সোমবার, ১৯ ফেব্রুয়ারি, ২০২৪ ০০:০০ টা

রাজশাহীতে অজ্ঞাত ভাইরাসে মৃত্যু দুই শিশুর

নিজস্ব প্রতিবেদক, রাজশাহী

রাজশাহীতে দুই শিশু মুনতাহা মারিশা (২) ও মুফতাউল মাসিয়া (৫) অজ্ঞাত ভাইরাসে মারা গেছে। তাদের শরীর থেকে সংগ্রহ করা নমুনা ঢাকায় পরীক্ষা শেষে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের আইসিইউ ইনচার্জ ডা. আবু হেনা মোস্তফা কামাল।

তিনি বলেন, ‘নমুনা সংগ্রহ করে তারা পরীক্ষার জন্য ঢাকায় পাঠিয়েছিলেন। গতকাল বিকালে সেই রিপোর্ট হাতে পেয়েছেন। তাতে উল্লেখ আছে, নিপাহ ভাইরাসে তাদের মৃত্যু হয়নি।’ এখন কোন ভাইরাসে তাদের মৃত্যু হলো, সেটি নিশ্চিত হতে গবেষণা করা হবে। দুই শিশুর বাবার নাম মঞ্জুর হোসেন (৩৫) ও মায়ের নাম পলি খাতুন (৩০)। তাদের বাড়ি রাজশাহীর দুর্গাপুর উপজেলার চুনিয়াপাড়া গ্রামে। মঞ্জুর রহমান রাজশাহী ক্যাডেট কলেজের গণিত বিভাগের শিক্ষক। পরিবার নিয়ে তিনি ক্যাডেট কলেজের কোয়ার্টারে থাকেন।

দুই শিশুকে তাদের গ্রামের বাড়ি দুর্গাপুর উপজেলার চুনিয়াপাড়ায় দাফন করা হয়েছে। তাদের মৃত্যুতে গ্রামের বাড়িতে শিশুদের দাদি আঞ্জুয়ারা এবং হাসপাতালে শিশুদের মা পলি খাতুনের আহাজারি কিছুতেই থামছে না।

হাসপাতালে মঞ্জুর-পলি দম্পতির পাশে আছেন তাদের স্বজন রইস উদ্দিন। তিনি গতকাল সকালে বলেন, বাড়িতে মঞ্জুর রহমানের মাকে বাঁচানো দায় হয়ে পড়েছে। কিছুতেই তার আহাজারি থামছে না। মাঝেমধ্যে জ্ঞান হারিয়ে ফেলছেন। তবে মঞ্জুরের বাবা শক্ত আছেন। এদিকে তিনি হাসপাতালের ওয়ার্ডে ঢোকার সঙ্গে সঙ্গে শিশু দুটির মা পলি খাতুন আহাজারি শুরু করেছেন। তাকেও কিছুতেই থামানো যাচ্ছে না।

রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের আইসিইউ ইনচার্জ ডা. আবু হেনা মোস্তফা কামাল বলেন, সকালেও তিনি ওই দম্পতিকে দেখেছেন। তাদের জ্বর আসেনি। তারা নিজেরা বরই খাননি বলে জানিয়েছেন। তবে তারা দুটো বাচ্চাকেই কাছে রেখেছিলেন। শিশুদের মাধ্যমে মা-বাবার শরীরেও ভাইরাসের সংক্রমণ হতে পারে। এই আশঙ্কায় তাদের হাসপাতালে রাখা হয়েছে। পরীক্ষায় নিপাহ ভাইরাস শনাক্ত হয়নি। ফলে কিছু আনুষ্ঠানিকতা শেষে তাদের ছেড়ে দেওয়া হবে। ক্যাডেট কলেজ চত্বরে থাকা গাছের বরই কুড়িয়ে এনে দুই শিশুকে খেতে দিয়েছিলেন গৃহকর্মী। না ধুয়েই সেই বরই খেয়েছিল এই দম্পতির দুই শিশু সন্তান। এরপরই অসুস্থ। রাজশাহী মেডিকেল কলেজ (রামেক) হাসপাতালের নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে শনিবার বিকাল ৫টার দিকে মারা যায় বড় মেয়ে মাসিয়া। তার আগে গত বুধবার (১৪ ফেব্রুয়ারি) মারা যায় ছোট মেয়ে মারিশা। দুজনেরই জ্বর ও বমির মতো একই লক্ষ্মণ ছিল। শনিবার বিকালে নিকটাত্মীয়দের মাধ্যমে মাসিয়ার লাশ গ্রামের বাড়িতে পাঠানো হয়। সন্ধ্যার পরে রাজশাহীর দুর্গাপুর উপজেলায় গ্রামের বাড়িতে লাশ দাফন করা হয়। এখানে গত বুধবার রাতে ছোট মেয়ে মারিশাকেও দাফন করা হয়েছে। রামেক হাসপাতালের ৩০ নম্বর ওয়ার্ডে থাকা মনজুর রহমান ও তার স্ত্রী পলি খাতুনের অবস্থা এখন পর্যন্ত স্থিতিশীল। তবে তাদের পাশাপাশি শয্যায় পর্যবেক্ষণে রাখা হয়েছে। শিশুদের বাবা-মাকে আর হাসপাতাল থেকে যেতে দেননি চিকিৎসকরা।

