বৃহস্পতিবার, ১৫ ফেব্রুয়ারি, ২০২৪ ০০:০০ টা

বিশ্ববিদ্যালয়ে বিবস্ত্র নির্যাতন, কী ঘটেছিল সেই দিন

ইবি প্রতিনিধি

ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে (ইবি) নবীন এক ছাত্রকে বিবস্ত্র করে তার ওপর পৈশাচিক নির্যাতন চালানো নিয়ে একটি অডিও রেকর্ড ভাইরাল হয়েছে। এটি কথিত সমঝোতা বৈঠক থেকে ধারণ করা। অডিওতে, ভয়াবহ নির্যাতনের ঘটনাটি যাতে বাইরের কেউ জানতে না পারে- সে জন্য ভুক্তভোগীকে নানা হুমকি-ধমকি দেওয়ার বিষয় উঠে এসেছে। অডিওতে লালন শাহ হলের গণরুমের দায়িত্বে থাকা ‘বড় ভাই’ নাসিম আহমেদ মাসুমকে বলতে শোনা যায়, ‘আমার রুমে গেলি। আমাকে কিছু বলিসনি। তোর কি বলা উচিত ছিল না? হল চালাই আমি, দায়ভার আমার। নিউজ হলে তো আমার নামে হইতো। আমাকে জানাইসনি, তোর জেলা কল্যাণের ভাইকে জানাইসিস। কথাটা বাইরে গেলো কী করতি?’ জানা গেছে, ৮ ফেব্রুয়ারি অভিযুক্ত ও ভুক্তভোগীদের নিয়ে ১৩৬ নম্বর কক্ষে (গণরুমে) অনুষ্ঠিত ‘সমঝোতা বৈঠকে’ এসব কথা বলেন মাসুম। মাসুম অর্থনীতি বিভাগের ২০১৮-১৯ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী এবং সাধারণ সম্পাদক নাসিম আহমেদ জয়ের অনুসারী। তিনি হলের গণরুম দেখাশোনা করেন। অডিও অনুযায়ী ভুক্তভোগী ছাত্র মাসুমকে বলেন, ‘গতরাতে (৭ ফেব্রুয়ারি) আমাকে নাকে খত দেওয়ানো হয়েছিল। রড দিয়ে মারা হয়েছিল। গালিগালাজ করা হয়েছিল। মা-বাপ তুলে গালি দেওয়া হয়েছে। ৫ মাস ধরে এ অত্যাচার সহ্য করছি। আমরা সিনিয়রদেরকে কোনোভাবে সন্তুষ্ট করতে পারছি না।’ ভুক্তভোগী আরও বলেন, ‘সবসময় তারা আমাদের সঙ্গে এসব কাজ করে আসছে। আমাদের উলঙ্গ করছে। অশ্লীল ভিডিও দেখাইছে।’ মাসুম এ সময় বলে, ‘তুই পুরুষ মানুষ না! মারছে তো কী হইছে?’ (বাকি কথোপকথন পাঠোপযোগী ও প্রকাশযোগ্য নয়)। একপর্যায়ে অভিযুক্তরা বলে, ‘ও কথায় কথায় হাসে এ জন্য মারছি।’ এরপর মাসুম গালি দিয়ে অভিযুক্তদের বলে, ‘ও হাসাহাসি করুক আর যাই করুক সে জন্য তোরা মারবি? প্রশাসনের কাছে অভিযোগ দেওয়া হলে যে কয়েকজনের নাম আছে সে কয়েকজনই বহিষ্কার হতো। যদি আমার নাম আসত, আমি ডিরেক্ট বলে দিতাম, আমি জানি না কিছু- কারণ এ জায়গায় আমি উপস্থিত ছিলাম না। এ বিষয় নিয়ে যেন আর কোনো কথা না হয়, এসব বাহিরে যাবে না।’ এদিকে র‌্যাগিংয়ের ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে পৃথক দুটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছে বিশ্ববিদ্যালয় ও হল কর্তৃপক্ষ। অভিযুক্তরা হলেন, শারীরিক শিক্ষা ও ক্রীড়া বিজ্ঞান বিভাগের ২০২১-২২ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী মুদাচ্ছির খান কাফি এবং ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগের একই শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী মোহাম্মদ সাগরসহ অন্তত পাঁচজন। নতুন দুই অভিযুক্ত ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগের উজ্জ্বল হোসাইন ও ল’ অ্যান্ড ল্যন্ড ম্যানেজমেন্ট বিভাগের ইউসুফ সানীও সেখানে উপস্থিত ছিলেন বলে জানা গেছে। তারা উভয়ই ২০২১-২২ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী। প্রক্টর অধ্যাপক ড. শাহাদাৎ হোসেন আজাদ বলেন, ‘তদন্ত কমিটি গুরুত্ব সহকারে তদন্ত করছে। প্রতিবেদন জমা দিলে সে আলোকে প্রশাসন ব্যবস্থা নেবে।’ প্রসঙ্গত, গত ৭ ফেব্রুয়ারি দিবাগত রাত ১২টা থেকে ভোররাত সাড়ে ৪টা পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের লালন শাহ হলের ১৩৬ নম্বর কক্ষে (গণরুম) এ নির্যাতনের ঘটনা ঘটে। ভুক্তভোগীকে নানা কুরুচিপূর্ণ আচরণ করতে বললে, সে অস্বীকৃতি জানায়। এতে তাকে বারবার রড দিয়ে আঘাত করতে থাকেন অভিযুক্তরা। পরে তারা জোরপূর্বক উলঙ্গ করে টেবিলের ওপর দাঁড় করিয়ে রাখেন ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীকে। তাকে নাকে খত দেওয়াসহ বিভিন্নভাবে শারীরিক নির্যাতন করা হয়।

 

 

 

 

সর্বশেষ খবর