বুধবার, ৭ ফেব্রুয়ারি, ২০২৪ ০০:০০ টা

ক্ষোভে ফুঁসছে জাহাঙ্গীরনগর

টর্চার সেল ৩১৭ নম্বর কক্ষ সিলগালা

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধি

বহিরাগত এক দম্পতিকে ডেকে এনে স্বামীকে আবাসিক হলে আটকে রেখে স্ত্রীকে সংঘবদ্ধ ধর্ষণের ঘটনায় ক্ষোভে ফুঁসছে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়। ঘটনার পরদিন থেকেই টানা বিক্ষোভ সমাবেশ, মশাল মিছিলসহ নানা কমসূচি পালন করছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা। ধর্ষণের তৃতীয় দিনেও গতকাল মঙ্গলবার দুপুর ১২টা থেকে ২টা পর্যন্ত মানববন্ধন করেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা। জাবির কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের সামনের সড়কে শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের প্ল্যাটফর্ম ‘নিপীড়নবিরোধী মঞ্চ’-এর ব্যানারে অনুষ্ঠিত এ মানববন্ধনে প্রায় ২ শতাধিক শিক্ষক-শিক্ষার্থী অংশ নেন। এ সময় বক্তারা ধর্ষণের ঘটনায় জড়িতদের সর্বোচ্চ শাস্তি, আবাসিক হল থেকে অছাত্রদের বের করা, বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর আ স ম ফিরোজ-উল-হাসান ও মীর মশাররফ হোসেন হলের প্রাধ্যক্ষ অধ্যাপক সাব্বির আলমের পদত্যাগ এবং যৌন নিপীড়নে অভিযুক্ত পাবলিক হেলথ অ্যান্ড ইনফরমেটিক্স বিভাগের শিক্ষক মাহমুদুর রহমান জনির অব্যাহতির দাবি জানান। এসব দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দেন তারা।

মানববন্ধনে ইতিহাস বিভাগের অধ্যাপক আনিছা পারভীন জলী বলেন, ধর্ষণের ঘটনার তিন দিন পরও হল থেকে অছাত্রদের বের করা হয়নি। প্রশাসন অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে থানায় মামলা করার কথা বলে শুধু একটি অভিযোগ দায়ের করেছে। এমনকি অভিযুক্তদের সনদ স্থায়ীভাবে বাতিলের কথা থাকলেও তারা সনদ স্থগিত করে। আমরা বারবার দেখেছি উপাচার্য যেকোনো আন্দোলনের সময় আশ্বাস দিয়ে তার কথা বাস্তবায়ন করেন না। যেমনটি আমরা মাহমুদুর রহমান জনির যৌন নিপীড়নের ক্ষেত্রে দেখেছি। দেড় বছর পার হয়ে গেলেও জনিকে শাস্তি দেওয়া হয়নি। বহিরাগত নারীকে ধর্ষণের ঘটনায় জড়িতদের খুঁজে বের করতে প্রক্টর, প্রভোস্ট না গিয়ে তারা দুজন ছাত্রলীগ নেতাকে পাঠিয়েছে অপরাধীদের ধরে আনার জন্য। এ থেকে বোঝা যায়, প্রক্টর, প্রভোস্ট তাদের পদে থাকার নৈতিক অবস্থান হারিয়েছেন। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে অছাত্র ও অপরাধীদের আশ্রয়দাতা ও অভিভাবক হিসেবে আখ্যায়িত করে আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দেন নিপীড়নবিরোধী মঞ্চের আহ্বায়ক দর্শন বিভাগের অধ্যাপক রায়হান রাইন। 

