বৃহস্পতিবার, ১৫ ফেব্রুয়ারি, ২০২৪ ০০:০০ টা
গৃহকর্মী হত্যার বিচার দাবিতে বিক্ষোভ

ডেইলি স্টারের সাংবাদিককে পুলিশের জেরা

নিজস্ব ও বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিবেদক

গৃহকর্মী প্রীতি ওরাংয়ের মৃত্যুর ঘটনায় ডেইলি স্টারের নির্বাহী সম্পাদক সৈয়দ আশফাকুল হক ও তার স্ত্রী তানিয়া খন্দকারের বিচার দাবিতে বিক্ষোভ সমাবেশ করেছে আদিবাসী ছাত্র-যুব ও নারী সংগঠনগুলো। গতকাল রাজধানীর শাহবাগে জাতীয় জাদুঘরের সামনে তারা এ বিক্ষোভ সমাবেশ করে। এদিকে চার দিনের রিমান্ডে এনে গতকাল প্রথম দিনের মতো আশফাকুল হক ও তার স্ত্রীকে জিজ্ঞাসাবাদ করেছে পুলিশ। মঙ্গলবার আদালতের রিমান্ড আদেশের পর রাতেই তাদের থানায় নেওয়া হয় বলে জানিয়েছেন তদন্তসংশ্লিষ্টরা।

মোহাম্মদপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মাহফুজুল হক ভূঁঞা জানান, তাদের গ্রেফতারের পর আদালতে সোপর্দ করা হলে তিন কর্মদিবসের মধ্যে জেলগেটে জিজ্ঞাসাবাদের অনুমতি দেন বিচারক। অধিকতর জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আমরা ১০ দিনের রিমান্ড আবেদন করি। পরে আদালত চার দিন মঞ্জুর করেন। বিধি অনুযায়ী তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। জাতীয় জাদুঘরের সামনে আদিবাসী নারী সংগঠনের সভাপতি ফাল্গুনী ত্রিপুরার সভাপতিত্বে বিক্ষোভ সমাবেশে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়নের সভাপতি দীপক শীল, আদিবাসী ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের সভাপতি অলীক মৃ, জাতীয় আদিবাসী পরিষদ মহানগরের সহসাধারণ সম্পাদক রতীশ তপ্য, আদিবাসী যুব ফোরামের অর্থ সম্পাদক অনন্যা ত্রং, আদিবাসী ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের সাধারণ সম্পাদক চংয়ুং ম্রো, পিসিপি ঢাকা মহানগরী সভাপতি জগদীশ চাকমা, পিসিপির কেন্দ্রীয় সহসভাপতি রেংয়ং ম্রো, হিল উইমেন্স ফেডারেশন ঢাকা মহানগরীর সাধারণ সম্পাদক রিয়া চাকমা এবং বিএমএসসির কংজ মারমা। সমাবেশে বক্তারা বলেন, প্রীতি ওরাংকে বেলকনি থেকে ফেলে হত্যা করা হয়েছে। ক্ষমতার জোরে তারা পার পেয়ে যাবে। মহালছড়িতে আদিবাসী নারীকে ধর্ষণের চেষ্টাকারীরাও পার পেয়ে যাবে। ছাত্র ইউনিয়নের (একাংশ) সভাপতি দীপক শীল বলেন, এতদিন আমরা যাকে নিপীড়িত মানুষের পত্রিকা বলে চিনতাম, সেই ডেইলি স্টার তার নির্বাহী সম্পাদকের বিষয়ে নীরব ভূমিকা পালন করছে! ধর্ষণের মতো ঘটনা ঘটছে, পাহাড় কিংবা সমতল সব জায়গায়ই একই অবস্থা। আদিবাসী ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের সভাপতি অলীক মৃ বলেন, ভালোবাসা দিবস ও বসন্ত উৎসবের দিনে আনন্দ উৎসব না করে আমাদের শাহবাগে দাঁড়াতে হয়েছে আদিবাসী দুই বোনের জন্য বিচারের দাবিতে। বারবার আমাদের দাঁড়াতে হয়, শাহবাগ, রাজুতে, টিএসসিতে। কারণ কেউ আমাদের বোনকে ধর্ষণ করে নয়তো কাউকে হত্যা করে, কখনো আমদের জুম ফসল কেটে নেওয়া হয়, আবার কখনো আমাদের ভূমি দখল করা হয়। প্রীতি ওরাং নয় তলা থেকে কীভাবে পড়ে মারা গেল, সিসিটিভি ফুটেজ চেক করে তার সুষ্ঠু বিচার করা হোক। প্রীতিকে নির্যাতন করে হত্যা করা হয়েছে। যদি হত্যাই না হতো তাহলে তার মা-বাবাকে ডেকে ২ লাখ টাকার বিনিময়ে আপস করার চেষ্টা করা হতো না। হিল উইমেন্স ফেডারেশন ঢাকা মহানগরী সাধারণ সম্পাদক রিয়া চাকমা বলেন, বারবার ঘটনার পুনরাবৃত্তি হচ্ছে, কেননা সরকার সুষ্ঠু বিচার করছে না। মহালছড়িতে আদিবাসী নারীকে ধর্ষণের চেষ্টা, প্রীতি হত্যার কারণ বিচারহীনতা। আমরা চাই শুধু গ্রেফতার নয়, দৃষ্টান্তমূলক বিচার হোক। পিসিপি ঢাকা মহানগরী সভাপতি জগদীশ চাকমা বলেন, আমরা শুনেছি পরিবারের সঙ্গে কথা বলে ২ লাখ টাকার বিনিময়ে ঘটনা ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা হচ্ছে। আমরা এ ধরনের ঘটনার তীব্র নিন্দা জানাই। একজন প্রীতির জীবন কখনোই ২ লাখ টাকা হতে পারে না। আমরা সুষ্ঠু তদন্ত সাপেক্ষে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চাই। এদিকে প্রীতির মৃত্যুর ঘটনায় করা মামলার তদন্ত কর্মকর্তা মোহাম্মদপুর থানার এসআই নাজমুল হোসেন বলেন, আদালতের নির্দেশনা অনুযায়ী আসামিদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। মামলাসংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে যেসব তথ্য পাওয়া গেছে সে বিষয়ে তাদের জিজ্ঞাসা করা হবে। ৬ ফেব্রুয়ারি সকালে মোহাম্মদপুরের শাহজাহান রোডের একটি বাড়ির নয় তলায় ডেইলি স্টারের নির্বাহী সম্পাদক সৈয়দ আশফাকুল হকের ফ্ল্যাট থেকে পাশের দোতলা টিনশেডের ওপর পড়ে কিশোরী গৃহকর্মী প্রীতি। সেখান থেকে তাকে উদ্ধার করে শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যান ওই বাড়ির ম্যানেজার। সেখানে কর্তব্যরত চিকিৎসক প্রীতিকে মৃত ঘোষণা করেন। একই বাসায় গত বছরের ৬ আগস্ট ফেরদৌসি নামে আরেক শিশু গৃহকর্মীর লাফিয়ে পড়ে গুরুতর আহত হওয়ার ঘটনা ঘটে।

সর্বশেষ খবর