বৃহস্পতিবার, ৮ ফেব্রুয়ারি, ২০২৪ ০০:০০ টা

পালাচ্ছে মিয়ানমার সেনারা

নতুন ৬৪ জনসহ মিয়ানমারের ৩২৮ সীমান্তরক্ষী বাংলাদেশে। থামছে না গোলাগুলি জনশূন্য ঘুমধুম ও তুমব্রু সীমান্ত এলাকা। আরও ঘাঁটি দখলের দাবি আরাকান আর্মির

নিজস্ব প্রতিবেদক

পালাচ্ছে মিয়ানমার সেনারা

মিয়ানমার সীমান্তরক্ষী বাহিনী (বিজিপি) সদস্যদের আরও একটি দল গতকাল বাংলাদেশে পালিয়ে আসে -এএফপি

মিয়ানমারের বিদ্রোহী গোষ্ঠীগুলোর উপর্যুপরি হামলায় প্রাণ বাঁচাতে পালাচ্ছে দেশটির সরকারি বাহিনী। মিয়ানমার সামরিক বাহিনীর আরও দুটি হেডকোয়ার্টার দখলে নেওয়ার দাবি করেছে বিদ্রোহী গোষ্ঠী আরাকান আর্মি। বিদ্রোহীদের হামলায় গতকালও কক্সবাজারের টেকনাফের হোয়াইক্যং উলুবনিয়া সীমান্ত দিয়ে মিয়ানমারের বর্ডার গার্ড পুলিশের (বিজিপি) আরও ৬৪ সদস্য পালিয়ে এসেছে বাংলাদেশে। এ নিয়ে গত কয়েকদিনে ৩২৮ বিজিপি সদস্য প্রাণ বাঁচাতে আশ্রয় নিয়েছে বাংলাদেশে। তাদের অনেকেই আহত। বাংলাদেশের সীমান্তরক্ষী বাহিনী-বিজিবি পালিয়ে আসাদের নিরস্ত্র করে আহতদের হাসপাতালে ভর্তি করেছে। এদিকে গতকাল সকালেও বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ির ঘুমধুম-তুমব্রু সংলগ্ন বাংলাদেশ-মিয়ানমার সীমান্তের ওপারে থেমে থেমে গোলাগুলির শব্দ শোনা গেছে। যদিও গত কয়েকদিনের চেয়ে গুলির শব্দ কিছুটা কমেছে। তবে মিয়ানমারের বিদ্রোহী গোষ্ঠী ও সরকারি বাহিনীর এ যুদ্ধে ওপার থেকে ছুটে আসা গুলিতে বাংলাদেশে মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে। আহত হয়েছে অনেকে। পুড়ে গেছে ঘরবাড়ি, দোকানপাট। আতঙ্কে জনশূন্য হয়ে গেছে সীমান্ত এলাকা। ঘুমধুম-তুমব্রুর অন্তত ৫ হাজার মানুষ এখন ঘরছাড়া। তারা অন্যত্র আত্মীয়স্বজনের বাড়িতে আশ্রয় নিয়েছে।

সামরিক বাহিনীর হেডকোয়ার্টার দখল : গত কয়েকদিনের যুদ্ধে মিয়ানমার সামরিক বাহিনীর বিভিন্ন ঘাঁটি ও প্রহরাচৌকি দখলে নিয়েছে দেশটির বিদ্রোহী গ্রুপ আরাকান আর্মি। সোম ও মঙ্গলবার সামরিক বাহিনীর আরও দুটি বড় হেডকোয়ার্টার আরাকান আর্মি দখল করে নিয়েছে বলে জানিয়েছে মিয়ানমারের সংবাদমাধ্যম দ্য ইরাবতী। এ দুটি হেডকোয়ার্টার হলো রাখাইন রাজ্যের মরাউক ইউ ও কাউকতোয়া টাউন এলাকায়। আরাকান আর্মি বলেছে, তারা মরাউক ইউ অঞ্চলে কয়েক দিন তীব্র যুদ্ধের পর সোমবার সকালে দখল করে নিয়েছে লাইট ইনফ্যান্ট্রি ব্যাটালিয়ন (এলআইবি) ৩৭৮ হেডকোয়ার্টার। মঙ্গলবার দখল করেছে পাশের এলআইবি ৫৪০ হেডকোয়ার্টার। পাশাপাশি হামলা চালিয়েছে এলআইবি ৩৭৭ ঘাঁটিতে। এ তিনটি ব্যাটালিয়ন মরাউক ইউ আর্কিওলজিক্যাল মিউজিয়ামে গোলা নিক্ষেপ করছিল। এটি হলো মরাউক ইউ কিংডমের ঐতিহাসিক রাজধানী। এ ছাড়া ২ ফেব্রুয়ারি কাউকতোয়া টাউনশিপের এলআইবি ৩৭৬ হেডকোয়ার্টার দখল করে আরাকান আর্মি। হামলা চালায় মিনবিয়া, কাউকতোয়া ও মরাউক ইউ টাউনে।

নতুন করে পালিয়ে এসেছে বিজিপির ৬৪ সদস্য : মঙ্গলবার মধ্যরাত থেকে গতকাল দুপুর পর্যন্ত সীমান্তের কাছাকাছি গোলাগুলির শব্দ অনেকটা কমেছে। এতে সীমান্তবাসীর মধ্যে কিছুটা স্বস্তি দেখা গেছে। এ পরিস্থিতিতেও গতকাল সীমান্ত দিয়ে বিজিপির আরও ৬৪ সদস্য পালিয়ে এসেছে বাংলাদেশে। এর মধ্যে দুপুর পর্যন্ত ৬৩ ও সন্ধ্যায় একজন প্রবেশ করে বলে জানা গেছে। গতকাল উলুবনিয়া সীমান্ত দিয়ে বিজিপির এ ৬৪ সদস্য পালিয়ে আসে বলে নিশ্চিত করেছেন হোয়াইক্যং ইউপি চেয়ারম্যান নুর আহমদ আনোয়ারি। তিনি জানান, পালিয়ে আসাদের অস্ত্র জমা নিয়ে বিজিবি হেফাজতে নেওয়া হয়েছে। বিজিবি সদর দফতরের জনসংযোগ কর্মকর্তা মো. শরিফুল ইসলাম জানিয়েছেন, পালিয়ে আসাদের মধ্যে দেশটির সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিজিপি, সেনা, পুলিশ, ইমিগ্রেশন সদস্য ও বেসামরিক নাগরিক রয়েছে।

পালংখালী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান গফুর উদ্দিন চৌধুরী জানিয়েছেন, মিয়ানমারের অভ্যন্তরে সংঘাত মঙ্গলবার মধ্যরাত থেকে বন্ধ বলা যায়। বিচ্ছিন্ন কিছু শব্দ শোনা গেলেও গোলাগুলির শব্দ আর নেই।

ঘুমধুম-তুমব্রু এলাকার ৫ হাজার মানুষ ঘরছাড়া : তুমব্রু কোনারপাড়ার বাসিন্দা ও আনসার-ভিডিপির ইউনিয়ন কমান্ডার শাহজাহান (৪০) জানিয়েছেন, সীমান্তে অস্থিরতার কারণে ঘুমধুম-তুমব্রুর ৫ হাজারের বেশি মানুষ ঘরবাড়ি ছেড়ে অন্যত্র চলে গেছে। বেশির ভাগ লোকজন আত্মীয়স্বজনের বাড়ি আশ্রয় নিয়েছে বলে ধারণা তার। সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, তুমব্রু পশ্চিমকূল গ্রামের দিনমজুর আনোয়ার হোসেনের (৩৩) পরিবারে মোট সদস্য ১১ জন। বর্তমানে তিনি ছাড়া আর কেউ বাড়ি নেই। তাকেও পাওয়া যায় একটি ব্রিজের নিচে। গরু-ছাগল, হাঁস-মুরগি, খেতখামার দেখাশোনার জন্য রয়ে গেছেন তিনি। আনোয়ার হোসেন বলেন, কখন মিয়ানমার থেকে মর্টার শেল অথবা গোলাবারুদ এসে পড়ে তার নিশ্চয়তা নেই। মিয়ানমারের হেলিকপ্টার কিংবা যুদ্ধবিমান দেখলেই তিনি ব্রিজের নিচে ঢুকে পড়েন। ঘুমধুম ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান জাহাঙ্গীর আজিজ জানান, গোলাগুলির শব্দ কমে আসায় ঘুমধুমের বেতবুনিয়া বাজারে কয়েকটি দোকানপাট খুলেছে।

সেন্টমার্টিনে নৌ চলাচল বন্ধ : মিয়ানমারে সংঘাতে সীমান্তে নিরাপত্তার কারণে কক্সবাজারের টেকনাফ থেকে সেন্টমার্টিনের পথে পর্যটকবাহী জাহাজসহ সব ধরনের নৌ চলাচল বন্ধ ঘোষণা করেছে প্রশাসন। ১০ ফেব্রুয়ারি থেকে অনির্দিষ্টকালের জন্য এ সিদ্ধান্ত বলবৎ থাকবে বলে জানিয়েছেন টেকনাফের ইউএনও আদনান চৌধুরী। গতকাল সন্ধ্যায় কক্সবাজার জেলা প্রশাসনের কার্যালয়ে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করে এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় বলে জানান তিনি।

সর্বশেষ খবর