শনিবার, ১৭ ফেব্রুয়ারি, ২০২৪ ০০:০০ টা

সংকটে মনোরোগ চিকিৎসা

নিজস্ব প্রতিবেদক

কভিড-১৯ মহামারি, ডেঙ্গুজ্বর, মূল্যস্ফীতি, ইন্টারনেটে আসক্তিসহ বিভিন্ন কারণে মানুষের মধ্যে মানসিক স্বাস্থ্য সমস্যা বাড়ছে। এখন পর্যন্ত দেশের জেলা-উপজেলা পর্যায়ে মানসিক স্বাস্থ্য চিকিৎসার কোনো ব্যবস্থা নেই। এ সংকটে বাড়ছে আত্মহত্যার প্রবণতা। দেশে বর্তমানে মানসিক রোগের জন্য বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক রয়েছেন মাত্র ৩৫০ জন এবং কাউন্সেলিংয়ের জন্য সাইকোলজিস্ট ৫০০।

রাজধানীর জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউটে আউটডোর ও ইনডোর সেবা দেওয়া হয়। এ ছাড়া মানসিক হাসপাতাল রয়েছে পাবনায়। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় ও কয়েকটি মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে মানসিক রোগের চিকিৎসা দেওয়া হয়। দেশে প্রতি ১ লাখ জনসংখ্যার মানসিক রোগীর জন্য শয্যাসংখ্যা শূন্য দশমিক ৪। মানসিক স্বাস্থ্যে ‘দিবাযত্ন’ চিকিৎসাসুবিধা এখনো দেশে প্রতিষ্ঠিত হয়নি। জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্যনীতিতে বলা হয়েছে, দেশে মানসিক স্বাস্থ্যের জন্য বরাদ্দ বাজেট মোট স্বাস্থ্য বাজেটের শূন্য দশমিক ৫০ শতাংশ। পাবনা মানসিক হাসপাতালের সাবেক পরিচালক অধ্যাপক ডা. মোহাম্মদ আহসানুল হাবিব বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘আমাদের দেশে ১৬ কোটি মানুষের জন্য সাইক্রাটিস্ট ৩৫০ জন ও সাইকোথেরাপিস্ট ১০০-এর কম। এ চিকিৎসকরা ঢাকা, রাজশাহী বা অন্যান্য বিভাগীয় শহরে থাকেন। জেলা-উপজেলা পর্যায়ে চিকিৎসা একেবারে অপ্রতুল। রাতারাতি বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক বাড়ানো সম্ভব নয় তবে জেলা হাসপাতালে সাইক্রাটিস্টের একটি পদ রাখলে অন্তত ডাক্তারের সংখ্যা বাড়বে এবং রোগীরা সেবা পাবে।’

তিনি আরও বলেন, ‘করোনার পর বয়স অনুসারে বিভিন্ন ধরনের মানসিক সমস্যা বেড়েছে। করোনা মানসিক স্বাস্থ্য জগতে বেশ বড় ধরনের আঘাত করেছে। এখন আমরা বিচিত্র ধরনের রোগী পাচ্ছি, যা আগে পাইনি। করোনা মানসিক স্বাস্থ্যের ওপর যে আঘাত করেছে, তার প্রভাব আরও পাঁচ থেকে সাত বছর পরও পাওয়া যাবে।’

জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্যনীতি-২০২২-এর তথ্য বলছে, দেশে মানসিক স্বাস্থ্য সমস্যার তুলনায় মানসিক স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞের সংখ্যা খুবই কম। বাংলাদেশে প্রতি ১ লাখ মানুষের জন্য মানসিক স্বাস্থ্যকর্মীর সংখ্যা মাত্র ১.১৭। এর মধ্যে ০.১৩ জন মনোরোগ বিশেষজ্ঞ, ০.০১ জন অন্যান্য বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক, ০.৮৭ জন মানসিক স্বাস্থ্যবিষয়ক সেবিকা এবং ০.১২ জন মনোবিজ্ঞানী ও অন্যান্য পেশাদার মানসিক স্বাস্থ্যকর্মী।

জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য সমীক্ষা-২০১৮-১৯ অনুসারে, দেশের প্রায় ১৭ শতাংশ প্রাপ্তবয়স্ক ও ১৪ শতাংশ শিশুর কোনো না কোনো ধরনের মানসিক রোগ রয়েছে। জরিপ অনুসারে, মানসিক রোগে আক্রান্ত ২৪.২ শতাংশ চিকিৎসা পায় সরকারি হাসপাতালে, ৫.৫ শতাংশ প্রাইভেট প্র্যাকটিশনার সাইকিয়াট্রিস্টের কাছে, ৩৩ শতাংশ অন্যান্য ডাক্তারের কাছে এবং ২.২ শতাংশ হোমিওপ্যাথি ও ইউনানি ডাক্তারের কাছে।

মানসিক স্বাস্থ্যসেবার উন্নয়নে ২০২২ সালে মানসিক স্বাস্থ্যনীতি করা হলেও তার বাস্তবায়ন এখনো ধীরগতিতে চলছে। ক্রমবর্ধমান মানসিক স্বাস্থ্য সমস্যার মধ্যে স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা এ-সংক্রান্ত চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় এ নীতির বাস্তবায়ন ত্বরান্বিত করার আহ্বান জানিয়েছেন।

জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউটের সহযোগী অধ্যাপক ডা. হেলাল উদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘মানসিক স্বাস্থ্য পলিসি আছে, কিন্তু আমাদের মূল চ্যালেঞ্জ এর বাস্তবায়ন। মানসিক স্বাস্থ্যের জন্য আলাদা অপারেশনাল প্ল্যান লাগবে, জনবল লাগবে, আলাদা গভর্নেন্স লাগবে। সেগুলো এখনো তৈরি হয়নি। এর জন্য পলিসিতে যা যা বলা আছে, সেগুলো এখনো বাস্তবায়িত হয়নি। মানসিক স্বাস্থ্য সমস্যার সমাধানে এখন পলিসি বাস্তবায়ন করা জরুরি।’

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর