শিরোনাম
সোমবার, ১২ ফেব্রুয়ারি, ২০২৪ ০০:০০ টা
ডেইলি স্টার সাংবাদিকের গৃহকর্মী প্রীতি উরাংয়ের মৃত্যু

শাস্তি দাবিতে চা-শ্রমিকদের মানববন্ধন

নিজস্ব প্রতিবেদক

শাস্তি দাবিতে চা-শ্রমিকদের মানববন্ধন

গৃহকর্মী হত্যার বিচার চেয়ে চা-শ্রমিকদের মানববন্ধন -বাংলাদেশ প্রতিদিন

মোহাম্মদপুরে ডেইলি স্টারের নির্বাহী সম্পাদক সৈয়দ আশফাকুল হকের ফ্ল্যাট থেকে পড়ে কিশোরী গৃহকর্মীর মৃত্যুর ঘটনায় সেই ভবনসহ আশপাশের ভবনগুলোর সিসিটিভি ফুটেজ সংগ্রহ করছে পুলিশ। এরই মধ্যে শুরু হয়েছে সংগ্রহকৃত ফুটেজগুলোর চুলচেরা বিশ্লেষণ। তবে পুলিশ বলছে, ২/৭ এর অষ্টম তলার ৮/সি নম্বর ফ্ল্যাটের অভ্যন্তরীণ সিসি ক্যামেরার ব্যাকআপ মেমোরি হাওয়া হয়ে গেছে। খুঁজে পাচ্ছে না পুলিশ। হত্যার অভিযোগে কারান্তরিন সৈয়দ আশফাকুল হক দম্পতি নিজেরাই ব্যাকআপ সরিয়ে রেখেছেন কি না তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। জেলগেটে আজ ফের জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে কারান্তরিন সৈয়দ আশফাকুল হক দম্পতিকে। এদিকে নিহত কিশোরী গৃহকর্মী প্রীতি উরাং-এর খুনিদের শাস্তির দাবিতে মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জে মানববন্ধন করেছেন চা-শ্রমিকরা। প্রীতির নিজ এলাকায় মিরতিংগা চা বাগানে সব শ্রমিক ও জনপ্রতিনিধির ব্যানারে এ মানববন্ধন আয়োজন করা হয়। মোহাম্মদপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. মাহফুজুল হক ভূঞা বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, আলোচিত এই ঘটনাটির তদন্তে সম্ভাব্য সবগুলো দিক খতিয়ে দেখা হচ্ছে। আমরা পাশের একটি ভবনের সিসিটিভি ফুটেজ সংগ্রহ করেছি। তবে ওই ফ্ল্যাটের অভ্যন্তরে থাকা ক্যামেরাগুলোর ব্যাকআপ পাইনি।

জানা গেছে, আলোচিত এই ঘটনায় মোহাম্মদপুর থানায় যে মামলা হয়েছে, তাতে উল্লেখ করা হয়েছে আটককৃত ব্যক্তিরা (আশফাকুল হক ও তার স্ত্রী তানিয়া খন্দকার) অবহেলাজনিতভাবে বাসার জানালায় নিরাপত্তা বেষ্টনী না দিয়ে অরক্ষিত অবস্থায় রাখার কারণে ওই জানালার ফাঁক দিয়ে প্রীতি উড়ান পড়ে গিয়ে গুরুতর রক্তাক্ত জখম হয়ে মৃত্যুবরণ করেছে।

এর আগে ওই বাসায় গৃহ পরিচারিকার কাজ করা অবস্থায় গত বছরের ৪ আগস্ট ফেরদৌসী নামে আরেক গৃহকর্মী নিচে পড়ে গিয়ে রক্তাক্ত জখম হলে বাসার মালিকের বিরুদ্ধে মোহাম্মদপুর থানায় একটি মামলা হয়।

তদন্তসংশ্লিষ্ট সূত্র বলছে, মাত্র ছয় মাসের মধ্যে একই রকম ঘটনার পুনরাবৃত্তি। ফেরদৌসী বেঁচে গেলেও মৃত্যুর কাছে হার মানল প্রীতি। ঘটনার পারিপার্শ্বিকতা এবং পার্শ্ববর্তী ফ্ল্যাটের বাসিন্দাদের কাছ থেকে প্রাপ্ত তথ্য বলছে, বিরূপ পরিস্থিতিতে ছিলেন প্রীতি। এর অন্যতম প্রমাণ হলো গত দুই বছর ধরে তার বাবা-মায়ের সঙ্গে তাকে দেখাও করতে দেওয়া হয়নি। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক তদন্তের সঙ্গে যুক্ত একজন কর্মকর্তা বলেন, বারবার একই ধরনের দুর্ঘটনা ঘটার কথা নয়। ওই বাসায় কেউ না কেউ গৃহকর্মীদের সঙ্গে দুর্ব্যবহার বা শারীরিক-মানসিক নির্যাতন করতেন বলে তারা ধারণা করছেন। এ কারণে গৃহকর্মীরা বাসায় স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করত না। বাসা থেকে পালাতে গিয়ে দুর্ঘটনার শিকার হয়েছে। এ ছাড়া কেউ ধাক্কা দিয়ে ফেলে দিয়েছে কি না তাও খতিয়ে দেখা হচ্ছে। ঘটনাস্থলের পাশের ১/২ নম্বর ভবনের নিরাপত্তাকর্মী আনাস বলছেন, আমি এসে দেখছিলাম মেয়েটি ঝুলছে। তবে ঠিক এক থেকে দেড় মিনিটের মধ্যে মেয়েটি ওই ভবন থেকে নিচে পড়ে যায়। মেয়েটা পড়ার পর অনেক লোকজন ভিড় করে। তবে কেউ মেয়েটাকে ধরছিল না। পরে আমি ও একজন নিউজপেপার বিক্রেতা মেয়েটিকে রিকশায় উঠিয়ে সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালে পাঠিয়ে দিই। 

