মঙ্গলবার, ২০ ফেব্রুয়ারি, ২০২৪ ০০:০০ টা

উপজেলা ভোটে সরব বিএনপি নেতারা

কেন্দ্রের নির্দেশ উপেক্ষা

শফিকুল ইসলাম সোহাগ

বর্তমান সরকারের অধীনে কোনো নির্বাচনে না যাওয়ার সিদ্ধান্ত থাকলেও আসন্ন উপজেলা নির্বাচনে কেন্দ্রের নির্দেশ উপেক্ষা করে অনেকে অংশ নিচ্ছেন। নির্বাচনে যাওয়া নেতারা বলছেন, জাতীয় আর স্থানীয় নির্বাচনের প্রেক্ষাপট ভিন্ন। স্থানীয় নির্বাচনে অংশ নিয়ে তাদের জনপ্রিয়তা তুলে ধরার সুযোগ রয়েছে। তৃণমূলের অনেক নেতার এলাকায় ব্যক্তিগত জনপ্রিয়তা রয়েছে। এ ছাড়া আওয়ামী লীগের একাধিক স্বতন্ত্র প্রার্থী থাকবেন। এতে বিএনপির অনেক নেতার বিজয়ী হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।

এ প্রসঙ্গে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বাংলাদেশ প্রতিদিনকে জানান, ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সরকারের অধীনে নির্বাচন ‘শান্তিপূর্ণ হবে না’ বলেই তাঁরা মনে করেন। ফলে নির্বাচনে না যাওয়ার সিদ্ধান্ত তাঁরা আগে থেকেই নিয়ে রেখেছেন। বিএনপি এখনো সে সিদ্ধান্তেই অটল রয়েছে।

জানা যায়, নির্বাচনে অংশগ্রহণ না করার সিদ্ধান্তে বিএনপির হাইকমান্ড অটল থাকলেও চট্টগ্রাম বিভাগের কমপক্ষে ৩০ জন বিএনপি নেতা উপজেলা নির্বাচনে অংশগ্রহণের প্রস্তুতি নিচ্ছেন। যাঁরা বিগত সময়ে উপজেলা চেয়ারম্যান ও ভাইস চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করেছেন তাঁরা নির্দলীয় ব্যানারে নির্বাচনে অংশ নেবেন। শুধু চট্টগ্রাম বিভাগ নয়, সব জায়গায় নির্বাচনে অংশ নেওয়ার পক্ষে তৃণমূল বিএনপি।

বিএনপির দলীয় সূত্র জানান, জাতীয় সংসদ নির্বাচন বয়কট করলেও উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে অংশ না নেওয়ার বিষয়ে বিএনপির অবস্থান এখনো পুরোপুরি পরিষ্কার নয়। তবে উপজেলা নির্বাচন বয়কট করলেও কিছুটা কৌশলী দলটি। সে ক্ষেত্রে দল নির্বাচন বয়কট করলেও নেতা-কর্মীরা নির্বাচনে অংশ নিলে এর দায় নেবে না বিএনপি। আর নির্বাচনে অংশ নেওয়া নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে আগের মতো সাংগঠনিক কোনো ব্যবস্থা নেবে না দলটি। ২০১৪ সালের ১৯ ফেব্রুয়ারি দলীয় প্রতীকে স্থানীয় নির্বাচন শুরু হয়। বিএনপি ২০২১ সালের মার্চের পর থেকে সরকারের অধীনে কোনো নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেনি। বরং দলীয় সিদ্ধান্তের বাইরে গিয়ে স্থানীয় সরকার নির্বাচনে অংশ নেওয়ায় তৃণমূলের অনেক নেতাকে দল থেকে বহিষ্কার করে। এর আগেও সিটি করপোরেশন বা ২০১৯ সালের উপজেলা পরিষদ নির্বাচন বর্জন করার ঘোষণা দিয়েছিল বিএনপি। তা সত্ত্বেও দলটির তৃণমূলের অনেক নেতা অংশ নিয়েছিলেন। তাঁদের মধ্যে দেড় শতাধিক প্রার্থী বিজয়ীও হয়েছেন। বিএনপির একাধিক নেতার সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে অংশ নিতে পথ খুঁজছে বিএনপি। এ নির্বাচনে অংশ নেওয়া বা না নেওয়ার প্রশ্নে রাজনৈতিক ও সাংগঠনিক লাভক্ষতি হিসাব কষছেন জ্যেষ্ঠ নেতারা। কর্মীদের হতাশা দূর ও দল সাংগঠনিকভাবে শক্তিশালী করতে উপজেলা নির্বাচনে যাওয়ার পক্ষে কেউ কেউ অবস্থান নিয়েছেন। আর সে ক্ষেত্রে উপজেলা নির্বাচন প্রশ্নে নমনীয়তা দেখাতে পারে বিএনপি। অর্থাৎ দলীয়ভাবে আনুষ্ঠানিক ঘোষণা না দিলেও নেতা-কর্মীরা নির্বাচনে অংশ নিলে কারও বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে না। কেউ কেউ বলছেন, জাতীয় সংসদ নির্বাচন বর্জনের পরপরই উপজেলা নির্বাচন বিএনপিকে অনেকটা বিব্রতকর পরিস্থিতিতে ফেলেছে। ঘোষণা দিয়ে উপজেলা নির্বাচনে অংশ নিলে বিরোধীদের কাছ থেকে সরকারের ‘বৈধতা’ পাওয়ার বিষয়টি সামনে আসবে। মনে হতে পারে, সরকারকে মেনে নিয়েছে বিএনপি। এর সুযোগ নেবে সরকার। আর নির্বাচনে অংশ না নিলে মাঠপর্যায়ে জনপ্রতিনিধিত্বশীল নেতাদের ধরে রাখা কঠিন হয়ে পড়বে।

