শিরোনাম
সোমবার, ১২ ফেব্রুয়ারি, ২০২৪ ০০:০০ টা
সাক্ষাৎকার - মাহমুদুর রহমান মান্না

ক্ষমতার মুখোমুখি দাঁড়াতে হবে

শফিউল আলম দোলন

ক্ষমতার মুখোমুখি দাঁড়াতে হবে

নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না বলেছেন, ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সরকার তাদের ‘অবৈধ ক্ষমতা’ টিকিয়ে রাখতে রাষ্ট্র ক্ষমতাকে ব্যবহার করছে। জনস্বার্থের বিরুদ্ধে ব্যবহৃত রাষ্ট্রক্ষমতার মুখোমুখি দাঁড়ানো ছাড়া এই সরকারকে সরানো যাবে না। অবৈধ সরকারকে হটিয়ে জনগণের সরকার প্রতিষ্ঠা করতে হলে শুধুমাত্র সভা-সমাবেশ করে সুবোধ বালকের মতো বাড়ি চলে গেলে হবে না। মুখোমুখি দাঁড়িয়ে এদের প্রতিহত করতে হবে।

গতকাল বাংলাদেশ প্রতিদিনের সঙ্গে এক সাক্ষাৎকারে এসব কথা বলেন তিনি। মান্না বলেন, বাংলাদেশের ৯৫ ভাগেরও বেশি মানুষ এই সরকারকে ক্ষমতায় দেখতে চায় না। একটা সমাবেশ ডাকলে লাখ লাখ মানুষ এসে উপস্থিত হন এই সরকারের বিরুদ্ধে অনাস্থা জানাতে। কিন্তু নির্লজ্জ সরকার জনমতের কোনো তোয়াক্কাই করে না।

এজন্য তারা যাতে জনগণের দাবি আমলে নিতে বাধ্য হয় সেই ব্যবস্থা নিতে হবে। আন্দোলনের সঠিক জোয়ার তুলতে পারলে এই সরকার ক্ষমতা থেকে বিদায় নিতে বাধ্য হবে। ডাকসুর এই সাবেক ভিপি বলেন, ৭ জানুয়ারির নির্বাচনের নামে গঠিত এ সরকারের টিকে থাকার পক্ষে কোনো ‘ফ্যাক্টর’ আমি দেখি না। তারপরও তারা ক্ষমতা ছেড়ে যাচ্ছে না। কারণ রাষ্ট্রযন্ত্রের কিছু সংখ্যক সুবিধাভুগী ব্যক্তিকে তারা আর্থিকসহ নানা অবৈধ সুবিধা দিয়ে এক করে যে কোনো মূল্যে ক্ষমতায় থাকার চেষ্টা করছে। দেশটা শেষ হয়ে গেলেও তাদের কিছু যায়-আসে না। মাহমুদুর রহমান মান্না বলেন, ক্ষমতাসীনরা শুধু ভোটের অধিকার আর গণতন্ত্রই নষ্ট করেনি, পুরো সমাজব্যবস্থাটাকেই তারা ধ্বংস করে দিয়েছে। মানুষের প্রতি মানুষের সহানুভূতি কমে যাচ্ছে, এক দলের মানুষ এখন আরেক দলের মানুষের সঙ্গে কোথাও বসা তো দূরের কথা, একজনের মুখ পর্যন্তও আরেক জন দেখতে চায় না। এমন অবস্থা তৈরি করেছে এই সরকার। এহেন কোনো অপরাধ নেই যে, তারা করছে না। সামাজিক অবক্ষয় এখন চরম সীমায় গিয়ে ঠেকেছে। আইনের শাসন, ন্যায়বিচার বলতে আর কিছুই অবশিষ্ট রাখেনি। দেশের অর্থনীতি ভেস্তে গেছে। ডলার সংকট দিনকে দিন বাড়তে বাড়তে এমন পর্যায়ে গেছে যে, এখন নিত্যপ্রয়োজনীয় খাদ্যদ্রব্য পর্যন্তও আমদানি করতে পারছে না। তাছাড়া রয়েছে ক্ষমতাসীনদের ভয়ানক সিন্ডিকেটের প্রভাব। এই সিন্ডিকেটের কারণে দ্রব্যমূল্য আকাশচুম্বি। সরকার কিছুতেই নিয়ন্ত্রণ করতে পারছে না। প্রধানমন্ত্রী নিজেও কয়েকদিন ধরে হুমকি-ধমকি দিচ্ছেন, কিন্তু তার এই ধমকিতে কোনো কাজই হচ্ছে না। নাগরিক ঐক্যের সভাপতি আন্তর্জাতিক বিশ্বের অবস্থানের কথা বর্ণনা করে বলেন, যুক্তরাষ্ট্র এবং ইউরোপের দেশগুলো পরিষ্কার বলে দিয়েছে যে, ৭ জানুয়ারির নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য হয়নি। তারা কেউ এই নির্বাচনকে গ্রহণ করেনি। শুধুমাত্র চীন, রাশিয়া আর ভারত এ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের পক্ষ নিয়েছে। তার মধ্যেও চীন ও রাশিয়া বাংলাদেশকে যে ঋণ দিয়েছে, সেই ঋণের কিস্তির টাকা ফেরত চাওয়া শুরু করেছে। দেশের অর্থনীতি ও সরকারের কি অবস্থা, এতেই বোঝা যায়। মাহমুদুর রহমান মান্না বলেন, এ অবস্থায় আমাদের ঠিক করতে হবে আমরা আন্দোলনটা কীভাবে করব। নাগরিক ঐক্যের পক্ষ থেকে আমরা গণস্বাক্ষর অভিযান শুরু করেছি। এতে আমরা প্রতিদিনই দেখতে পাচ্ছি, সরকার পরিবর্তনের জন্য মানুষের ইচ্ছা ও আগ্রহ কতটা প্রবল। রিকশাচালকরা পর্যন্ত তাদের রিকশা চালানো বন্ধ রেখে এসে স্বাক্ষর করে যাচ্ছেন। আর আমাদের বলছে, আপনারা কিছুতেই হাল ছাড়বেন না। মান্না বলেন, হাতি যেমন তার বিশাল শরীর নিজে দেখতে না পেরে তার শক্তি সম্পর্কে কোনো ধারণা করতে পারে না, তেমনি আমরাও আমাদের শক্তি/জনপ্রিয়তা সম্পর্কে ধারণা করতি পারছি না। সারা দেশে বিরোধী দলের আন্দোলনের প্রতি মানুষের সমর্থনকে সঠিকভাবে কাজে লাগাতে পারলেই আন্দোলন সফল হবে। ‘বিরোধী দলের আন্দোলন নিয়ে নেতা-কর্মী কিংবা সাধারণ মানুষ হতাশ কি না?’- এ প্রশ্নের জবাবে গণতন্ত্র মঞ্চের এই শীর্ষ নেতা বলেন, হতাশ হওয়ার প্রশ্নই আসে না। সাধারণ মানুষ আরও বেশি আশাবাদী। আমরাও আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছি। তবে একটু সময় লাগবে। সরকারবিরোধী আন্দোলনে নেতৃত্বাধীন বিরোধী দল বিএনপির হাইকমান্ডসহ সিনিয়র নেতাদের কেউ বিদেশে, কেউ জেলে আছেন। তারা মুক্ত হবার পর তাদের সঙ্গে বসে আলাপ-আলোচনা করেই আমরা পরবর্তী করণীয় সম্পর্কে সিদ্ধান্ত নেব।

সর্বশেষ খবর