বিচারের দাবিতে মানববন্ধন : ডেইলি স্টারের নির্বাহী সম্পাদক সৈয়দ আশফাকুল হকের বাসার কিশোরী গৃহকর্মী প্রীতি উরাং-এর খুনিদের শাস্তির দাবিতে মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জে মানববন্ধন করেছেন চা-শ্রমিকরা। প্রীতির নিজ এলাকা মিরতিংগা চা বাগানে সব শ্রমিক ও জনপ্রতিনিধির ব্যানারে শনিবার এ মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়। দুপুর থেকেই মিরতিংগা চা বাগানে শ্রমিকরা জমায়েত হতে থাকেন। চা শ্রমিকরা এ সময় ডেইলি স্টারের নির্বাহী সম্পাদক সৈয়দ আশফাকুলের ফাঁসির দাবিতে স্লোগান দিতে থাকেন। মানববন্ধনে দুনিয়ার মজদুর এক হও, চা শ্রমিক হত্যার বিচার চাই, শিশু প্রীতির খুনিদের বিচার চাই, শিশুশ্রম বন্ধ করুন স্লোগানে প্রকম্পিত হতে থাকে চা বাগান।  মানববন্ধনে স্থানীয় চা বাগানের প্রাথমিক চিকিৎসক সঞ্জয় বাউরীর সঞ্চালনায় বক্তব্য রাখেন রহিমপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ইফতেখার আহমেদ বদরুল, মিরতিংগা চা বাগান পঞ্চায়েত সভাপতি মন্টু অলমিক, আওয়ামী লীগ নেতা সুরুত্যান কান্তি বৈদ্য প্রমুখ।

মানববন্ধনে বক্তারা ঘটনার সুষ্ঠু তদন্তের মাধ্যমে দায়ীদের সর্বোচ্চ শাস্তির দাবি জানান। মানববন্ধনে চা বাগানের শ্রমিকরা অংশগ্রহণের পাশাপাশি স্থানীয় লোকজন ও জনপ্রতিনিধি এবং চা শ্রমিক নেতৃবৃন্দসহ প্রায় ৫ শতাধিক চা শ্রমিক অংশ নেন। বাংলাদেশ চা শ্রমিক ইউনিয়নের মনু-দলই ভ্যালির সভাপতি ধনা বাউরি বলেন, প্রীতি উরাং-এর মৃত্যুটি আসলেই দুঃখজনক। প্রীতি যে ঢাকায় কাজ করতে গেছে, সেটা বাগানের কেউই জানে না। প্রীতির মামা ও ডেইলি স্টারের মৌলভীবাজার প্রতিনিধি সাংবাদিক মিন্টু দিশোয়ারা গোপনে তাকে ঢাকায় পাঠান। আমি প্রীতি হত্যায় জড়িতদের তদন্তসাপেক্ষে সর্বোচ্চ শাস্তির দাবি জানাচ্ছি।’ গত ৬ ফেব্রুয়ারি মঙ্গলবার ঢাকার মোহাম্মদপুরে ইংরেজি পত্রিকা ‘দ্য ডেইলি স্টার’-এর নির্বাহী সম্পাদক সৈয়দ আশফাকুল হকের ঢাকার মোহাম্মদপুরের বাসার ভবন থেকে পড়ে মৃত্যু ঘটে কিশোরী গৃহকর্মী প্রীতি উরাং-এর। এ ঘটনায় বুধবার সকালে মোহাম্মদপুর থানায় মামলা দায়ের করেন প্রীতির বাবা লোকেশ উরাং। মামলায় সাংবাদিক আশফাকুল ও তার স্ত্রী তানিয়া খন্দকারকে আসামি করা হয়। বর্তমানে তারা জেলহাজতে রয়েছেন। আজ তাদের পুলিশ জিজ্ঞাসাবাদ করবে।

সর্বশেষ খবর