বৃহস্পতিবার, ৮ ফেব্রুয়ারি, ২০২৪ ০০:০০ টা

জাবিতে ধর্ষণবিরোধী আন্দোলন তুঙ্গে

♦ প্রক্টর ও প্রাধ্যক্ষের পদত্যাগ দাবি ♦ আন্দোলনের মুখে সিন্ডিকেট সভা বাতিল ♦ দুই আসামি গ্রেফতার

জাবি প্রতিনিধি

জাবিতে ধর্ষণবিরোধী আন্দোলন তুঙ্গে

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় (জাবি) ক্যাম্পাসে বহিরাগত গৃহবধূকে ধর্ষণের পর থেকে ধারাবাহিক আন্দোলনে রয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা। ঘটনার পরদিন থেকেই অভিযুক্তদের শাস্তির দাবিতে টানা বিক্ষোভ সমাবেশ, মশাল মিছিলসহ নানা   কর্মসূচি পালন করছেন তারা। সময় যতই যাচ্ছে ততই ধর্ষণবিরোধী আন্দোলন জোরদার হচ্ছে। এবার বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর আ স ম ফিরোজ-উল-হাসান ও মীর মশাররফ হোসেন হলের প্রাধ্যক্ষ অধ্যাপক সাব্বির আলমের বিরুদ্ধে ধর্ষণের ঘটনার রাতে অভিযুক্তদের পালাতে সহায়তা করার অভিযোগ তুলে তাদের পদত্যাগ দাবি করছেন আন্দোলনকারীরা। গতকাল দুপুর দেড়টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের নতুন প্রশাসনিক ভবনের সামনে অনুষ্ঠিত বিক্ষোভ সমাবেশে এ দাবি জানান নিপীড়নবিরোধী মঞ্চের বক্তারা। এ সময় তারা ধর্ষণের ঘটনায় জড়িতদের সর্বোচ্চ শাস্তি, আবাসিক হল থেকে অছাত্রদের বের করা এবং যৌন নিপীড়নে অভিযুক্ত পাবলিক হেলথ অ্যান্ড ইনফরমেটিক্স বিভাগের শিক্ষক মাহমুদুর রহমান জনির অব্যাহতির দাবি জানান। এসব দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দেন তারা। সমাবেশে বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগের অধ্যাপক আনিছা পারভীন জলি বলেন, ধর্ষণের ঘটনার চার দিন পরও হল থেকে অছাত্রদের বের করা হয়নি। অথচ প্রশাসনের প্রতিশ্রুতি দেওয়া পাঁচ কর্মদিবস শেষ হয়ে যাচ্ছে। এমনকি যৌন নিপীড়নে অভিযুক্ত শিক্ষক জনির তদন্ত কমিটির সভাপতি উপাচার্য নিজে হওয়া সত্ত্বেও এখনো কোনো শাস্তি দেওয়া হয়নি। আমরা জনির অব্যাহতির দাবি জানাই। এ ছাড়া ধর্ষণের ঘটনার রাতে প্রক্টর ও প্রাধ্যক্ষ কেন তাদের প্রক্টোরিয়াল বডির সদস্যদের না পাঠিয়ে দুজন ছাত্রলীগ নেতাকে পাঠালেন অভিযুক্তদের খুঁজে ধরে আনার জন্য তার তদন্ত হওয়া দরকার। যদি দাবিগুলো বাস্তবায়িত না হয় তবে আমাদের আন্দোলন চলবে।

এর আগে সকাল ১০টায় অভিযুক্তদের সর্বোচ্চ শাস্তি ফাঁসির দাবি জানিয়ে মানববন্ধন করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্টার্ড গ্র্যাজুয়েটরা। মানববন্ধনে জাবির সাবেক উপাচার্য ও সিনেটর অধ্যাপক শরীফ এনামুল কবির বলেন, বর্তমান উপাচার্য গণতান্ত্রিক উপায়ে নির্বাচিত ভিসি। তাহলে অছাত্র, ধর্ষক ও নিপীড়কদের শাস্তি দিতে ওনার ভয় কোথায়? অছাত্রদের দ্রুত হল থেকে বের করুন। রাষ্ট্রের কাছে আমি ধর্ষণের ঘটনায় জড়িতদের ফাঁসির দাবি করছি। ওইদিন দুপুর ১২টায় শহীদ মিনারসংলগ্ন সড়কে জাবি শিক্ষক সমিতির ব্যানারে মানববন্ধন করেছেন শিক্ষকরা। এতে বিভিন্ন বিভাগের দেড় শতাধিক শিক্ষক উপস্থিত ছিলেন। একই দাবিতে ওইদিন বিকাল সাড়ে ৩টায় এবং ৫টায় বিক্ষোভ মিছিল করেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রগতিশীল শিক্ষার্থীরা। মিছিলে জাবি ছাত্র ইউনিয়ন সংসদ এবং জাহাঙ্গীরনগর সাংস্কৃতিক জোটের নেতা-কর্মীরাও অংশ নেন। এদিকে নিপীড়নবিরোধী মঞ্চের পূর্ব ঘোষিত সিন্ডিকেট সভা ঘেরাও কর্মসূচির কারণে গতকাল বিকাল ৩টায় নিয়মিত সিন্ডিকেট সভা অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা থাকলেও বাতিল করে দেয় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। যতদিন ধর্ষণের ঘটনায় জড়িতদের শাস্তিসহ বাকি দাবিগুলো বাস্তবায়ন না হবে ততদিন কোনো সিন্ডিকেট সভা হতে দেওয়া হবে না বলে জানিয়েছেন নিপীড়নবিরোধী মঞ্চের শিক্ষক নেতারা।