মানববন্ধনে বিশ্ববিদ্যালয়ের সাংবাদিকতা ও গণমাধ্যম অধ্যায়ন বিভাগের স্নাতকোত্তরের (৪৮ ব্যাচ) শিক্ষার্থী মো. হাসিব জামানের সঞ্চালনায় বক্তব্য রাখেন সরকার ও রাজনীতি বিভাগের অধ্যাপক শামসুল আলম সেলিম, দর্শন বিভাগের অধ্যাপক মোহাম্মদ কামরুল আহসান ও এ এস এম আনোয়ারুল্লাহ ভূঁঁইয়া, ইতিহাস বিভাগের অধ্যাপক মো. গোলাম রব্বানী, ফার্মেসি বিভাগের অধ্যাপক মাফরুহী সাত্তার, দর্শন বিভাগের শিক্ষক মাহমুদা আকন্দ প্রমুখ।

মানববন্ধন শেষে ওইদিন বিকাল ৫টার দিকে নিপীড়নবিরোধী মঞ্চের বিক্ষুব্ধ সদস্যরা দাবিগুলোর বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. নূরুল আলমের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। এ সময় উপাচার্য কিছুদিন সময় চাইলে নাকচ করে দেন বিক্ষুব্ধরা। তারা আজ দুপুর ২টা থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের নতুন প্রশাসনিক ভবনের সামনে অবস্থান কর্মসূচি পালন এবং অনুষ্ঠিতব্য সিন্ডিকেট সভা হতে দেওয়া হবে না বলে ঘোষণা দেন। এদিকে আজ দুপুুর ১২টায় ধর্ষণের ঘটনায় জড়িতদের শাস্তিসহ গত ৪ ফেব্রুয়ারি অনুষ্ঠিত জরুরি সিন্ডিকেট সভার সিদ্ধান্তগুলো বাস্তবায়নের দাবিতে মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করা হবে বলে এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তি দিয়েছে জাবি শিক্ষক সমিতি। গত ৩ ফেব্রুয়ারির ধর্ষণের ঘটনায় এখনো ধরাছোঁয়ার বাইরে আছে মূল অভিযুক্ত বহিরাগত মামুনুর রশীদ মামুন (৪৫) ও সহযোগী বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের শিক্ষার্থী মো. মুরাদ। জানা যায়, মামুুনের বাড়ি নওগাঁ জেলার পত্নীতলা। তার বাবার নাম হাসির উদ্দিন। পলাতকদের গ্রেফতারের বিষয়ে আশুলিয়া থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মোহাম্মদ মাসুদুর রহমান বলেন, ‘পলাতক দুজনের অনুসন্ধানে আমাদের টিম কাজ করছে। খোঁজ পাওয়া মাত্রই আপনাদের জানানো হবে।’ এ ঘটনায় ঢাকা জেলা র‌্যাব-৪ ও কাজ করছে বলে বিশ্বস্ত সূত্রে জানা গেছে।

অপরদিকে জাবির মীর মশাররফ হোসেন হলের ৩১৭ নম্বর কক্ষে ধর্ষণের ঘটনায় অভিযুক্ত ও শাখা ছাত্রলীগের আন্তর্জাতিক বিষয় সম্পাদক মোস্তাফিজুর রহমান থাকতেন। ওই কক্ষ তার এবং হলটির ছাত্রলীগ নেতাদের বিভিন্ন অপকর্মের সাক্ষী। কক্ষটি নিয়মিত ইয়াবা, মদ সেবনের কাজে ব্যবহার করা হতো। এ ছাড়া, কক্ষটিতে বহিরাগত এবং শিক্ষার্থীদের ধরে নিয়ে গিয়ে চাঁদাবাজি ও মুক্তিপণের জন্য নির্যাতন করা হতো বলে জানা যায়। যে কারণে কক্ষটি শিক্ষার্থীদের কাছে ‘টর্চার সেল’ হিসেবে পরিচিত। সম্প্রতি ধর্ষণের ঘটনায় কক্ষটিকে সিলগালা করা হয়েছে বলে জানান মীর মশাররফ হলের প্রাধ্যক্ষ অধ্যাপক সাব্বির আলম।

সর্বশেষ খবর