রবিবার, ১৮ ফেব্রুয়ারি, ২০২৪ ০০:০০ টা

থামছে না সোনা চোরাচালান

নিজস্ব প্রতিবেদক

বিমানের সিট-টয়লেট, বিমানবন্দরের ডাস্টবিন, যাত্রীর পকেট-শরীর এমন কোনো জায়গা নেই যেখান থেকে চোরাচালানরে সোনা আটক করে না কাস্টমস ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। কিছুদিন পরপর ঢাকার হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে ধরা পড়ছে সোনার চালান। যেন বিমানবন্দরটি সোনার খনি!

২ ফেব্রুয়ারি বিমানবন্দরে সাড়ে ৩ কেজি সোনাসহ দুবাইফেরত যাত্রী এম মাসুদ ইমামকে আটক করেছেন শুল্ক গোয়েন্দারা। রাত পৌনে ১১টায় দুবাই থেকে ঢাকায় আসা ওই যাত্রীকে ১০ নম্বর বোর্ডিং ব্রিজে যুক্ত হওয়ার পর বিমান থেকে আটক করা হয়। জব্দ সোনাগুলোর বাজারমূল্য ৩ কোটি ১৪ লাখ ৮২ হাজার টাকা। গত ২০ ডিসেম্বর শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে এক নারী যাত্রীর ব্যাগ থেকে সোনার ৬৯টি বার ও ১টি সোনার চেইন জব্দ করেন শুল্ক গোয়েন্দারা। তারা জানান, জব্দ সোনার বাজারমূল্য আনুমানিক ৬ কোটি ৫৭ লাখ ৩৬ হাজার টাকা। ওই যাত্রীর নাম রেখা পারভীন। তিনি দুবাই থেকে এমিরেটস এয়ারলাইনসের একটি ফ্লাইটে ঢাকায় আসেন। এর আগে ৮ ডিসেম্বর শাহজালালে ৪ কোটি ৪১ লাখ টাকা মূল্যের ৪৯টি সোনার বারসহ এক যাত্রীকে আটক করে শুল্ক গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদফতর। ওই যাত্রীর নাম ফজলে রাব্বী। তিনি দুবাই থেকে ঢাকায় এসেছিলেন। শুল্ক গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদফতরের তথ্য অনুযায়ী, ২০১৩ থেকে ২০২২ সাল পর্যন্ত সারা দেশে অভিযান চালিয়ে ২ হাজার ৫৮৩ কেজি সোনা জব্দ করা হয়েছে। এসব অভিযানে অংশ নেয় শুল্ক গোয়েন্দা, কাস্টম হাউস, বিজিবি ও এয়ারপোর্ট এপিবিএন। গত বছরের ১২ জুন শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের ডাস্টবিন থেকে ৭ কেজি সোনা জব্দ করা হয়। আটক করা হয় একজন পরিচ্ছন্নতা কর্মীকে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী জানায়, দক্ষিণ এশিয়া ও মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলো থেকে আসা বারগুলো প্রধানত শাহজালাল ও চট্টগ্রাম শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর দিয়ে দেশে প্রবেশ করে। যেসব বাংলাদেশি সোনা বহন করেন দুবাই থেকেই তাদের ও তাদের একজন স্বজনের ফোন নম্বর, পাসপোর্টের কপি, বর্তমান ও স্থায়ী ঠিকানা, এনআইডির ফটোকপি রেখে দেওয়া হয়। প্রবাসীরা প্লেন থেকে নামার পর প্রথমে যান কাস্টম কর্তৃপক্ষের কাউন্টারে। সেখানে গিয়ে বারের ট্যাক্স দিয়ে রসিদ নেন। বার বৈধ করার সঙ্গে সঙ্গেই বাংলাদেশি ডিলারের প্রতিনিধি বিমানবন্দরের আশপাশ থেকে রসিদসহ সোনা বুঝে নেন। অবৈধভাবে কতটুকু সোনা দেশে আসে এ বিষয়ে কোনো হিসাব নেই বিমানবন্দরে কর্মরত কোনো সংস্থার কাছে। শুল্ক গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদফতরের মতে, বিদেশ থেকে সোনা দেশে আসার পর মূলত দুটি জায়গায় যায়। প্রথমত, বাংলাদেশের সোনা ব্যবসায়ীরা এটা কিনে নেন। দ্বিতীয়ত, ভারতে পাচার করা হয়। বিশ্বে সোনার দ্বিতীয় বৃহত্তম ভোক্তা দেশ ভারত। সূত্র জানান, ২০১৩ সালের ২৪ জুলাই বাংলাদেশের ইতিহাসে সবচেয়ে বড় সোনার চোরাচালান আটক করেছিলেন শুল্ক গোয়েন্দারা। এদিন বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসের একটি ফ্লাইটের কার্গো হোল্ড থেকে ১২৪ কেজি সোনা জব্দ করা হয়। এ ঘটনায় বিমানবন্দর থানায় মামলা হয়। তদন্ত শেষে ওই বছর বিমানের ১০ কর্মীসহ ১৮ জনের বিরুদ্ধে চার্জশিট দেয় ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)। গত ১০ বছরেও এ মামলার বিচার কার্যক্রম শেষ হয়নি। আসামিরাও বর্তমানে জামিনে রয়েছেন। ২০১৪ সালেও বিমানের এক ফ্লাইটের টয়লেটে লুকিয়ে রাখা ১০৬ কেজি সোনা জব্দ করা হয়। এটা ছিল জব্দ হওয়া দ্বিতীয় বৃহত্তম সোনার চালান। এ ঘটনার তিন বছর পর আদালতে চার্জশিট জমা দেয় ডিবি। তবে এখনো শাস্তি হয়নি কারও। শুধু এ দুটি নয়, নিম্ন আদালতসূত্রে জানা যায়, ২০১৯ থেকে ২০২১ সাল পর্যন্ত ঢাকায় সোনা জব্দের ঘটনায় হওয়া ১৮৭ মামলা এখন আদালতে বিচারাধীন।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর