রবিবার, ১৮ ফেব্রুয়ারি, ২০২৪ ০০:০০ টা

ঢুকছে মাদক জড়িত চক্র

সাখাওয়াত কাওসার

রাজধানীর উত্তরা থেকে ২৪ জানুয়ারি দুই দফায় সাড়ে ৮ কেজি কোকেন উদ্ধার করে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতরের (ডিএনসি)। এ সময় গ্রেফতার করা হয় চার বিদেশিসহ সাতজনকে। দেশের ইতিহাসে সর্ববৃহৎ কোকেনের চালান জব্দের পর তোলপাড় শুরু হয়েছে নানা দফতরে। কারণ এই দুটি চালান শাহজালাল (রহ.) আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের স্ক্যানিং সিস্টেম পার হয়ে দেশে প্রবেশ করে। শুধু তাই নয়, কেবলমাত্র এ চক্রটিই গত ৫ বছরে অন্তত ১৫টি চালান নিয়ে এসেছে বলে জানতে পেরেছে সংশ্লিষ্টরা। গ্রেফতার সাতজনের মধ্যে ছয়জনই আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন। এদিকে, গত বছরের ২০ সেপ্টেম্বর হযরত শাহজালাল (রহ.) আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে বিপুল পরিমাণ ‘টাপেন্টাডল’ মাদক উদ্ধার করেছে ডিএনসি। ভারতফেরত চারজনের কাছ থেকে এসব টাপেন্টাডল জব্দ করা হয়। তারা স্ক্যানিংয়ের পর গ্রিন চ্যানেল পার হয়ে বিমানবন্দর থেকে বের হওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন। জানুয়ারিতে ভয়ংকর মাদক ‘কোকেন’ উদ্ধারের ঘটনাটি শাহজালাল (রহ.) আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের স্ক্যানিং সিস্টেমটি নতুন করে আলোচনায় উঠে এসেছে। কারণ গ্রেফতারদের কাছেই তদন্ত সংশ্লিষ্টরা জানতে পেরেছেন বিমানবন্দর দিয়েই এই চক্রটি আরও অনেকগুলো চালান নিয়ে এসেছিলেন। এর মধ্যে ২৪ জানুয়ারি গ্রেফতার কেলভিন ইয়েংগি (৪২) গত বছরের ২৭ আগস্ট অন এরাইভাল ভিসায় কাতারের দোহা হয়ে বাংলাদেশে ঢুকেছিলেন। মিশন সম্পন্ন করে তিনি ৪ সেপ্টেম্বর বাংলাদেশ ত্যাগ করেন। এর পর ১৫ সেপ্টেম্বর বাংলাদেশে আসেন নোমথানডাজো তোয়েরা সোকো। এক সপ্তাহ অবস্থানের পর তিনি ও বাংলাদেশ ত্যাগ করেন। তবে ২৪ জানুয়ারি তিনি গ্রেফতার হয়েছেন। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এই স্ক্যানিং সিস্টেমের সঙ্গে অনেক রাঘববোয়াল জড়িত থাকতে পারেন। আবার বর্তমান স্ক্যানিং মেশিনটি যুগপোযুগী নয়। নিয়মিতভাবে এর সুযোগ নিয়ে নিচ্ছে মাদক এবং চোরাকারবারিরা। কৌশল হিসেবে ব্যবহার করছে কুরিয়ার সার্ভিসকে। এভিয়েশন এক্সপার্ট নুরুল হক বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, দেখুন শর্ষের মধ্যে ভূত থাকলে এমনটা হবেই। কারণ আন্তর্জাতিক দরপত্রের মাধ্যমেই স্ক্যানিং মেশিন কেনা হয়। এগুলো উন্নত দেশের এয়ারপোর্টের মতো না হলেও খারাপ না। সমস্যা সব সময়ই মানুষের