মঙ্গলবার, ৬ ফেব্রুয়ারি, ২০২৪ ০০:০০ টা

ভোটের রাতে ধর্ষণে ১০ জনের ফাঁসি, ৬ জনের যাবজ্জীবন

নোয়াখালী প্রতিনিধি

চাঞ্চল্যকর নোয়াখালীর সুবর্ণচরে গৃহবধূকে দলবদ্ধ ধর্ষণ মামলায় ১৬ আসামির ১০ জনকে মৃত্যুদণ্ড ও ছয়জনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দিয়েছেন আদালত। একই সঙ্গে প্রত্যেকের ৫০ হাজার টাকা করে অর্থদণ্ডও করা হয়। অনাদায়ে দুই বছর সশ্রম কারাদণ্ডের রায় প্রদান করেন আদালত। গতকাল দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে নোয়াখালী নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-২-এর বিজ্ঞ বিচারক (জেলা ও দায়রা জজ) ফাতেমা ফেরদৌস আদালতে ঘণ্টাব্যাপী রায়ের কার্যক্রম পড়ে শোনান এবং অপরাধ বিশ্লেষণের পর এ রায় ঘোষণা করেন। রায় ঘোষণার সময় আদালতের কাঠগড়ায় ১৫ আসামি উপস্থিত ছিলেন। বাকি একজন পলাতক। ২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বর একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের দিবাগত রাতে এ পৈশাচিক ঘটনা ঘটে। এদিকে রায় ঘোষণার পর আদালত চত্বরে দণ্ডপ্রাপ্ত আসামিদের স্বজনরা কান্নায় ভেঙে পড়ে বলেন, এ রায় মানি না, আমরা এ রায়ের বিরুদ্ধে উচ্চ আদালতে যাব। এ ছাড়া দণ্ডপ্রাপ্ত আসামিদের স্বজনরা জেলা জজ সড়কে রায়ের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ মিছিল করেন।

মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামিরা হলেন মো. রুহুল আমিন (পিতা মৃত খুরশিদ আলম), মো. হাসান আলী বুলু (পিতা মৃত আবদুল হাসেম), মো. সোহেল (পিতা মৃত ইসমাইল), স্বপন (পিতা মৃত আবদুল মান্নান), ইব্রাহীম খলিল (পিতা আবুল কাশেম), আবুল হোসেন আবু (পিতা মৃত ছিড়ু মিয়া), মো. সালাউদ্দিন (পিতা ফকির আহাম্মদ), মো. জসীম উদ্দিন (পিতা মো. মোতাহের হোসেন), মো. মুরাদ (পিতা মো. রফিক) ও মো. জামাল হেঞ্জু (পিতা মৃত চান মিয়া)। যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্তরা হলেন মো. হানিফ (পিতা ইসমাইল প্রকাশ বাগন আলী), মো. চৌধুরী (পিতা আবদুল হামিদ), মো. বাদশা আলম প্রকাশ কুড়াইলা বাসু (পিতা মৃত আহম্মদ উল্যা), মোশারফ (পিতা তোফায়েল আহম্মদ তোফা), মো. মিন্টু প্রকাশ হেলাল (পলাতক) (পিতা মৃত আরব আলী প্রকাশ গর্দান) ও মো. সোহেল (পিতা আবুল কালাম)। মৃত্যুদণ্ড ও যাবজ্জীবন প্রাপ্ত সব আসামির প্রত্যেককে ৫০ হাজার টাকা জরিমানা, অনাদায়ে দুই বছরের সশ্রম কারাদণ্ডের আদেশ দেন আদালত।

আদালতে রাষ্ট্রপক্ষের পাবলিক প্রসিকিউটর অ্যাডভোকেট মুর্তুজা আলী ও সহকারী ছালেহ আহম্মদ সোহেল খান এ রায়ে সন্তোষ প্রকাশ করেন এবং আদালত ন্যায় করেছেন বলে জানান। রায়টি অপরাধীদের জন্য দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবে। বাদীপক্ষের আইনজীবী জেলা আইনজীবী সমিতির সাবেক সভাপতি মোল্লা হাবিবুর রসুল মামুন সন্তোষ প্রকাশ করে রায়কে যুগান্তকারী মন্তব্য করে বলেন, অপরাধীদের জন্য এ রায় দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবে। বাদীও এ মামলায় ন্যায়বিচার পেয়েছেন বলে জানান।

অন্যদিকে আসামিপক্ষের আইনজীবী হারুনুর রশিদ হাওলাদার বলেন, ‘রায়ে আমরা সন্তুষ্ট নই। রায়ের বিরুদ্ধে উচ্চ আদালতে আপিল করা হবে।’ একই ভাবে আসামিপক্ষের স্বজনরা আদালতে রায় প্রত্যাখ্যান করে বলেন, ‘এ রায়ে আসামিদের ওপর অন্যায় করা হয়েছে। আমরা এ রায় মানি না, আমরা উচ্চ আদালতে যাব।’ এ সময় আদালত প্রাঙ্গণে আসামিদের স্বজনরা অনেকে কান্নায় ভেঙে পড়েন এবং পরে স্বজনরা জেলা জজ সড়কে রায়ের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ মিছিল করেন।

মামলা ও আদালত সূত্রে জানা যায়, ২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বর একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের দিনগত রাতে স্বামী-সন্তানদের বেঁধে রেখে এক নারীকে (৪০) মারধর ও গণধর্ষণ করা হয়। নির্যাতনের শিকার নারী চার সন্তানের জননী। নির্যাতিত নারীর অভিযোগ ছিল, ভোট কেন্দ্রে থাকা ব্যক্তিদের পছন্দের প্রতীকে ভোট না দেওয়ার জেরে ওই হামলা ও ধর্ষণের ঘটনা ঘটে। ঘটনাটি তখন দেশে-বিদেশে ব্যাপক আলোচিত হয়। পরদিন (৩১ ডিসেম্বর) ওই নারীর স্বামী সিরাজুল ইসলাম বাদী হয়ে চরজব্বর থানায় নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে মামলা করেন। মামলার তদন্ত শেষে সুবর্ণচর উপজেলা আওয়ামী লীগের বহিষ্কৃত প্রচার সম্পাদক রুহুল আমিন মেম্বারসহ ১৬ জনের বিরুদ্ধে ২০১৯ সালের ২৭ মার্চ আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করে জেলা গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)।

সর্বশেষ খবর