রবিবার, ১৮ ফেব্রুয়ারি, ২০২৪ ০০:০০ টা

ওপারে ভারী অস্ত্রের যুদ্ধ

♦ ফের রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশের আশঙ্কা ♦ সীমান্তে কঠোর নজরদারি ♦ দেশ ছাড়ছে মিয়ানমারের তরুণরা ♦ ডিঙিতে ভেসে এলো গুলিবিদ্ধ নারীসহ পাঁচ রোহিঙ্গা

নিজস্ব প্রতিবেদক

ওপারে ভারী অস্ত্রের যুদ্ধ

টেকনাফ সীমান্তের ওপারে মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে সরকারি বাহিনী ও বিদ্রোহী গোষ্ঠী আরাকান আর্মির মধ্যে তুমুল যুদ্ধ চলছে। শুক্রবার রাতে গোলাগুলি কিছুটা কমলেও গতকাল ভোর থেকে আবার মর্টার শেল ও গোলার বিকট শব্দে কেঁপে ওঠে টেকনাফের শাহপরীর দ্বীপ। আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে বাসিন্দাদের মধ্যে। এমন পরিস্থিতিতে আবারও রোহিঙ্গা নাগরিকরা নাফ নদ পাড়ি দিয়ে বাংলাদেশে ঢোকার চেষ্টা করছে বলে জানা গেছে। গতকাল বিকালে ডিঙিতে করে গুলিবিদ্ধ নারীসহ পাঁচ রোহিঙ্গা শাহপরীর দ্বীপ জেটি ঘাটে আসে বলে খবর মিলেছে। আমাদের টেকনাফ ও কক্সবাজার প্রতিনিধি জানান, অনুপ্রবেশ ঠেকাতে নাফ নদে টহল জোরদার অব্যাহত রেখেছেন বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) এবং কোস্টগার্ডের সদস্যরা। তবে নাফ নদে অনেক রোহিঙ্গা নৌকা নিয়ে ভাসছে বলে বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে।

এদিকে শুক্রবার রাতে গোলাগুলি কম থাকলেও গতকাল ভোর থেকে দুপুর ২টা পর্যন্ত বাংলাদেশ-মিয়ানমার সীমান্তঘেঁষা টেকনাফের শাহপরীর দ্বীপের ওপারে ভারী মর্টার শেল ও গোলাগুলির শব্দ শুনতে পান স্থানীয় বাসিন্দারা। মর্টার শেলের শব্দে এপারের বাড়িঘর কেঁপে উঠছে। নাফ নদের তীরে শাহপরীর দ্বীপ দারুশ শরীআহ্ আল ইসলামীয়াহ বড় মাদরাসার খতিব মাওলানা এশফাক বলেন, ‘ফজরের নামাজ শেষ করে বাড়ি যাওয়ার পথে থেমে থেমে মর্টার শেলের বিকট শব্দ শুনেছি। শুক্রবার রাত ৩টার দিকে হেফজখানার ছেলেদের ঘুম ভেঙে যায় মর্টার শেলের শব্দে। আমরা এখানে খুব ভয়ের মধ্য আছি। অনেক সময় মর্টার শেলের শব্দে মাদরাসার ভবন কেঁপে ওঠে।’ টেকনাফ শাহপরীর দ্বীপের ৯ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য আবদুস সালাম বলেন, ‘সকাল থেকে নাফ নদের ওপারে থেমে থেমে বোমা বিস্ফোরণের মতো বিকট শব্দ হচ্ছে। আমরা জেলেদের কাছ থেকে জেনেছি সীমান্তের ওপারে রাখাইনে মংডু পাতনছা, নরবনিয়া, নুরুল্লা, হাসসুরাতাসহ বিভিন্ন এলাকায় যুদ্ধ হচ্ছে। এর প্রভাব এপারেও এসে পড়ছে।’ টেকনাফ-২ বিজিবির অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল মো. মহিউদ্দীন আহমেদ বলেন, ‘আমরা সীমান্ত ঘুরে দেখছি। গতকাল সকালে মিয়ানমারের অভ্যন্তরে গোলাগুলির খবর পেয়েছি। আমরা সীমান্তে টহল জোরদার অব্যাহত রেখেছি।’

