বৃহস্পতিবার, ১৫ ফেব্রুয়ারি, ২০২৪ ০০:০০ টা

মিয়ানমার সেনা ফেরত পাঠানো হচ্ছে আজ

নিজস্ব প্রতিবেদক

বিদ্রোহী গ্রুপ আরাকান আর্মির হামলায় মিয়ানমার থেকে পালিয়ে আসা দেশটির ৩৩০ জন বর্ডার গার্ড পুলিশ-বিজিপি, সেনা সদস্য ও কাস্টমস কর্মকর্তাদের ফেরত পাঠানো হচ্ছে আজ। এমন পরিস্থিতিতে সীমান্তে থমথমে পরিস্থিতি বিরাজ করছে। নাশকতার আশঙ্কায় কঠোর অবস্থান নিয়েছে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি)। গতকাল সকাল থেকেই নাফ নদে একাধিক টহল বোট নামায় বিজিবি। চলছে ফুট প্যাট্রোলিং। ড্রোন দিয়ে নজরদারি চালানো হচ্ছে সীমান্তে। টেকনাফ, শাহ পরীর দ্বীপ, লেদা সীমান্তে কঠোর অবস্থানে দেখা গেছে বিজিবি সদস্যদের। এ ছাড়া মিয়ানমারের অভ্যন্তরে সেনা সদস্য এবং রোহিঙ্গাদের অনুপ্রবেশ ঠেকাতে জিরো টলারেন্স নীতিতে রয়েছে বাংলাদেশ বর্ডার গার্ড। সেই সঙ্গে সীমান্তসন্ত্রাস ঠেকাতে অত্যাধুনিক প্রযুক্তি নিয়ে অবস্থান নিয়েছেন তারা। সরেজমিন প্রতি ১০ ফুট অন্তর অন্তর অবস্থান করতে দেখা গেছে বিজিবি সদস্যদের। গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টগুলোতে চলছে ড্রোন পর্যবেক্ষণ। ৩৪ বিজিবি অধিনায়ক লে. কর্নেল আবদুল্লাহ আল মাশরুকী বলেন, মিয়ানমার থেকে পালিয়ে আসা ৩৩০ জনকে কক্সবাজারের ইনানী ঘাট দিয়ে মিয়ানমারের পাঠানো হচ্ছে নৌ-পথে। সকাল ৮টা বা সাড়ে ৮টায় দাদের ইনানী ঘাট ছেড়ে মিয়ানমারে রওনা হওয়ার কথা রয়েছে। বর্তমানে নাইক্ষ্যংছড়ির ঘুমধুম ও তুমব্রু সীমান্ত পরিস্থিতি শান্ত। তবুও সীমান্তে বিজিবি সর্বোচ্চ সতর্ক অবস্থানে রয়েছে। সদস্য বৃদ্ধিসহ টহল বাড়ানো হয়েছে।

সীমান্ত শান্ত, তবে কাটেনি আতঙ্ক : আমাদের প্রতিনিধিরা জানিয়েছেন, গত তিন দিন থেকে ঘুমধুম, উখিয়া ও টেকনাফ সীমান্তে গোলাগুলির শব্দ কমেছে। উখিয়া উপজেলার পালংখালী ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান গফুর উদ্দিন জানিয়েছেন, তার ইউনিয়নের সীমান্ত আপাতত শান্ত রয়েছে। গতকাল সকাল পর্যন্ত কোনো মর্টারশেল কিংবা গোলাগুলির বড় ধরনের শব্দ আসেনি। টেকনাফ উপজেলার হোয়াইকং ইউনিয়নের চেয়ারম্যান নুর আহমেদ আনোয়ারীও জানিয়েছেন তার ইউনিয়নের সীমান্ত এলাকা গতকাল থেকে আজ সকাল পর্যন্ত মোটামুটি শান্ত রয়েছে। তবে মানুষের মধ্যে আতঙ্ক এখনো কাটেনি। এই সীমান্তের ওপারে মিয়ানমারের অনেক ভিতরে রাতে এবং ভোরে কিছুক্ষণ পর পর গুলির শব্দ শোনা গেছে। তবে এই গুলির শব্দ তেমন আতঙ্কজনক নয়। মিয়ানমার অংশে চলমান অস্থিরতায় এলাকা ছেড়ে যাওয়া তুমব্রু-ঘুমধুম সীমান্তের লোকজন ১১ দিন পর ধীরে ধীরে বাড়িঘরে ফিরছেন। অনেকে দোকানপাট খুলেছেন, খেত-খামারে যাচ্ছেন।

