বুধবার, ৭ ফেব্রুয়ারি, ২০২৪ ০০:০০ টা

কঠিন চ্যালেঞ্জ অনুপ্রবেশ ঠেকানো

কঠোর বাংলাদেশ সতর্ক বিজিবি

নিজস্ব প্রতিবেদক

বান্দরবানের তুমব্রু সীমান্তে মিয়ানমারের বিদ্রোহী গ্রুপ আরাকান আর্মির (এএ) সঙ্গে মিয়ানমারের সীমান্তরক্ষী বাহিনীর মধ্যে চলছে ব্যাপক গোলাগুলি। উত্তাল মিয়ানমারের প্রভাব পড়েছে বাংলাদেশেও। গোলা মাঝেমধ্যেই ঢুকে পড়ছে ঘুমধুমে। কয়েকজন হতাহত হয়েছেন।

এরই মধ্যে দেশটির বর্ডার গার্ড পুলিশ (বিজিপি) ও সেনাসদস্যসহ ২৬৪ জন আশ্রয় নিয়েছেন বাংলাদেশে। এ ছাড়া বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি সীমান্তে অনুপ্রবেশের অপেক্ষায় রয়েছেন মিয়ানমারের চাকমারা। এমন পরিস্থিতিতে অনুপ্রবেশ ঠেকানো চ্যালেঞ্জ হিসেবে দেখা দিয়েছে। তবে সীমান্তে বাংলাদেশ কঠোর অবস্থানে রয়েছে বলে জানিয়েছে সরকারি বিভিন্ন সংস্থার সূত্র। জানা গেছে, মিয়ানমারের জান্তা বাহিনী এবং আরাকান আর্মির মধ্যে অব্যাহত সংঘাত ও গোলাগুলির ঘটনায় আতঙ্কে রয়েছে বাংলাদেশের সীমান্তবর্তী বাসিন্দারা। গত কয়েক দিন ধরেই সীমান্ত এলাকায় ভারী অস্ত্র থেকে ছোড়া গুলি এবং মর্টারশেলের শব্দ শোনা যাচ্ছে। দেখা যাচ্ছে আগুনের ধোঁয়া। কক্সবাজারের টেকনাফ এবং বান্দরবানের তুমব্রু সীমান্ত এলাকায় সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত এসব চলছে।

এদিকে সোমবার থেকে বাংলাদেশে ঢোকার জন্য বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার ঘুমধুম সীমান্তের ওপারে অপেক্ষা করছেন মিয়ানমারের ৪০০ চাকমা। টেকনাফ উপজেলার হোয়াইক্ষ্যং ইউনিয়নের উলুবনিয়া সীমান্ত দিয়ে পাঁচ সদস্যের একটি রোহিঙ্গা পরিবারের অনুপ্রবেশ চেষ্টা আটকে দেয় বিজিবি।

মিয়ানমারের অভ্যন্তরীণ অস্থিরতার সুযোগ কাজে লাগিয়ে বাংলাদেশে মানব পাচার, চোরাচালান, মাদকদ্রব্যের অবৈধ অনুপ্রবেশসহ নতুনভাবে রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ রোধে দৃঢ় অবস্থানে রয়েছে বাংলাদেশ কোস্ট গার্ড। সমুদ্রে সার্বক্ষণিক টহল জাহাজ মোতায়েনসহ টেকনাফ থেকে শাহপরীর দ্বীপ পর্যন্ত দিনরাত নিয়মিত অত্যাধুনিক হাইস্পিড বোটের মাধ্যমে টহল পরিচালনা করছেন তারা।  

গতকাল রাজধানীর রাজারবাগে কেন্দ্রীয় পুলিশ হাসপাতালে সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে পুলিশ মহাপরিদর্শক (আইজিপি) চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন বলেছেন, বর্তমান সীমান্ত পরিস্থিতিতে এসব এলাকায় পুলিশের উপস্থিতি বৃদ্ধিসহ প্যাট্রোলিং বৃদ্ধি করা হয়েছে। সীমান্ত এলাকায় আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে পুলিশসহ সংশ্লিষ্ট সব সংস্থা দায়িত্ব পালন করছে। আর মিয়ানমারে যুদ্ধের মধ্যে সে দেশের সশস্ত্র বাহিনীর সদস্যদের পালিয়ে এসে বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়ার প্রেক্ষাপটে কক্সবাজারে রোহিঙ্গা ক্যাম্পগুলোতে নজরদারি বাড়ানো হয়েছে।

