বুধবার, ১৪ ফেব্রুয়ারি, ২০২৪ ০০:০০ টা
হাই কোর্টের রায়

জাপানি তিন শিশুকে বাবা-মায়ের মধ্যে ভাগ

নিজস্ব প্রতিবেদক

তিন সন্তানকে নিয়ে জাপানি মা ও বাংলাদেশি বাবার আলোচিত মামলার আপিলের রায় দিয়েছেন হাই কোর্ট। একটি আপিল আবেদনের আংশিক মঞ্জুর করে গতকাল বিচারপতি মামনুন রহমানের নেতৃত্বাধীন একক হাই কোর্ট বেঞ্চ এ রায় দেন।

রায়ে বলা হয়, বিচ্ছেদ হওয়া এই দম্পতির বড় মেয়ে জেসমিন মালিকা ও ছোট মেয়ে সোনিয়া তাদের জাপানি মা নাকানো এরিকোর কাছে এবং মেজো মেয়ে লাইলা লিনা বাংলাদেশি বাবা ইমরান শরীফের কাছে থাকবে। এ ছাড়া প্রথম ও তৃতীয় মেয়েকে নিয়ে এরিকো বাংলাদেশে বা যে কোনো দেশে বসবাস করতে পারবেন। বাবা ও মা তাদের সন্তানদের সঙ্গে দেখা করার সুযোগ পাবেন বলেও রায়ে বলা হয়েছে। আদালতে ইমরান শরীফের পক্ষে শুনানি করেন ব্যারিস্টার আখতার ইমাম, রাশনা ইমাম ও অ্যাডভোকেট নাসিমা আক্তার লাভলী। অন্যদিকে এরিকোর পক্ষে শুনানি করেন ব্যারিস্টার আজমালুল হোসেন কিউসি ও অ্যাডভোকেট মোহাম্মদ শিশির মনির। জাপানের নাগরিক এরিকো ও বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত ইমরানের ২০০৮ সালের ১১ জুলাই জাপানে বিয়ে হয়। তাদের তিনটি কন্যা সন্তান আছে। ২০২১ সালের ১৮ জানুয়ারি এরিকোর সঙ্গে বিবাহ বিচ্ছেদের আবেদন করেন ইমরান। একই বছরের ২১ ফেব্রুয়ারি দুই মেয়েকে (বড় ও মেজো) নিয়ে বাংলাদেশে চলে আসেন তিনি। ছোট মেয়ে জাপানে আছে। ইমরানের কাছ থেকে দুই মেয়েকে ফিরে পেতে ঢাকায় এসে ২০২১ সালের আগস্টে হাই কোর্টে রিট করেন এরিকো। অন্যদিকে ছোট মেয়েকে ফিরে পেতে পৃথক রিট করেন ইমরান। পৃথক রিটের ওপর শুনানি নিয়ে দুই শিশু তাদের বাবা ইমরানের হেফাজতে থাকবে বলে একই বছরের ২১ নভেম্বর হাই কোর্ট আদেশ দেন। এই আদেশ স্থগিত চেয়ে আপিল বিভাগে আবেদন করেন এরিকো।

পরবর্তীতে এরিকোর করা আবেদন (লিভ টু আপিল) নিষ্পত্তি করে গত বছরের ফেব্রুয়ারিতে আদেশ দেন আপিল বিভাগ। আদেশে বলা হয়, ঢাকার পারিবারিক আদালতে থাকা মামলাটি (২০২১ সালে শিশুদের বাবার করা) নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত জাপান থেকে আসা দুই শিশু তাদের মায়ের হেফাজতে থাকবে। শিশুদের বাবা তাদের সঙ্গে দেখা করার সুযোগ পাবেন।