ডিঙিতে এলো গুলিবিদ্ধ নারীসহ পাঁচ রোহিঙ্গা : মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে আরাকান আর্মি ও সশস্ত্র বাহিনীর মধ্যে সংঘর্ষের জেরে মাছ ধরার ডিঙিতে করে গতকাল বিকাল ৫টার দিকে শাহপরীর দ্বীপ জেটিঘাটে এসে পৌঁছায় গুলিবিদ্ধ রোহিঙ্গা নারীসহ পাঁচজন। এতে নৌকার মাঝিমাল্লাও ছিল। এ ব্যাপারে ইউপি সদস্য আবদুস সালাম বলেন, ‘বিকালে একটি ডিঙিতে মিয়ানমার থেকে পাঁচ রোহিঙ্গা এসে আমাদের জেটিঘাটে পৌঁছে। খবর পেয়ে বিজিবি ঘটনাস্থলে যায়।’ জেটিঘাটের দোকানদার জাবেদ জানান, মিয়ানমারের একটি ডিঙি শাহপরীর দ্বীপ জেটিঘাটে এসে পৌঁছায়। এর মধ্যে একজন গুলিবিদ্ধ নারীসহ পাঁচ রোহিঙ্গা ছিল। ওই নারীর শরীরে স্যালাইন টাঙানো অবস্থায় দেখা গেছে। শেষ পর্যন্ত তারা কোথায় গেছে জানাতে পারেননি জাবেদ। তবে এ বিষয়ে টেকনাফ বিজিবির পক্ষ থেকে কোনো বক্তব্য পাওয়া যায়নি।

বাংলাদেশে ঢোকার চেষ্টায় অনেক রোহিঙ্গা : মিয়ানমার সেনা ও সশস্ত্র আরাকান আর্মি গোষ্ঠীর মধ্যে অব্যাহত লড়াইয়ে আবারও দেশটি ছাড়ার চেষ্টা করছে হাজারো মানুষ। অনেকেই বাংলাদেশে রোহিঙ্গা ক্যাম্পে আত্মীয়স্বজনের কাছে ফোন করছে। রাখাইন রাজ্যের অনেক বাসিন্দা নাফ নদে ছোট ছোট নৌকায় আশ্রয় নিয়েছে। তারা বাংলাদেশে ঢোকার ফাঁক খুঁজছে। আরাকান রোহিঙ্গা সোসাইটি ফর পিস অ্যান্ড হিউম্যান রাইটসের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ জুবায়ের জানান, উত্তর রাখাইনের মংডু শহরে এখন তীব্র লড়াই চলছে। ওই এলাকায় অনেক রোহিঙ্গার বসবাস। মিয়ানমারের লালবুনিয়ার ৪০০ থেকে ৫০০ রোহিঙ্গা বাড়িঘর ছেড়ে নৌকা নিয়েছে। এদের অনেকেই বাংলাদেশ থেকে মোবাইল ফোনের সিগন্যাল পাওয়ায় কক্সবাজার ক্যাম্পে স্বজনদের সঙ্গে যোগাযোগ করছে। কক্সবাজারের টেকনাফ উপজেলা কোস্টগার্ডের মুখপাত্র লেফটেন্যান্ট তাহসিন রহমান বলেছেন, ‘নাফ নদে মিয়ানমারের কতজন নাগরিক নৌকা নিয়ে ভাসছে জানা যায়নি। তবে সাম্প্রতিক দিনগুলোয় মিয়ানমারের প্রায় ২০০ নাগরিককে সীমান্ত থেকে ফিরিয়ে দেওয়া হয়েছে। সীমান্তে কঠোর নজরদারি রয়েছে। আমরা কাউকে নাফ নদ পেরিয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করতে দেব না।’

ভিসার লাইনে তরুণদের ভিড় : মিয়ানমারের বিদ্রোহী গোষ্ঠীগুলো দমন করতে জান্তা সরকার নাগরিকদের সামরিক বাহিনীতে যোগদান বাধ্যতামূলক করায় দেশ ছেড়ে যাওয়ার চেষ্টা করছে মিয়ানমারের তরুণরা। বার্তা সংস্থা এএফপির খবরে বলা হয়েছে, বৃহস্পতিবার ইয়াঙ্গুনের থাই দূতাবাসে দেড় হাজারের বেশি মানুষ লাইনে দাঁড়ায় ভিসার জন্য। দূতাবাস বলেছে, তারা দিনে ৪০০ টিকিট ইস্যু করছে। শিক্ষার্থী অং ফিও (ছদ্মনাম) এএফপিকে বলেন, তিনি বৃহস্পতিবার রাত থেকে দূতাবাসের সামনে অপেক্ষা করছেন।

সর্বশেষ খবর