গতকাল বেলা ২টায় মিয়ানমার থেকে নাফ নদী দিয়ে বাংলাদেশে অনুপ্রবেশের চেষ্টাকালে রোহিঙ্গা বোঝাই একটি নৌকা ঢুকতে দেয়নি বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি)। ওই নৌকায় ৬৫ জন রোহিঙ্গা পুরুষ (মিয়ানমারের নাগরিক) ছিলেন।

টেকনাফ-২ বিজিবির অধিনায়ক লে. কর্নেল মো. মহিউদ্দিন আহমেদ বলেন, কক্সবাজার ও বান্দরবান সীমান্তে গত বছর থেকে বিদ্রোহী আরাকান আর্মির (এএ) সঙ্গে মিয়ানমারের সেনাবাহিনী ও দেশটির সীমান্তরক্ষী বর্ডার গার্ড পুলিশের (বিজিপি) গোলাগুলির ঘটনা ঘটে আসছে। এটি মিয়ানমারের অভ্যন্তরীণ সমস্যা। তবে এসব ঘটনাকে কেন্দ্রে করে সীমান্তে বিজিবি কঠোর অবস্থানে রয়েছে। যাতে এ সমস্যা কেন্দ্র করে নতুন করে কোনো ধরনের রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ না ঘটে। এরই ধারাবাহিকতায় একটি কাঠের নৌকাবোঝাই ৬৫ জন রোহিঙ্গার দলকে নাফ নদীর শূন্যরেখা থেকে ফিরিয়ে দেওয়া হয়েছে। নৌকাটিতে সবাই পুরুষ ছিলেন। পরে নৌকাটি মিয়ানমারে ফিরে যেতে বাধ্য হয়।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক ড. ইমতিয়াজ আহমেদ বলেন, আমরা দেখেছি ওই দেশে সংঘর্ষ শুরু হওয়ার পর থেকে মিয়ানমার সেনাবাহিনীর ৬০০-এর মতো সদস্য ভারতে আশ্রয় নিয়েছিল। একইভাবে চীনেও আশ্রয় নিয়েছিল। এখন বেশ কিছু সংখ্যক বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছেন। তবে আমরা ভারত ও চীনের অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগাতে পারি। তারা দ্রুত আশ্রয় নেওয়া মিয়ানমার বাহিনীর ওইসব সদস্যদের তাদের দেশে ফেরত পাঠিয়েছে। আমাদেরও সেভাবে দ্রুত ফেরত পাঠানোর পদক্ষেপ নিতে হবে। 

এদিকে গতকাল দুপুরে গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়ায় জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সমাধিতে শ্রদ্ধা নিবেদন শেষে সাংবাদিকদের বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের (বিজিবি) নবনিযুক্ত মহাপরিচালক মেজর জেনারেল মোহাম্মদ আশরাফুজ্জামান সিদ্দিকী বলেন, সীমান্ত পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। কোনো অবস্থাতেই রোহিঙ্গাদের ঢুকতে দেওয়া হবে না। আমরা ধৈর্য ধারণ করে মানবিক দিক থেকে এবং আন্তর্জাতিক একটি সুসম্পর্ক বজায় রেখে পরিস্থিতি মোকাবিলার চেষ্টা করছি। সোমবার রাত পর্যন্ত ১১৫ জন এবং আজ (গতকাল) সকালে ১১৪ জন ও দুপুরে ৩৫ জনসহ মিয়ানমারের সীমান্তরক্ষী বাহিনীর ২৬৪ সদস্য আত্মসমর্পণ করেছেন। আমরা তাদের আশ্রয় দিয়েছি, খাবারের ব্যবস্থা করেছি। ১৫ জন আহত হয়েছেন, এর মধ্যে আটজন গুরুতর আহত। চারজনকে কক্সবাজার সদর হাসপাতালে ও বাকি চারজনকে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। দুর্ভাগ্যজনকভাবে এক রোহিঙ্গা ও এক বাংলাদেশি নারী নিহত হয়েছেন। এসব মৃত্যু কোনোভাবেই কাম্য নয়।

সর্বশেষ খবর