শনিবার, ১০ ফেব্রুয়ারি, ২০২৪ ০০:০০ টা
রুহিন হোসেন প্রিন্স

মানুষ মাঠে নামতে ভয় পাচ্ছে

শামীম আহমেদ

মানুষ মাঠে নামতে ভয় পাচ্ছে

বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিবি) সাধারণ সম্পাদক রুহিন হোসেন প্রিন্স বলেছেন, ‘অনেকে মনে করতে পারেন সিপিবির জনসম্পৃক্ততা কমেছে। তবে আমরা তা মনে করি না। আমাদের বিভিন্ন গণসংগঠন- শ্রমিক, কৃষক, ক্ষেতমজুর, ছাত্র, যুব, নারী, সংস্কৃতিক সংগঠনের জলুস না থাকতে পারে, কিন্তু সদস্য কমেনি। বরং নতুন নতুন শাখা গড়ে উঠছে। তবে সাধারণ মানুষ নিজেদের জীবনজীবিকা রক্ষার পাশাপাশি ভয়সহ নানা কারণে আমাদের আন্দোলনে সক্রিয় হতে পারছে না। তবে আন্দোলনের প্রতি তাদের সমর্থন আছে। এটাই আমাদের শক্তি। এ সমর্থন সক্রিয় করার চেষ্টাটাই আমরা করছি।’ বাংলাদেশ প্রতিদিনকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে সিপিবির বিভিন্ন আন্দোলনে জনগণের সাড়া কম থাকা প্রসঙ্গে তিনি এসব কথা বলেন। পুরনো রাজনৈতিক দল হিসেবে গণতান্ত্রিক রাজনীতিতে সিপিবির ভূমিকা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘সিপিবি এ দেশের শ্রমিক শ্রেণি ও শ্রমজীবী মেহনতি মানুষের বিপ্লবী রাজনৈতিক দল। সমাজতন্ত্র ও সাম্যবাদ প্রতিষ্ঠাই আমাদের লক্ষ্য। এখন এমন একটা সময়, যখন রাজনীতিতে কেনাবেচাই প্রধান। অগণতান্ত্রিক ও পুঁজিবাদী শাসনব্যবস্থা সাধারণ মানুষকে ভয় ও লোভের মধ্যে ফেলে দিয়েছে। এখন দ্বিদলীয় ধারা এমনভাবে সামনে আনা হয়েছে যে, এ দুই মেরুকরণ ছাড়া মানুষের সামনে বিকল্প নেই। এর মধ্যে সিপিবি নীতিনিষ্ঠ অবস্থানে থেকে আন্দোলন করে যাচ্ছে। সাধারণ মানুষের মধ্যে গণতান্ত্রিক চেতনার উন্মেষ ঘটানোর কাজটি সিপিবি করেছে। এর মধ্য দিয়ে হয়তো এখনো আমরা অগণতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থার অবসান ঘটাতে পারিনি, কিন্তু মানুষের মধ্যে এ চেতনা জাগ্রত করার কাজটিও একটি সফলতা।’

সময়ের সঙ্গে দল কতটা তাল মিলিয়ে নিতে পেরেছে- এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘যেনতেনভাবে ক্ষমতার কাছে যাওয়া ও প্রয়োজনে নীতিহীন ভূমিকা পালন করাই যদি সময়ের সঙ্গে তাল মেলানো হয়, তাহলে সিপিবি এর মধ্যে নেই। নীতিহীন, সংকটপূর্ণ সময়ে নীতিনিষ্ঠ অবস্থান বজায় রেখে কর্মকাণ্ড পরিচালনা করাও অন্যতম একটি কর্তব্য। সে বিবেচনায় সিপিবি দায়িত্বশীল আচরণ করছে।’

প্রবীণ এই রাজনীতিক বলেন, ‘সিপিবি জাতীয় রাজনীতির ইস্যু ছাড়াও মানুষের জীবনজীবিকা ও স্থানীয় সংকট সমাধানের আন্দোলনে অন্যতম অগ্রবাহিনী। এসব আন্দোলনে ব্যাপক মানুষকে মাঠে নামানোর সফলতা আমাদের আছে। তেল, গ্যাস, খনিজ সম্পদ রক্ষা আন্দোলন, পরিবেশ রক্ষা আন্দোলন, মূল্যবৃদ্ধির প্রতিবাদে আন্দোলন, শ্রমিকের ন্যায্য মজুরি, কৃষকের ফসলের ন্যায্যমূল্য প্রাপ্তির বিভিন্ন স্থানীয় আন্দোলনে ব্যাপক মানুষ সাড়া দিয়েছে। সব খবর হয়তো পত্রিকায় আসে না। তবে এও ঠিক জাতীয় পর্যায়ে আমরা এখনো যথাযথভাবে সাড়া ফেলতে পারিনি। তার একটা কারণ এই- অগণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় মানুষ মাঠে নামতে ভয় পায়। এ ছাড়া আত্মসমালোচনা করলে বলতে হয় আমরা এখন পর্যন্ত এমন শক্তি হয়ে উঠতে পারিনি যে মানুষ আমাদের ওপর পুরোপুরি ভরসা করে লোভ ও ভয় উপেক্ষা করে রাজপথে নামবে।’ তিনি বলেন, ‘ক্ষমতার কোনো অনাকাক্সিক্ষত খুঁটির ওপর ভর করে আমরা ক্ষমতা পরিবর্তনের কথা ভাবি না। জনগণের শক্তির ওপর ভরসা রেখে ক্ষমতার পরিবর্তনের প্রচেষ্টা চালিয়ে যাই। বাংলাদেশের ইতিহাসের দিকে তাকালে দেখা যাবে যতই কর্তৃত্ববাদী ও স্বৈরাচারী সরকার হোক না কেন, জনমত সংগঠিত করে গণ আন্দোলনের ধারা তৈরি করতে পারলে তারা ক্ষমতায় থাকতে পারে না। আমরা সে কাজটি করার পথে আছি।’

সিপিবি উপজেলা নির্বাচনে অংশগ্রহণ করবে কি না- এমন প্রশ্নে দলটির সাধারণ সম্পাদক বলেন, ‘স্থানীয় সরকারের ক্ষমতায়ন ও কার্যকর ভূমিকার জন্য আমরা লড়াই করছি। এজন্য নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতে চাই। কিন্তু প্রশ্ন হলো, দেশে কি নির্বাচনি পরিবেশ আছে? নির্বাচন শুধু ক্ষমতাসীন দলের আধিপত্য নয়, টাকার খেলা ও পেশিশক্তির কাছেও বন্দি। পত্রিকায় দেখলাম, ২ লাখ টাকা ছাড়া নাকি উপজেলা নির্বাচনে মনোনয়নপত্রই কেনা যাবে না! এতেই পরিষ্কার কাদের জন্য নির্বাচন উন্মুক্ত করা হচ্ছে। এরা নির্বাচিত হলে আগে এ টাকা লাভসহ উসুল করবে। এ ছাড়া “আমি ও ডামি”র জাতীয় সংসদ নির্বাচনের দগদগে ঘা এখনো শুকায়নি। কর্তৃত্ববাদী শাসক তাদের অনুকূলে রেখে স্থানীয় সরকার নির্বাচন করতে চাইবে। এসব বিবেচনায় এখনো কোনো নির্বাচনি পরিবেশ আমরা দেখছি না। এ নির্বাচনে রাজনৈতিক মহলের আগ্রহও দেখা যাচ্ছে না। তাই সময় হলে এ বিষয়ে আমাদের সিদ্ধান্ত দেশবাসীকে জানাব।’

 

সর্বশেষ খবর