শনিবার, ১৭ ফেব্রুয়ারি, ২০২৪ ০০:০০ টা
মিয়ানমার পরিস্থিতি

বিকট শব্দে কাঁপল টেকনাফ

মুহুর্মুহু গুলি, সতর্ক অবস্থানে বিজিবি

নিজস্ব প্রতিবেদক

বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি ও কক্সবাজারের উখিয়া উপজেলার সীমান্তের ওপারে মিয়ানমারে শান্ত পরিস্থিতি বিরাজ করলেও টেকনাফের শাহপরীর দ্বীপ ও সেন্টমার্টিন দ্বীপে ভেসে আসছে ভারী গুলি ও মর্টার শেলের বিকট শব্দ। বৃহস্পতিবার বিকাল থেকে শুরু হয়ে গতকাল বিকালেও থেমে থেমে গুলি ও বোমার শব্দ শোনা গেছে। এতে আতঙ্কিত হয়ে পড়েছেন নদীর জেলেসহ স্থানীয়রা। আমাদের প্রতিনিধিদের পাঠানো তথ্যে এমনটা জানা গেছে।

গতকাল দুপুরে টেকনাফ উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা আদনান চৌধুরী বলেন, টেকনাফ উপজেলা পরিষদ থেকেই বোমার প্রচণ্ড শব্দ শোনা যাচ্ছে। নাফ নদ থেকে টেকনাফ উপজেলা পরিষদের দূরত্ব এক কিলোমিটারের মতো। এত দূর থেকেও মুহুর্মুহু

গুলি ও বোমার আওয়াজ শোনা যাচ্ছে। মিয়ানমারের সংঘাতময় পরিস্থিতির কারণে বিজিবি ও কোস্টগার্ডের টহল বাড়ানো হয়েছে। সীমান্তে বসবাসরত মানুষকে সতর্ক থাকতে বলা হয়েছে।

টেকনাফ উপজেলার সাবরাং ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য আবদুস সালাম জানান, গতকাল সকাল ৭টার দিকে শাহপরীর দ্বীপ সীমান্তের ওপারে মিয়ানমারের অভ্যন্তরে পরপর দুটি ভারী গোলাবর্ষণের শব্দ শোনা গেছে। এতে বিকট শব্দে পুরো এলাকা কেঁপে ওঠে। স্থানীয়দের মাঝে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। বৃহস্পতিবার সকাল থেকেই গোলাগুলির শব্দ শুনতে পাচ্ছেন তারা।

বিজিবির টেকনাফ ২ ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল মুহিউদ্দিন আহমেদ বলেন, মিয়ানমারের ভিতরের পরিস্থিতি জানা না গেলেও গোলাবর্ষণের শব্দ শোনা যাচ্ছে। তবে এটি ক্রমাগত হচ্ছে না, কিছুক্ষণ পর পর এই শব্দ শোনা যাচ্ছে। এমন পরিস্থিতিতে বিজিবি সব সময় সতর্ক অবস্থানে রয়েছে।

এদিকে গতকাল বিকাল ৪টার দিকে শাহপরীর দ্বীপের ওপারে মিয়ানমারের ভিতরে জান্তা বাহিনী বিমান থেকে বোমা হামলা চালিয়েছে বলে ধারণা করছেন স্থানীয়রা। বিমান ও বোমার শব্দ শোনা গেছে শাহপরীর দ্বীপের নাফ নদের জেটি থেকেও।

এদিকে সেন্ট মার্টিনের বাসিন্দা নূর মোহাম্মদ বলেন, মিয়ানমারের সঙ্গে সেন্ট মার্টিনের দূরত্ব প্রায় ২০ কিলোমিটার। এত দূর থেকেও গুলির বিকট শব্দ ভেসে আসছে। সেন্টমার্টিন ইউনিয়নের ৭ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য খোরশেদ আলম জানান, গোলাগুলির শব্দে আতঙ্কে রয়েছে দ্বীপবাসী। সীমান্তের এ পরিস্থিতিতে টেকনাফ-সেন্টমার্টিন নৌরুটে পর্যটকবাহী জাহাজের চলাচলও বন্ধ রয়েছে।

