শুক্রবার, ১৬ ফেব্রুয়ারি, ২০২৪ ০০:০০ টা
ড. মুহাম্মদ ইউনূস

আমার ঘর জবর দখল হয়ে যাচ্ছে

নিজস্ব প্রতিবেদক

আমার ঘর জবর দখল হয়ে যাচ্ছে

রাজধানীর মিরপুরের চিড়িয়াখানা রোডে অবস্থিত গ্রামীণ টেলিকম ভবনটি ‘জবরদখল’ করা হয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন নোবেল জয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূস। তিনি বলেছেন, গ্রামীণ ব্যাংক তাদের আটটি প্রতিষ্ঠান জবরদখল করে নিজেদের মতো করে চালাচ্ছে। পুলিশের কাছে এ বিষয়ে প্রতিকার চাইলেও সহযোগিতা পাওয়া যায়নি। একটা ভয়ংকর পরিস্থিতিতে আছি। দেশের মানুষের কাছে বিচারের ভার দিলাম।

গতকাল সকালে গ্রামীণ টেলিকম ভবনে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন। সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, ঢাকার মিরপুর ১ নম্বরে চিড়িয়াখানা সড়কে গ্রামীণ টেলিকম ভবন। এই ভবনে ড. ইউনূসের ১৬টি কোম্পানি রয়েছে। এর প্রতিটির চেয়ারম্যান ড. ইউনূস। গ্রামীণ ব্যাংকের পক্ষ থেকে ১২ ফেব্রুয়ারি ওই ভবনে থাকা আটটি অফিস দখল করে তালা মেরে দেওয়া হয়। এরপর গ্রামীণ ব্যাংকের তরফ থেকে গ্রামীণ টেলিকম ও গ্রামীণ কল্যাণের পরিচালক পদে কয়েকজনকে মনোনীত করার পাশাপাশি এ দুই কোম্পানির চেয়ারম্যান পদে ইউনূসের বদলে গ্রামীণ ব্যাংকের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. এ কে এম সাইফুল মজিদকে মনোনীত করা হয়। ড. ইউনূস অভিযোগ করে বলেন, এসব কর্মকাণ্ড দেশবাসীর সামনে তাকে ‘হয়রানি’ করা এবং তার সামাজিক ব্যবসা প্রতিষ্ঠানকে ‘ধ্বংস করার নীল-নকশা’র অংশ। তিনি বলেন, ১২ ফেব্রুয়ারি থেকে তারা ভবনে তালা মেরে রেখেছে। নিজের বাড়িতে অন্য কেউ যদি তালা মারে, তখন কেমন লাগার কথা আপনারাই বলেন। তাহলে দেশে আইন আদালত আছে কিসের জন্য। তিনি বলেন, তারা আদালতে যেতে চায় না। আমরা জীবনে বহু দুর্যোগ দেখেছি। এমন দুর্যোগ আর কখনো দেখিনি। ড. ইউনূস বলেন, আমরা এখন কোথায় যাব, কী করব? পুলিশের কাছে এ বিষয়ে সহযোগিতা চেয়েও পাওয়া যায়নি। পুলিশ বাহিনী ভবন পরিদর্শন শেষ করে গিয়ে জানিয়েছেন, কোনো অসুবিধা নাকি নেই! অথচ জবরদখলের পর আমরা ভবনে ঢুকতে গেলে, তারা আমাদের পরিচয় জিজ্ঞাসা করছে। নিজের অফিসে ঢুকতে পারব কি না সেটি এখন বাইরের লোকের এখতিয়ার হয়ে গেছে। এ বিষয়ে আদালতের শরণাপন্ন হবেন জানিয়ে অধ্যাপক ইউনূস বলেন, ব্যবসার মুনাফার টাকায় এসব প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠেছে। গ্রামীণ ব্যাংকের টাকায় হয়নি। যা হয়েছে আইন মেনে হয়েছে। এ ভবনটি আমাদের কাছে স্বপ্নের বাস্তবায়নের মতো। হঠাৎ চার দিন আগে বাইরের কিছু লোক এসে জবরদখল করল আর আমরা বাইরের লোক হয়ে গেলাম! তিনি বলেন, আমাদের সব অফিসের প্রধান কার্যালয় এটি। দেশের মানুষের কল্যাণের জন্য এখান থেকে কাজ করা হয়। দেশবাসীকে বলব, এভাবে দেশ কীভাবে চলে? নোবেলজয়ী এ অর্থনীতিবিদ বলেন, মামলা হোক। আদালতে আমাদের অনেক মামলা চলমান। সেভাবে আমরা মোকাবিলা করব। কিন্তু জবরদখল কেন? দেশের মানুষের কাছে বিচারের ভার দিলাম। পুলিশের কাছে আমরা সহযোগিতা চেয়েও পাইনি। সংবাদ সম্মেলনে অন্যদের মধ্যে আরও উপস্থিত ছিলেন গ্রামীণ টেলিকমের ব্যবস্থাপনা পরিচালক নাজমুল ইসলাম, গ্রামীণ কল্যাণের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এ কে এম মঈনুদ্দিন চৌধুরী। লিখিত এক যৌথ বিবৃতিতে তারা বলেন, জবরদখলের পরদিন স্থানীয় শাহ আলী থানার ভারপ্রাপ্ত পুলিশ কর্মকর্তা টেলিকম ভবন পরিদর্শনে গেলেও গ্রামীণ কল্যাণের দাখিল করা সাধারণ ডায়েরি গ্রহণ করেনি। দেশের একজন সাধারণ মানুষও যেখানে আইনের সহায়তা পাচ্ছে সেখানে দেশের একমাত্র নোবেল পুরস্কার বিজয়ী ব্যক্তিকে তার মৌলিক অধিকার ও আইনের সুরক্ষা থেকে বঞ্চিত করা হচ্ছে। টেলিকম ভবন জোরপূর্বক জবরদখল করে এত বড় ধরনের তাণ্ডবলীলা ঘটানোর পরও সরকারের নিশ্চুপ থাকার বিষয়টিকে অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস তার জীবনের প্রতি হুমকি ও নিরাপত্তাহীনতা হিসেবে দেখছেন।

 

সর্বশেষ খবর