মঙ্গলবার, ১৩ ফেব্রুয়ারি, ২০২৪ ০০:০০ টা
আনসার-ভিডিপির জাতীয় সমাবেশে প্রধানমন্ত্রী

১৭ কোটি মানুষের ভাগ্য পরিবর্তন লক্ষ্য

নিজস্ব প্রতিবেদক

১৭ কোটি মানুষের ভাগ্য পরিবর্তন লক্ষ্য

সফিপুরে গতকাল আনসার ও গ্রাম প্রতিরক্ষা বাহিনীর সমাবেশে বক্তব্য রাখেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা -পিআইডি

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ১৭ কোটি মানুষের ভাগ্য পরিবর্তন, নিরাপত্তা বিধান করাই আমাদের লক্ষ্য। সেভাবেই আনসার সদস্যদের কাজ করতে হবে। গতকাল গাজীপুরের সফিপুর আনসার একাডেমিতে বাংলাদেশ আনসার ও গ্রাম প্রতিরক্ষা বাহিনীর ৪৪তম জাতীয় সমাবেশের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।

আনসার বাহিনীর সার্বিক উন্নয়নে সরকার কাজ করে যাচ্ছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, সন্ত্রাস, জঙ্গিবাদ ও মাদকের হাত থেকে আমরা দেশকে রক্ষা করতে চাই। দুর্নীতির বিরুদ্ধে আমাদের অভিযান সবসময় অব্যাহত থাকবে। সেদিকে লক্ষ্য রেখেই আমাদের আনসার বাহিনীর সদস্যরা অর্পিত দায়িত্ব যথাযথভাবে পালন করে যাচ্ছেন এবং আগামীতেও করে যাবেন।

এর আগে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান, জননিরাপত্তা বিভাগের সিনিয়র সচিব মো. মোস্তাফিজুর রহমান, বাংলাদেশ আনসার ও ভিডিপির মহাপরিচালক মেজর জেনারেল এ কে এম আমিনুল হক এবং আনসার ও ভিডিপি একাডেমির কমান্ড্যান্ট মো. নুরুল হাসান ফরিদী আনসার একাডেমির অনুষ্ঠানস্থলে প্রধানমন্ত্রীকে স্বাগত জানান। প্রধানমন্ত্রী নিজ নিজ ক্ষেত্রে অসামান্য অবদানের জন্য ১৮০ জন আনসার ও ভিডিপি সদস্যের মাঝে বিভিন্ন ক্যাটাগরিতে পদক বিতরণ করেন। প্রধানমন্ত্রী খোলা জিপে করে প্যারেড পরিদর্শন করেন এবং মনোজ্ঞ কুচকাওয়াজ প্রত্যক্ষ করেন। সুসজ্জিত প্যারেড তাঁকে রাষ্ট্রীয় সালাম জানায়। পরে তিনি কোরিওগ্রাফি এবং সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান উপভোগ করেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, তাঁর সরকার ঘরে ঘরে বিদ্যুৎ দিয়েছে, অবকাঠামোর উন্নয়ন করেছে। ফলে সাধারণ মানুষের মধ্যে আত্মবিশ্বাস গড়ে উঠেছে। আত্মবিশ্বাস ছাড়া কোনো জাতি এগিয়ে যেতে পারে না। আমাদের সরকার জনগণের মধ্যে সেই আত্মবিশ্বাস তৈরি করতে পেরেছে। যে কোনো অবস্থা মোকাবিলা করার মতো সক্ষমতা আমাদের আছে। ইতোমধ্যে তাঁর সরকার আনসার বাহিনীর কল্যাণে পুরাতন আইন পরিবর্তন করে নতুন আইন প্রণয়ন করেছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘আনসার ব্যাটালিয়ন আইন-২০২৩’ পাস করা হয়েছে। সেখানে চাকরির শুরু থেকেই স্থায়ীকরণের ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। বার্ষিক সম্মানী ভাতা বৃদ্ধি, রেশন বৃদ্ধি, নারী সদস্যদের পোশাক পরিচ্ছদ পরিবর্তনসহ বাহিনীর আধুনিকায়নে তাঁর সরকারের গৃহীত বিভিন্ন পদক্ষেপের কথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ২০০৮ থেকে টানা সরকার পরিচালনার দায়িত্ব পাওয়ায় বাংলাদেশকে আমরা উন্নয়নশীল দেশের মর্যাদায় নিয়ে আসতে পেরেছি। ২০২৬ সাল থেকে উন্নয়নশীল দেশের কার্যক্রম শুরু হবে। তখন আমাদের আরও আন্তরিকতার সঙ্গে কাজ করতে হবে। ২০৪১ সালে যে স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ে তুলব সেখানে আমাদের প্রত্যেকটি বাহিনী বিশেষ করে আনসার বাহিনীও স্মার্ট বাহিনী হিসেবে গড়ে উঠবে এবং দেশের উন্নয়নের সঙ্গে একাত্ম হয়ে কাজ করে যাবে। তিনি বলেন, প্রত্যেকটি গ্রামকে আমরা নিরাপদ ও স্মার্ট গ্রাম হিসেবে গড়ে তুলতে চাই। সেখানে কোনো মানুষ দরিদ্র থাকবে না, ভূমিহীন-গৃহহীন থাকবে না। আমরা প্রতিটি ভূমিহীন-গৃহহীন মানুষকে ঘর করে দিচ্ছি। তাদের জীবন-জীবিকার ব্যবস্থাও করে দিচ্ছি। ক্রীড়া ও সাংস্কৃতিক ক্ষেত্রে আনসার বাহিনীর বলিষ্ঠ অবদানের কথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিভিন্ন ক্রীড়া প্রতিযোগিতায় নিজেদের দক্ষতার পরিচয়স্বরূপ আনসার বাহিনী ‘বাংলাদেশ গেমস’ এ পরপর পাঁচবার চ্যাম্পিয়ন হওয়ার গৌরব অর্জন করেছেন। এই ধারা অব্যাহত রাখতে হবে। আনসার বাহিনীর জন্য একটি ক্রীড়া কমপ্লেক্স নির্মাণের কার্যক্রম প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। সরকার চায় এখান থেকে উদীয়মান এবং খ্যাতিমান ক্রীড়াবিদ তৈরি হবে। তারা যেন দেশের জন্য আরও সুনাম বয়ে আনতে পারে সে পদক্ষেপও সরকার নেবে। তিনি বলেন, গ্রামপর্যায় পর্যন্ত ক্রীড়া ও সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ড যেন অব্যাহত থাকে তার ব্যবস্থাও আমরা করতে চাই। মানুষের পেটের ভাতের সঙ্গে সঙ্গে তাদের মনোরঞ্জনের ব্যবস্থা করা এবং খেলাধুলা, শরীর চর্চার মাধ্যমে শিশুদের ছোটবেলা থেকেই বলিষ্ঠ করে গড়ে তোলাও আমাদের লক্ষ্য।