বান্দরবান সীমান্ত শান্ত : আমাদের বান্দরবান প্রতিনিধি জানিয়েছেন, বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার ঘুমধুম-তুমব্রু এলাকার ওপারে মিয়ানমার অংশে গতকাল সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত কোনো গোলাগুলির ঘটনা ঘটেনি। ঘুমধুম-তুমব্রু সীমান্ত এলাকার ওপারে সবশেষ গত ১০ ফেব্রুয়ারি গভীর রাত থেকে ১১ ফেব্রুয়ারি সকাল ৭টা পর্যন্ত গুলির শব্দ শোনা যায়। এরপর আর কোনো গোলাগুলির ঘটনা ঘটেনি। স্থানীয় সূত্রগুলো জানায়, সীমান্ত পরিস্থিতি স্বাভাবিক থাকলেও এখনো সীমান্তলাগোয়া বাসিন্দাদের শঙ্কা কাটেনি। তবে বাসিন্দারা আশ্রয়কেন্দ্র থেকে নিজ বাড়িতে ফিরে গেছেন। দোকানপাট, বাজারে এলাকাবাসী নির্বিঘ্নে বাজার-সদায়, হাঁটাচলা করছেন। তবে সাময়িক বন্ধ রাখা সীমান্তলাগোয়া ৫টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় এখনো বন্ধ রয়েছে। সীমান্তে বিজিবির টহল জোরদার রয়েছে। কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা যেন না ঘটে সে ব্যাপারে বিজিবির সদস্যরা সজাগ রয়েছে বলে বিজিবি সূত্র জানিয়েছে।

প্রসঙ্গত, গত ২ ফেব্রুয়ারি রাত থেকে বাংলাদেশের নাইক্ষ্যংছড়ি সীমান্তের ওপারে বিদ্রোহী গোষ্ঠী আরাকান আর্মির সঙ্গে মিয়ানমারের সীমান্তরক্ষী বাহিনী-বিজিপির তুমুল সংঘর্ষ শুরু হয়। ৪ ফেব্রুয়ারি দিবাগত রাত ৩টা থেকে দুই পক্ষের মধ্যে থেমে থেমে গোলাগুলি ও মর্টার শেল নিক্ষেপের ঘটনা ঘটছে। ৫ ফেব্রুয়ারি নাইক্ষ্যংছড়ির ঘুমধুম ইউনিয়নের জলপাইতলী গ্রামের একটি রান্নাঘরের ওপর মিয়ানমার থেকে ছোড়া মর্টার শেল এসে পড়লে দুজন নিহত হন, আহত হয় একটি শিশু। সংঘাত বিস্তৃত হয় কক্সবাজার ও টেকনাফ সীমান্তের ওপারেও। সংঘাতকালে মিয়ানমার সেনা ও সীমান্তরক্ষী বাহিনীর সদস্য, শুল্ক কর্মকর্তাসহ ৩৩০ জন প্রাণ বাঁচাতে বাংলাদেশে ঢুকে পড়েন। গত বৃহস্পতিবার তাদের ফেরত পাঠানো হয়। ওই দিন থেকে আবারও বেড়েছে গোলাগুলির শব্দ।

এদিকে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান গতকাল চট্টগ্রাম জেলা পুলিশ সুপার কার্যালয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে বলেছেন, মিয়ানমার থেকে অস্ত্র নিয়ে কাউকে বাংলাদেশে প্রবেশ করতে দেওয়া হবে না। আমাদের বিজিবি কঠোর অবস্থানে রয়েছে। অস্ত্র নিয়ে ঢোকার অবস্থা নেই। আমরা বিজিবির ফোর্স বাড়িয়েছি। কোস্টগার্ড, নৌ বাহিনী ও পুলিশ সজাগ রয়েছে।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর