাৎ বর্তমানে ব্যাংকিং খাতের মোট বিতরণ ঋণের ১০ দশমিক ১১ শতাংশই এখন খেলাপি।

সর্বশেষ খবর