ভাষা আন্দোলনের মাসে আনসার কমান্ডার আবদুল জব্বারসহ ভাষা আন্দোলনের শহীদদের শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। মুক্তিযুদ্ধে ৬৭০ জন আনসার সদস্যের আত্মাহুতি এবং মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন মুজিবনগরে স্বাধীন বাংলাদেশ সরকার গঠনের সময় তাদের উপস্থিতি ও বাংলাদেশের প্রথম সরকারকে গার্ড অব অনার প্রদানেও আনসার বাহিনীর সদস্যদের কথা স্মরণ করেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, দেশের সর্ববৃহৎ বাহিনী হিসেবে আপনাদের ওপর অর্পিত দায়িত্ব সঠিকভাবে পালন করবেন। জননিরাপত্তা রক্ষায় যে কোনো অশুভ তৎপরতার মোকাবিলা করতে হবে এবং সততা, সাহস ও আন্তরিকতার সঙ্গে আপনারা সেটা রুখে দাঁড়াবেন। তিনি বলেন, জনগণ ও বিনিয়োগের শন্তিপূর্ণ পরিবেশ ধরে রাখা আপনাদের পবিত্র দায়িত্ব। দেশের সার্বিক উন্নয়নের পূর্বশর্ত স্থিতিশীল রাজনৈতিক অবস্থা ও অর্থনৈতিক পরিবেশ এবং গণতান্ত্রিক শাসন ব্যবস্থার ধারাবাহিকতা। সেই পরিবেশ রক্ষার জন্য সবাইকে অনুরোধ জানাচ্ছি। প্রধানমন্ত্রী বলেন, ২০১৩, ১৪ এবং ২০২৩ সালে আমাদের বিরুদ্ধে যখন অগ্নি সন্ত্রাস, রেলে আগুন দেওয়া, রেললাইন কেটে ফেলা, মানুষকে হত্যা করাসহ বিএনপি-জামায়াত যে ধ্বংসাত্মক কাজ করেছিল তখন জাতীয় নিরাপত্তা বিধানে আনসার বাহিনী অত্যন্ত দক্ষতার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করেছে। তিনি বলেন, বাংলাদেশ আনসার ও গ্রাম প্রতিরক্ষা বাহিনীর সদস্য ৬১ লাখ। দুটি নারী ব্যাটালিয়নসহ এতে ৪২টি ব্যাটালিয়ন রয়েছে। এর মধ্যে ১৬টি ব্যাটালিয়নের সদস্যরা পার্বত্য এলাকায় শান্তিশৃঙ্খলা রক্ষায় এবং দুর্গম পাহাড়ি এলাকায় ‘অপারেশন উত্তরণ’ এ দেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব রক্ষায় সেনাবাহিনীর সঙ্গে কাজ করে যাচ্ছেন।

সর্বশেষ খবর