এদিকে টেকনাফের হোয়াইক্যং ও হ্নীলা সীমান্ত দিয়ে নাফ নদী পার হয়ে রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ না ঘটে সে জন্য নাফ নদীতে বিজিবি ও কোস্ট গার্ডের টহল জোরদার রয়েছে। গত কয়েক দিনে নাফ নদী হয়ে অনুপ্রবেশের চেষ্টাকালে বিজিবি ও কোস্ট গার্ড টহল টিম রোহিঙ্গা বোঝাই কয়েকটি নৌকা মিয়ানমারে ফিরিয়ে দিয়েছে। মিয়ানমার সীমান্তে অস্থিতিশীল পরিস্থিতিতে বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি ঘুমধুম উচ্চবিদ্যালয়ের এসএসসি পরীক্ষা কেন্দ্র একই ইউনিয়নের উত্তর ঘুমধুমে দুটি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে স্থানান্তরিত করা হয়েছে। নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার (ভারপ্রাপ্ত) সোহেল মিয়া বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। ৫০২ জন পরীক্ষার্থী কেন্দ্রটিতে পরীক্ষায় অংশ নেওয়ার কথা ছিল।

যেভাবে ফেরত পাঠানো হচ্ছে মিয়ানমার সৈন্যদের : মিয়ানমার থেকে পালিয়ে আসা সীমান্তরক্ষীদের আজ নিজ দেশে ফেরত পাঠানো হবে। মিয়ানমার বর্ডার গার্ড পুলিশসহ বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া মোট ৩৩০ জনকে একসঙ্গেই হস্তান্তর করা হবে বলে জানিয়েছে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি)। এ ব্যাপারে সব আনুষ্ঠানিক প্রক্রিয়া প্রায় শেষ। ফেরত পাঠানোর আগে স্থানীয় প্রশাসন ওইসব নাগরিকদের বায়োমেট্রিক পদ্ধতিতে ফিঙ্গার প্রিন্ট সংগ্রহ করে জেলা প্রশাসন ও বিজিবির কাছে হস্তান্তর করেছে। কক্সবাজারের জেলা প্রশাসক মুহাম্মদ শাহীন ইমরান জানান, আশ্রিত বিজিপি সদস্যদের ফেরত পাঠানোর প্রক্রিয়ার অংশ হিসেবে তাদের ফিঙ্গার প্রিন্ট সংগ্রহ করা হয়েছে। কক্সবাজার জেলা প্রশাসন জানিয়েছে, হস্তান্তরের পুরো বিষয়টির নেতৃত্ব দেবে বিজিবি। কক্সবাজারের ইনানীর নৌবাহিনীর ঘাটে দুই দেশের প্রতিনিধিদের উপস্থিতিতে হস্তান্তরের আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্ন হবে। বাংলাদেশ নৌবাহিনীর জাহাজ কর্ণফুলীতে করে ৩৩০ জনকে নিয়ে যাওয়া হবে বাংলাদেশ-মিয়ানমার জলসীমায়। সেখানেই মিয়ানমার নৌবাহিনীর জাহাজে তুলে দেওয়া হবে বার্মিজ সৈন্য ও ওই দেশ থেকে আসা নাগরিকদের। কক্সবাজার জেলা পুলিশ সুপার মাহফুজুল ইসলাম বলেন, ইনানীর নৌবাহিনীর জেটি ঘাট এলাকায় হস্তান্তর কার্যক্রমের আনুষ্ঠানিকতা শেষ করবে বাংলাদেশ ও মিয়ানমার। সেখানে বিজিবি, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও জেলা প্রশাসনের কর্মকর্তারা উপস্থিত থাকার কথা রয়েছে। প্রটোকল অনুযায়ী বিজিবি আমাদের কাছে যে সহযোগিতা চাইবে, আমরা তা করব। প্রসঙ্গত, গত ২ ফেব্রুয়ারি রাত থেকে বাংলাদেশের নাইক্ষ্যংছড়ি সীমান্তের ওপারে বিদ্রোহী গোষ্ঠী আরাকান আর্মির সঙ্গে মিয়ানমারের সীমান্তরক্ষী বাহিনী-বিজিপির তুমুল সংঘর্ষ চলছে। ৪ ফেব্রুয়ারি দিবাগত রাত ৩টা থেকে দুই পক্ষের মধ্যে থেমে থেমে গোলাগুলি ও মর্টার শেল নিক্ষেপের ঘটনা ঘটছে। ৫ ফেব্রুয়ারি নাইক্ষ্যংছড়ির ঘুমধুম ইউনিয়নের জলপাইতলী গ্রামের একটি রান্নাঘরের ওপর মিয়ানমার থেকে ছোড়া মর্টার শেল এসে পড়লে দুজন নিহত হন, আহত হয় একটি শিশু। সংঘাতকালে মিয়ানমার সেনা ও সীমান্তরক্ষী বাহিনীর সদস্য, শুল্ক কর্মকর্তাসহ ৩৩০ জন বাংলাদেশে ঢুকে পড়েন। তারা বর্তমানে বিজিবির হেফাজতে আছে।

সর্বশেষ খবর