তবে দলের অবস্থান পরিষ্কার হওয়ার আগে অনেকেই প্রকাশ্যে বক্তব্য দিতে চান না। তাঁরা বলছেন, নির্বাচনে যেতে আমরা ইচ্ছুক। তবে দল যদি অফিসিয়ালি নির্বাচন করার ঘোষণা দেয় আর সে ক্ষেত্রে যদি নিজ নিজ অবস্থান থেকে নির্বাচনে অংশ নিতে বাধা না দেয় তাহলে আশাবাদী বিপুলসংখ্যক স্থানে আমরা জয়ী হব। স্থানীয় নির্বাচনে স্থানীয় প্রভাবই বেশি কাজ করে। সে ক্ষেত্রে বিএনপির অনেক স্থানীয় নেতা স্থানীয়ভাবে শক্তিশালী। কিশোরগঞ্জের ভৈরব উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান ও উপজেলা যুবদল সাধারণ সম্পাদক আল মামুন বলেন, স্থানীয় পর্যায়ে দলের শক্তিশালী অবস্থান ধরে রাখার জন্য এবার তিনি চেয়ারম্যান পদে ভোট করছেন। তিনি বলেন, যদিও এ নির্বাচনে সরকার পরিবর্তন হবে না তবু নেতা-কর্মীদের চাঙা রাখা ও ঐক্য ধরে রাখার জন্য ভোট করছেন। উপজেলা নির্বাচন সুষ্ঠু হলে জয়ের ব্যাপারে তিনি শতভাগ আশাবাদী। ফরিদপুর নগরকান্দা উপজেলা চেয়ারম্যান সৈয়দ শাহিনুজ্জামান বলেন, নির্বাচনে যাওয়ার ইচ্ছে আছে। বন্দর থানা বিএনপির সাবেক সভাপতি আতাউর রহমান মুকুল বলেন, উপজেলা নির্বাচন করব ইনশা আল্লাহ। নেত্রকোনার কেন্দুয়া উপজেলার দুবারের সাবেক চেয়ারম্যান ও বিএনপি নেতা দেলোয়ার হোসেন ভূইয়া দুলাল বলেন, তৃণমূলের অনেক নেতাই নির্বাচন করতে আগ্রহী। আমার প্রস্তুতি রয়েছে। এখন কেন্দ্রের সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় আছি। এ বিষয়ে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস আবদুল মঈন খান বলেন, উপজেলা নির্বাচন নিয়ে দলীয় ফোরামে কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি। কাউকে বাধা না দেওয়া কিংবা নিরুৎসাহ করা কোনো আলোচনায়ই হয়নি।

সর্বশেষ খবর