আদেশে আরও বলা হয়, মামলার পারিপার্শ্বিক বিষয় ও শিশুদের স্বার্থ বিবেচনায় তাদের এ আদালতের এখতিয়ারের বাইরে (দেশের বাইরে) নেওয়া যাবে না। আপিল বিভাগের আদেশের অনুলিপি পাওয়ার তিন মাসের মধ্যে সংশ্লিষ্ট পারিবারিক আদালতকে মামলাটি নিষ্পত্তি করতে নির্দেশ দেন। পরে শিশুদের বাবার আপিল খারিজ করে শিশু জেসমিন মালিকা ও লাইলা লিনা মায়ের সঙ্গে থাকবে বলে রায় দেন ঢাকার দ্বিতীয় অতিরিক্ত সহকারী জজ ও পারিবারিক আদালতের বিচারক দুরদানা রহমান। এই রায়ের বিরুদ্ধে বাবা আপিল করলে সে আপিল খারিজ করে দুই শিশু সন্তান তাদের মায়ের জিম্মায় থাকবে বলে রায় দেন ঢাকা জেলা ও দায়রা জজ হাবিবুর রহমান ভুঁইয়া। সেই রায়ের বিরুদ্ধে পরবর্তী হাই কোর্টে রিভিশন আবেদন করে শিশুদের বাবা।

শিশুর অভিভাবকত্ব নিয়ে আরও এক মামলার রায় : রাজধানীর উত্তরায় আইনজীবী মায়ের কাছে থাকবে ছয় বছর বয়সী কন্যা সন্তান। আর গ্রিন রোডের বাসিন্দা ব্যবসায়ী বাবা এস এম ফাহাদ কামাল সপ্তাহে দুই দিন সন্তানের সঙ্গে ঘোরাফেরা ও একান্তে সময় কাটাতে পারবেন বলে আদেশ দিয়েছেন হাই কোর্ট। গতকাল বিচারপতি ড. জাকির হোসেনের একক হাই কোর্ট বেঞ্চ এই আদেশ দেন।

আদালতে শিশুর বাবার পক্ষে শুনানি করেন ব্যারিস্টার ফারজানা শিলা। শিশুর মায়ের পক্ষে শুনানি করেন অ্যাডভোকেট ফাওজিয়া করিম ও ব্যারিস্টার সজীব মাহমুদ আলম।

ব্যারিস্টার ফারজানা শিলা বলেন, ২০১৫ সালে রাজধানীর গ্রিন রোডের বাসিন্দা ব্যবসায়ী এস এম ফাহাদ কামাল ও উত্তরার বাসিন্দা এক আইনজীবীর মধ্যে বিয়ে হয়। ২০১৭ সালে এই দম্পতির একটি কন্যা সন্তানের জন্ম হয়। ২০২২ সালে তাদের মধ্যে ডিভোর্স হয়ে যায়। একপর্যায়ে সন্তানকে দেখতে না দেওয়ার অভিযোগে বাবা ফাহাদ কামাল ঢাকার পারিবারিক আদালতে মামলা করেন। তিনি বলেন, মামলার শুনানি নিয়ে গত বছরের ২৩ নভেম্বর আদালত সপ্তাহে দুই দিন বাবাকে সন্তানের সঙ্গে দেখা করার অনুমতি দেন। এই আদেশের বিরুদ্ধে জেলা জজ আদালতে আপিল করেন শিশুর আইনজীবী মা।

শিশুর বাবার আইনজীবী বলেন, জেলা জজ আদালত বাবাকে সন্তানের সঙ্গে দেখা করার সুযোগ কমিয়ে দেন। মায়ের উপস্থিতিতে উত্তরা গিয়ে সন্তানের সঙ্গে দেখা করে আসতে আদেশ দেওয়া হয়। এই আদেশের বিরুদ্ধে হাই কোর্টে সিভিল রিভিশন দায়ের করেন বাবা। ২০২৩ সালের ২৭ ডিসেম্বর হাই কোর্ট পারিবারিক আদালতের আদেশ বহাল রাখেন। তিনি আরও বলেন, হাই কোর্টের এই আদেশ বাতিল চেয়ে মা আবারও আবেদন করেন। গতকাল শুনানি হয়। শুনানি শেষে হাই কোর্ট আদেশে বলেন, সপ্তাহে দুই দিন বাবা সন্তানের সঙ্গে একান্তে সময় কাটাতে পারবেন। বাবা সন্তানকে উত্তরার বাসা থেকে নিয়ে এসে ৫ ঘণ্টা সময় কাটাবেন। ৫ ঘণ্টা শেষ হলে বাবা সন্তানকে মায়ের উত্তরা বাসায় পৌঁছে দিয়ে আসবেন।

সর্বশেষ খবর