বুধবার, ৭ ফেব্রুয়ারি, ২০২৪ ০০:০০ টা
পাকিস্তানে নির্বাচন কাল

জেলে থেকেও আলোচনায় ইমরান

প্রতিদিন ডেস্ক

জেলে থেকেও আলোচনায় ইমরান

আগামীকাল ৮ ফেব্রুয়ারি পাকিস্তানের জাতীয় নির্বাচনের ভোট। এই নির্বাচনে দেশটির সাবেক প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরিফের দল পিএমএল-এন সংখ্যাগরিষ্ঠ আসনে জয়লাভ করবে এমন আভাস পাওয়া যাচ্ছে। জয়ের এমন পূর্বাভাস    মূলত দেশটির সেনাবাহিনীর সমর্থনের কারণে। বেশ কয়েক বছর ধরে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী কে হবেন সেই সিদ্ধান্ত সাধারণত দেশটির সেনাবাহিনীই নিয়ে থাকে। টাইমস অব ইন্ডিয়ায় প্রকাশিত এক নিবন্ধে উল্লেখ করা হয়েছে, পাকিস্তানে প্রধানমন্ত্রী জনগণের ভোটে নির্বাচিত হন না। এটা এমন এক গোপন বিষয়, যা সবাই জানেন। সেনাবাহিনীই তাদের পছন্দের প্রার্থীকে নির্বাচনে জয়ী করায়। নন্দিত ক্রিকেট তারকা ইমরান খানও সেনাবহিনীর আনুকূল্যে গত নির্বাচনে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী হয়েছিলেন। তবে এবার ইমরান খানের বিরুদ্ধে ঘুরে দাঁড়িয়েছে সেই সেনাবাহিনী। যাতে নির্বাচন সামনে রেখে এক সপ্তাহের মধ্যেই তিনটি সাজার মুখোমুখি হয়েছেন সাবেক এই প্রধানমন্ত্রী। প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে পারছেন না নির্বাচনেও। এমনকি ইমরান খানের দল পাকিস্তান তেহরিক-ই-ইনসাফকে (পিটিআই) ‘ব্যাট’ প্রতীক থেকেও বঞ্চিত করা হয়েছে। এসব বিষয় বিবেচনা করলে আপাতদৃষ্টে ৭১ বছর বয়সী ইমরান খানের রাজনৈতিক ক্যারিয়ারের ইতি দেখা যাচ্ছে। দেশের ক্রিকেট দলের অধিনায়ক হিসেবে একসময় প্রতিকূল অবস্থান থেকেও ম্যাচ জেতানোর অভিজ্ঞতা আছে তাঁর। আর পাকিস্তান এমন এক দেশ, যেখানে কয়েক ডজন রাজনীতিবিদকে কারাদণ্ডিত হতে দেখা যায়, আবার তাঁদের প্রত্যাবর্তনের মধ্য দিয়ে এসব রায় উল্টে যাওয়ারও নজির রয়েছে।

এ অবস্থায় কারাবন্দি ইমরান খান কি পারবেন কোনো প্রতিকূল ক্রিকেট ম্যাচের মতো আসন্ন নির্বাচনে তাঁর দলকে জয়ী করতে? সেই চেষ্টা এখনো করে যাচ্ছেন। পাকিস্তানের চলমান পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করে বিশ্লেষকরা মত দিয়েছেন, রাজনৈতিক প্রত্যাবর্তনে ইমরান ও তাঁর দল পিটিআই এখনো হাল ছাড়েনি। পিএমএল-এন, পিপিপি যেখানে প্রকাশ্যে জনসমাবেশ, নির্বাচনি শোভাযাত্রা ও প্রচার প্রচারণা চালাচ্ছে; সেখানে কোণঠাসা ইমরানের লাখ লাখ সমর্থক ভিড় করছে ভার্চুয়াল মাধ্যমে। ইমরান খানের দল পিটিআই তার লাখ লাখ সমর্থককে একত্র করতে প্রযুক্তি ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমকেই ব্যবহার করছে। এ ক্ষেত্রে পিটিআই-এর একটি কৌশল হলো, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) ভয়েস জেনারেশন। দলটি কারাগার থেকে আইনজীবীদের পাচার করা ইমরানের দিকনির্দেশনা থেকে ভাষণ তৈরি করতে এআই প্রযুক্তি ব্যবহার করছে। পরে এসব বক্তব্য বিভিন্ন জনসভায় বড় পর্দায় সম্প্রচার করা হচ্ছে। অনলাইনেও এসব বক্তব্য ছড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে। বলা যায়, জেলে থেকেও ইমরান খানের কাছ থেকে এখনো অনুপ্রেরণা ও দিকনির্দেশনা পাচ্ছে তাঁর সমর্থকরা। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমেরও সদ্ব্যবহার করছে পিটিআই। জনপ্রিয় ভিডিও শেয়ারিং অ্যাপ টিকটকে ইমরান খানের ১ কোটির বেশি ফলোয়ার আছে। সেই অ্যাকাউন্ট থেকে ছোট ছোট ভিডিও ও বক্তব্য প্রচার করে সমর্থকদের উজ্জীবিত রাখছে দলটি। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের সাহায্যে তরুণ ও নগরের ভোটারদের কাছে পৌঁছানোর চেষ্টা করা হচ্ছে। মূলত এই ভোটাররাই ইমরান খান তথা তাঁর দল পিটিআই-এর মূল ভিত্তি। নির্বাচন সামনে রেখে ইমরান খানসহ শীর্ষ নেতাদের সাজাই শুধু নয়, নির্বাচনি প্রচারেও অনেক বাধা এবং চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হয়েছে পিটিআই। এগুলোর মধ্যে রয়েছে পোস্টার ও ব্যানারের সেন্সরশিপ, ঠিকমতো মিডিয়া কভারেজ না পাওয়া, আর শক্তিশালী সামরিক বাহিনীর প্রভাব তো রয়েছেই। বিশেষজ্ঞরা এটাও মনে করেন, পিটিআই সমর্থিত স্বতন্ত্র প্রার্থীরা বিজয়ী হলে তাঁরা দলের সঙ্গে থাকতে বাধ্য নন এবং তাঁরা অন্য দলগুলোতে ভিড়ে যাওয়ার কথাও বিবেচনা করতে পারেন। বিশেষ করে ইমরান খান যখন জেলে, তখন এ ধরনের সিদ্ধান্ত তাঁদের প্রভাবিত করতে পারে। নির্বাচনের পর সরকার গঠনের জন্য কোনো দলকে প্রয়োজনীয় সংসদীয় আসনের জন্য পিটিআইয়ের প্রার্থীদের আনুগত্য গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠতে পারে।

 

সর্বশেষ খবর