শনিবার, ১৭ ফেব্রুয়ারি, ২০২৪ ০০:০০ টা
মনজুরুল আহসান খান

সুবিধাবাদী কমিটির কারণে সিপিবি শেষ

শামীম আহমেদ

সুবিধাবাদী কমিটির কারণে সিপিবি শেষ

বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিবি) সাবেক সভাপতি ও বর্তমান উপদেষ্টা মনজুরুল আহসান খান বলেছেন, সিপিবির বর্তমান নেতৃত্ব অতীতেও কোনো আন্দোলন করেনি, বর্তমানেও করে না। তাদের কর্মসূচি খুবই কম। কর্মসূচি ডেকে কোনো লোকই জমায়েত করতে পারে না। শিগগিরই আমরা সম্মেলন করে বর্তমান নেতৃত্বকে সরিয়ে দেব। পুরনো দল হিসেবে সিপিবির রাজনৈতিক তৎপরতা প্রসঙ্গে গতকাল বাংলাদেশ প্রতিদিনকে তিনি এসব কথা বলেন। দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে প্রবীণ এই বাম রাজনীতিক বলেন, কিছুদিন আগে দেশে যে জাতীয় সংসদ নির্বাচন হয়েছে, তাতে খুব কম মানুষ ভোট দিয়েছে। গড়ে ২৭ ভাগ (নির্বাচন কমিশনের ঘোষণা অনুযায়ী ৪১.৮ শতাংশ) ভোটার ভোট দিয়েছেন। এভাবে একটা স্থিতিশীল সরকার হতে পারে না। এই সরকার জনগণের ভোটে নির্বাচিত নয়, এ জন্য জনগণের প্রতি দায়িত্ববোধও অনুভব করে না। এ সরকার সম্পূর্ণ সামরিক- বেসামরিক আমলার ওপর নির্ভরশীল। যার ফলে দেশে গণতন্ত্র ও মানবাধিকার বিনষ্ট হয়ে গেছে। তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধু জনগণের রায় পেয়েছিলেন বলে এখানে স্বাধীনতা আন্দোলন সফল হয়েছিল। পাকিস্তানজুড়ে অধিকাংশ মানুষের ভোটে অধিকাংশ সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছিল আওয়ামী লীগ থেকে। এ কারণে বিশ্বের সমর্থন পাওয়া সহজ হয়েছিল। আজ এই সমর্থনটা নেই, তাই স্বাধীনতার এবং মুক্তিযুদ্ধের চেতনাও বিপন্ন। মানবাধিকার লঙ্ঘিত হচ্ছে। ট্রেড ইউনিয়নের অধিকার লঙ্ঘিত হচ্ছে। কিছুদিন আগে গার্মেন্ট শ্রমিকদের স¦তঃস্ফূর্ত বিক্ষোভে সরকারের গুলি ও সন্ত্রাসী হামলায় চারজন শ্রমিক নিহত হয়েছে। এ ধরনের নির্যাতন অত্যাচার চলছে। এগুলোর বিরুদ্ধে আন্দোলন গড়ে তোলার চেষ্টা করছে বাম জোট। বিএনপি-জামায়াতের কথা বাদ দিলাম। কারণ তারা সন্ত্রাস, অগ্নিসন্ত্রাস, ধর্মীয় মৌলবাদে বিশ্বাসী। তারা দেশকে আরও বিপদের মুখে ঠেলে দেবে। আজ দেশে জাতীয় শ্রমিক কর্মচারী সংগ্রাম পরিষদ শ্রমিকের দাবি-দাওয়া আদায়ে আন্দোলন করছে। এটার আহ্বায়ক আমি। এই সংগঠনের মাধ্যমে যে আন্দোলন হবে, তা শ্রমিক আন্দোলনেও একটা ব্রেকথ্রো করবে, দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতির ক্ষেত্রেও একটা ব্রেকথ্রো ঘটাবে। আমরা আশা করি এই আন্দোলনের মধ্য দিয়ে দেশে গণতন্ত্র বিকশিত হবে এবং সামনের বার একটা সুষ্ঠু নিরপেক্ষ নির্বাচন হবে।

সিপিবির বিভিন্ন কর্মসূচিতে স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, সিপিবি তো খুব কম কর্মসূচি পালন করছে। তার চেয়ে অনেক বেশি করছি আমরা শ্রমিকদের নিয়ে। নেত্রকোনা, সিলেট, বগুড়া, রংপুরসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় কর্মসূচি পালন করে এসেছি। প্রায়ই শ্রমিক ও আদিবাসীদের দাবি-দাওয়া নিয়ে সংগ্রাম আমরা গড়ে তুলছি। বর্তমান সিপিবির নেতৃত্বে রয়েছে একটা সুবিধাবাদী গোষ্ঠী। এরা অতীতেও কোনো আন্দোলন করেনি, বর্তমানেও করে না। এমনকি আমরা শ্রমিকদের নিয়ে যে সংগ্রাম পরিষদ করেছি, তাদের আন্দোলনেরও বিরোধিতা করে। আমাকে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে। পাঁচ দফা অভিযোগ তুলে আমাকে শোকজ করেছে। যদিও শোকজ তিন মাস ধরে করেছে, কিন্তু তারা কোনো ব্যবস্থা নেওয়ার সাহস পায়নি, কেননা পার্টির অধিকাংশ সদস্য এবং কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য এটার বিরোধিতা করবে। আমাকে মোট পাঁচবার পার্টি থেকে সাসপেন্ড করেছে। এখন আরেকবার করতে চাচ্ছে কিন্তু সাহস পাচ্ছে না। আমরা সম্মেলন করে বর্তমান নেতৃত্বকে সরিয়ে দেব। সময়ের সঙ্গে সিপিবি তাল মিলিয়ে চলতে পারছে কি না- এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, তাল মিলিয়ে চলতে তো পারছেই না, উল্টো আরও পিছিয়ে এসেছে। এই কমিটিকে আমরা সরিয়ে দেব। সেন্ট্রাল কমিটিতে তাদের একজনের মেজরিটি। সারা দেশের সদস্যদের মধ্যে আমাদের মেজরিটি বেশি। বেশিরভাগ জেলা আমাদের সমর্থন করবে। আমরা একটা রিকুইজিশন সম্মেলন ডেকে তাদের সরিয়ে দেব। শ্রমিকদের হরতালটা করার পরই এর একটা সুরাহা করব। উপজেলা নির্বাচনে অংশগ্রহণ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, সরকারের মধ্যে কোনো পরিবর্তন না ঘটলে এই পরিস্থিতিতে নির্বাচন করা ঠিক হবে না। সিপিবিও মনে হয় নির্বাচন করবে না।

সর্বশেষ খবর