বুধবার, ১৪ ফেব্রুয়ারি, ২০২৪ ০০:০০ টা

খেলাপি ঋণ বেড়েছে ২৫ হাজার কোটি টাকা

নিজস্ব প্রতিবেদক

আইএমএফের প্রেসক্রিপশন, সরকারের উদ্যোগ কোনো কিছুতেই কমছে না খেলাপি ঋণের পরিমাণ। সর্বশেষ তথ্য হচ্ছে, গত এক বছরে ব্যাংকিং খাতে খেলাপি ঋণের পরিমাণ প্রায় ২৫ হাজার কোটি টাকা বেড়ে গেছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদন অনুযায়ী ব্যাংকিং খাতে সাকল্যে খেলাপি ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ১ লাখ ৪৫ হাজার ৬৩৩ কোটি টাকা। এক বছর আগে যা ছিল ১ লাখ ২০ হাজার ৬৫৬ কোটি টাকা। অর্থাৎ এক বছরে নিট খেলাপি ঋণ বেড়েছে ২৪ হাজার ৯৭৭ কোটি টাকা, যা মোট বিতরণ করা ঋণের ৯ শতাংশ।

বাংলাদেশকে ঋণ দেওয়ার শর্ত হিসেবে আইএমএফ যে কটি শর্ত দিয়েছিল তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য ছিল খেলাপি ঋণের পরিমাণ কমিয়ে আনা। সেই শর্ত মানতে প্রতিশ্রুতিও দিয়েছে সরকার। প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী ২০২৬ সালের ডিসেম্বর নাগাদ রাষ্ট্র খাতের ব্যাংকগুলোর খেলাপি ঋণ ১০ শতাংশে এবং বেসরকারি খাতের ব্যাংকগুলোর খেলাপি ঋণ ৫ শতাংশে নামিয়ে আনতে হবে। তবে সরকারের সেই প্রতিশ্রুতি কতটা পূরণ হবে- তা নিয়ে রয়েছে প্রশ্ন।

সূত্র জানায়, সরকারি উদ্যোগের পরও খেলাপি ঋণের পরিমাণ কমছে না, কারণ কাগজে-কলমে যে পরিমাণ খেলাপি ঋণ দেখানো হচ্ছে- বাস্তবে তার চেয়ে বেশি রয়েছে। আইএমএফ প্রতিনিধি দল অর্থ বিভাগ ও কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সঙ্গে আলোচনায় এ বিষয়টি নিয়ে একাধিকবার উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। তাদের দাবি, বাংলাদেশ ব্যাংক যে হিসাব দেয়, তার তুলনায় প্রকৃত খেলাপি ঋণ অনেক বেশি। কেন্দ্রীয় ব্যাংক পুনঃতফসিল ও পুনর্গঠন করা ঋণ, সন্দেহজনক ঋণ ও আদালতের আদেশে খেলাপি স্থগিতাদেশ থাকা ঋণকে খেলাপি হিসাবে দেখায় না। আইএমএফ এসব ঋণকেও খেলাপি দেখানোর পক্ষে।

কেন্দ্রীয় ব্যাংক সংশ্লিষ্টরা জানান, খেলাপি ঋণ কমাতে এরই মধ্যে কিছু উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। সংশোধন করা হয়েছে ব্যাংক কোম্পানি আইন। সংশ্লিষ্ট আরও কিছু আইন সংশোধনের প্রক্রিয়া চলমান রয়েছে। এ ছাড়া ইচ্ছাকৃত খেলাপিদের তালিকা তৈরির কার্যক্রমও চলছে। এক বছরে খেলাপি ঋণ কিছুটা বাড়লেও এসব উদ্যোগের ফলে বছরের শেষ তিন মাস অর্থাৎ, অক্টোবর, নভেম্বর ও ডিসেম্বর মাসে ৯ হাজার ৭৬৫ কোটি টাকা খেলাপি ঋণ হ্রাস পেয়েছে। গত বছরের সেপ্টেম্বর প্রান্তিকে খেলাপি ঋণের পরিমাণ ছিল ১ লাখ ৫৫ হাজার ৩৯৮ কোটি টাকা, যা তখন বিতরণ করা মোট ঋণের ৯ দশমিক ৯৩ শতাংশ। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য বলছে, ২০২৩ সালের ডিসেম্বর মাস শেষে ব্যাংকিং খাতে মোট বিতরণ (আউটস্ট্যান্ডিং) করা ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ১৬ লাখ ১৭ হাজার ৬৮৮ কোটি টাকা। এর মধ্যে খেলাপিতে পরিণত হয়েছে ১ লাখ ৪৫ হাজার ৬৩৩ কোটি টাকা, যা মোট বিতরণ করা ঋণের ৯ শতাংশ।

মোট খেলাপি ঋণের মধ্যে রাষ্ট্রায়ত্ত বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোতে ডিসেম্বর শেষে খেলাপি ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৬৫ হাজার ৭৮১ কোটি টাকা, যা তাদের মোট ঋণের ২১ শতাংশ। একই সময় বেসরকারি বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোতে খেলাপি ঋণের হার দাঁড়িয়েছে ৫ দশমিক ৯৩ শতাংশ। বেসরকারি এসব ব্যাংকের মোট খেলাপি ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৭০ হাজার ৯৮১ কোটি টাকা। আর বিশেষায়িত ব্যাংকগুলোর ঋণ খেলাপি হয়েছে ১৩ দশমিক ৮৭ শতাংশ। এসব ব্যাংকের মোট খেলাপি ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৫ হাজার ৬৬৯ কোটি টাকা।

 

 

সর্বশেষ খবর