তারা দুই মেয়ের দাফনেও অংশ নিতে পারেননি। বর্তমানে এই দম্পতি রামেক হাসপাতালের আইসোলেশন ওয়ার্ডে ভর্তি আছেন।

 

পলি খাতুন জানিয়েছেন, গত মঙ্গলবার (১৩ ফেব্রুয়ারি) সকালে কোয়ার্টারের গৃহকর্মী কলেজ ক্যাম্পাসের গাছ থেকে বরই কুড়িয়ে এনে দুই মেয়েকে খেতে দিয়েছিলেন। সেই বড়ই না ধুয়েই খেয়েছিল মারিশা আর মাসিয়া। সেদিন তারা ভালোই ছিল। একসঙ্গে খেলাধুলাও করেছে। পরদিন বুধবার বেলা ১১টার দিকে হঠাৎ ছোট মেয়ে মারিশার শরীরে ভীষণ জ্বর আসে। এ সময় তারা বারবার পানি পান করছিল। দুপুর থেকে বমি শুরু হয়। তখন মেয়েকে নিয়ে তারা একটি মাইক্রোবাসে করে রাজশাহীর সিএমএইচ হাসপাতালে আসছিলেন। মাইক্রোবাসেও মারিশা বুকের দুধ পান করে। তবে শহরে অদূরে কাটাখালী এলাকায় মায়ের বুকেই মৃত্যু হয় মারিশার। এরপরও তাকে সিএমএইচে নেওয়া হয়। তবে সেখানে নেওয়ার পর চিকিৎসকরা জানান, শিশু মারিশা আর নেই। এরপর রাজশাহীর দুর্গাপুরে নিয়ে তার লাশ দাফন করা হয়। এদিকে শুক্রবার (১৬ ফেব্রুয়ারি) সকালে মাসিয়ার শরীরেও জ্বর আসে। একই সঙ্গে শুরু হয় বমি। অবস্থা বেগতিক দেখে দুর্গাপুরের গ্রামের বাড়ি থেকে দ্রুত উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স নিয়ে যাওয়া হয় তাকে। সেখান থেকে পরে তাকে রাজশাহী সিএমএইচে নেওয়া হয়। এরপর রাত বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে মাসিয়ার পুরো শরীরে ছোপ ছোপ কালশিটা দাগ উঠতে শুরু করে। তা দেখে সিএমএইচের চিকিৎসকরা মাসিয়াকে রামেক হাসপাতালে নেওয়ার পরামর্শ দেন। রাত ৯টার দিকে তাকে রামেক হাসপাতালে জরুরি বিভাগে নেওয়া হলে চিকিৎসকরা তাকে আইসিইউতে স্থানান্তর করেন। কিন্তু আইসিইউতে পর্যবেক্ষণে থাকা মাসিয়াও পরদিন শনিবার বিকালে মারা যায়। পলি খাতুন জানান, ছোট মেয়ে মারিশা মৃত্যুর পর তার পুরো শরীরে ছোপ ছোপ কালশিটে দাগ উঠতে শুরু করে। আর বড় মেয়ে মাসিয়ারও একই রকম কালশিটে দাগ উঠতে শুরু করে মৃত্যুর আগের রাতে।

এমন দাগ তিনি আগে কখনো দেখেননি বলে জানান।

সর্বশেষ খবর