জাবিতে ধর্ষণের মামলায় দুজন গ্রেফতার:  জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের (জাবি) মীর মশাররফ হলের কক্ষে স্বামীকে আটকে রেখে স্ত্রীকে ধর্ষণের ঘটনার মূল পরিকল্পনাকারী মামুনুর রশিদ ওরফে মামুনসহ দুজনকে গ্রেফতার করেছে র‌্যাব। গত রাতে র‌্যাবের লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। তিনি বলেন, দলবদ্ধ ধর্ষণের মূল পরিকল্পনাকারী মামুনুর রশিদ মামুনকে রাজধানীর ফার্মগেট থেকে গ্রেফতার করা হয়েছে। এ ছাড়া ধর্ষণের অন্যতম সহায়তাকারী মো. মুরাদকে নওগাঁ থেকে গ্রেফতার করেছে র‌্যাব সদস্যরা। এ বিষয়ে বিস্তারিত পরে জানানো হবে।

জাবির ধর্ষণকাণ্ডে কমিটি গঠন ইউজিসির : জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে ধর্ষণের বিষয়ে পর্যালোচনা করতে তিন সদস্যের একটি কমিটি গঠন করেছে বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি)। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ ধর্ষণের ঘটনায় কী ব্যবস্থা নিয়েছে এবং কেন এমন ন্যক্কারজনক ঘটনা ঘটছে সেটি খতিয়ে দেখবে এ কমিটি। কমিটির সদস্যরা আজ বৃহস্পতিবার বিশ্ববিদ্যালয় পরিদর্শন করবেন। অভিযোগ প্রতিকার ব্যবস্থা এবং জিআরএস সফটওয়্যারবিষয়ক এক কর্মশালায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে ইউজিসি চেয়ারম্যান প্রফেসর ড. মুহাম্মদ আলমগীর  জাবির ধর্ষণের অভিযোগের ঘটনায় কমিটি গঠনের কথা জানান।

গতকাল ইউজিসিতে দিনব্যাপী এ কর্মশালা অনুষ্ঠিত হয়। এতে সভাপতিত্ব করেন কমিশনের সচিব ড. ফেরদৌস জামান।

কর্মশালায় প্রফেসর আলমগীর বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ে যৌন হয়রানিসহ অনিয়মের অভিযোগসমূহের নিখুঁতভাবে পর্যালোচনা ও প্রতিকারে পদক্ষেপ গ্রহণে ইউজিসি শিগগিরই উচ্চক্ষমতাসম্পন্ন একটি সেল গঠন করবে। এখানে দক্ষ কর্মকর্তাদের পদায়ন করা হবে। কোনো বিশ্ববিদ্যালয়ে অনিয়ম ও নিপীড়নের ঘটনা ঘটলে এই সেল তদারকি করবে এবং তদন্তপূর্বক ব্যবস্থা গ্রহণের সুপারিশ করবে।

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে ধর্ষণকাণ্ড বিষয়ে তিনি বলেন, বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ যৌন হয়রানিসহ নানা অপকর্মে দৃশ্যমান ও কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণে ব্যর্থ হয়েছে। এ ছাড়া এসব অপরাধের বিচারের দীর্ঘসূত্রতা ও অপরাধীদের প্রশ্রয়ের কারণে এ বিশ্ববিদ্যালয়ে যৌন হয়রানি ঘটনা রোধ করা সম্ভব হয়নি।  ড. আলমগীর বলেন, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে ধর্ষণ ঘটনা আমাদের মর্মাহত করেছে। বিশ্ববিদ্যালয়ে ধর্ষণের মতো জঘন্য ঘটনা কোনোমতেই গ্রহণযোগ্য নয়। কেন এই বিশ্ববিদ্যালয়ে এমন ঘটনা ঘটছে, তা খতিয়ে দেখে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া দরকার। আবাসিক সুবিধা নিশ্চিত না করে এই বিশ্ববিদ্যালয়ে কীভাবে শিক্ষার্থী ভর্তি করা হচ্ছে এবং অছাত্ররা দিনের পর দিন কীভাবে হলে থাকছে সেটিও খতিয়ে দেখা দরকার বলে তিনি জানান।

সর্বশেষ খবর