মধ্যে। সার্বক্ষণিক ডগ স্কোয়াড রাখা হচ্ছে না কেন স্ক্যানিং এলাকায়? আবার যেসব সোনা বা গুরুত্বপূর্ণ দ্রব্যাদি জব্দ করা হচ্ছে সেগুলোও কি আমরা অক্ষত রাখতে পারছি? প্রশ্ন রাখেন তিনি। যদিও ডিএনসির পরিচালক (গোয়েন্দা ও অপারেশন) তানভীর মমতাজ স্ক্যানিং সিস্টেমের দুর্বলতাকে অন্যতম কারণ মনে করছেন। তিনি বলেন, স্ক্যানিং সিস্টেমকে ফাঁকি দিতে আন্তর্জাতিক মাদক মাফিয়ারা নানা কৌশল অবলম্বন করছে। সার্বক্ষনিক ডগ স্কোয়াডের ব্যবস্থা করা গেলে অনেক কাজে দিত। ২০২২ সালের ২২ মার্চ দক্ষিণ আফ্রিকা থেকে সপরিবারে দেশে ফিরেন মোহাম্মদ রায়হান। এ সময় ব্যাগের ভিতর একটি নোটবুকে অভিনব কায়দায় বিপুল পরিমাণ মাদক লাইসার্জিক অ্যাসিড ডাইইথ্যালামাইড (এলএসডি) লুকিয়ে আনেন। ওইদিন হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে পৌঁছানোর পর স্ক্যানিংয়ে ভয়ংকর মাদকের এ চালান ধরা পড়েনি। পরে ডিজিটাল পদ্ধতিতে গ্রাহকদের কাছে এলএসডি বিক্রি শুরু করেন। এক সময় ক্রেতা সেজে এলএসডি কিনতে গিয়ে র‌্যাব গ্রেফতার করে রায়হানকে। এর আগে ২০১৯ সালে প্রথমবারের মতো ডিএনসি অত্যন্ত ব্যয়বহুল এই মাদক জব্দ করে। এরপর কয়েকটি চালান জব্দ করে পুলিশ-র‌্যাব। এর সবই বিমানবন্দর দিয়ে দেশে ঢুকেছে। অথচ বিমানবন্দরের অবকাঠামোগত দুর্বলতার কারণে স্ক্যানিংয়ে ধরা পড়ছে না ভয়ংকর এই মাদক। গোয়েন্দারা বলছেন, এখনো মাঝেমধ্যেই দেশে ঢুকছে এলএসডি। অনলাইন প্ল্যাটফরম ব্যবহার করে বিক্রিও হচ্ছে। সূত্র বলছে, বিভিন্ন বন্দরগুলোতে বিদ্যমান স্ক্যানিং সিস্টেম দিয়ে মাদক ঠেকানো যাচ্ছে না উল্লেখ করে ডিএনসির পক্ষ থেকে কয়েক দফায় প্রতিবেদন পাঠানো হয়েছিল স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে। স্ক্যানিং দুর্বলতার কারণে মাদক মাফিয়াদের অন্যতম পছন্দের রুট বাংলাদেশ। যদিও পার্শ্ববর্তী দেশসহ বিশ্বের অনেক বিমানবন্দরে মাদক ঠেকাতে ডগ স্কোয়াড ব্যবহার হচ্ছে। ডগ স্কোয়াড সংযোজিত হলে ডিএনসির সক্ষমতা বাড়বে। তবে রহস্যজনক কারণে এসব সুপারিশ আলোর মুখ দেখে না। বিমানবন্দরে ডিএনসির সাত সদস্যের একটি দল দায়িত্ব পালন করলেও স্ক্যানিং এরিয়ায় তাদের উপস্থিতি সহ্য করতে পারেন না কয়েকটি সংস্থার সদস্যরা। এদিকে, ২০২২ সালেই শাহজালাল (রহ.) বিমানবন্দরে ইয়াবার দুটি চালান জব্দ করা হয়। চালান দুটি মধ্যপ্রাচ্যগামী দুটি ফ্লাইটে ঢাকা বিমানবন্দরে আসে। বিশেষ করে চোরাকারবারিরা কুরিয়ার সার্ভিস বেশি ব্যবহার করে। ওই পার্সেলের বিভিন্ন পণ্যের মধ্যে তারা নিয়ে আসছে বিভিন্ন ধরনের মাদক।

 

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর