বুধবার, ২১ ফেব্রুয়ারি, ২০২৪ ০০:০০ টা
ইউরোপে মরণযাত্রা

ভূমধ্যসাগরে নিহত নয়জনের আটজনই বাংলাদেশি

কূটনৈতিক প্রতিবেদক

লিবিয়া থেকে নৌকায় করে সাগরপথে ইউরোপ যাওয়ার সময় তিউনিসীয় উপকূলে নৌ-দুর্ঘটনায় নিহত নয়জনের মধ্যে আটজনই বাংলাদেশি। তাদের মধ্যে পাঁচজন মাদারীপুরের ও তিনজন গোপালগঞ্জের। গতকাল লিবিয়ার বাংলাদেশ দূতাবাস থেকে তাদের নাম-পরিচয় প্রকাশ করা হয়েছে। এ ছাড়া ২৭ বাংলাদেশি নাগরিককে জীবিত উদ্ধার করা হয়েছে।

দূতাবাস জানায়, গত ১৪ ফেব্রুয়ারি একটি নৌকায় করে স্থানীয় সময় রাত সাড়ে ১১টায় লিবিয়ার জুয়ারা উপকূল থেকে ইউরোপের উদ্দেশে রওনা করে। পথে নৌকাটি তিউনিসীয় উপকূলে গেলে মধ্যরাত ৪টা ৩০ মিনিটে নৌকাডুবি হয়। নৌকাটিতে মোট ৫৩ জন ছিলেন। এদের মধ্যে ৫২ জন অভিবাসী এবং একজন নৌকার চালক। দুর্ঘটনার পর ৫৩ জনের মধ্যে ৪৪ জনকে জীবিত উদ্ধার করা হয়েছে। এদের মধ্যে ২৭ জন বাংলাদেশি নাগরিক। বাকিদের মধ্যে পাকিস্তানের আটজন, সিরিয়ার পাঁচজন, মিসরের তিনজন ও নৌকা মাঝি মিসরীয় নাগরিক। ওই ঘটনায় নৌকায় থাকা নয়জন অভিবাসী মারা গেছেন। এদের মধ্যে আটজন বাংলাদেশি নাগরিক। নিহত অপর ব্যক্তি পাকিস্তানের নাগরিক।

নিহত বাংলাদেশিদের পরিচয় : ১) সজল, গ্রাম : শেনদিয়া, ডাকঘর : খালিয়া, উপজেলা : রাজৈর, জেলা : মাদারীপুর; ২) নয়ন বিশ্বাস, বাবা : পরিতোষ বিশ্বাস, গ্রাম : কদমবাড়ি উত্তরপাড়া, ডাকঘর : কদমবাড়ি, উপজেলা : রাজৈর, জেলা : মাদারীপুর; ৩) মামুন সেখ, গ্রাম : সরমঙ্গল, ডাকঘর : খালিয়া (টেকেরহাট ১ নম্বর ব্রিজ), উপজেলা : রাজৈর, জেলা : মাদারীপুর; ৪) কাজি সজীব, বাবা : কাজী মিজানুর, গ্রাম : তেলিকান্দি, ইউনিয়ন : বাজিতপুর নতুন বাজার, উপজেলা : রাজৈর, জেলা : মাদারীপুর; ৫) কায়সার, গ্রাম : কেশরদিয়া, ইউনিয়ন : কবিরাজপুর, উপজেলা : রাজৈর, জেলা : মাদারীপুর; ৬) রিফাত, বাবা : দাদন, গ্রাম : বড়দিয়া, ইউনিয়ন : রাগদী, উপজেলা : মুকসুদপুর, জেলা : গোপালগঞ্জ; ৭) রাসেল, গ্রাম : ফতেহপট্টি, ইউনিয়ন : দিগনগর, উপজেলা : মুকসুদপুর, জেলা : গোপালগঞ্জ; ৮) ইমরুল কায়েস আপন, বাবা : মো. পান্নু শেখ, গ্রাম : গয়লাকান্দি, ইউনিয়ন : গঙ্গারামপুর গোহালা, উপজেলা : মুকসুদপুর, জেলা : গোপালগঞ্জ। এ ছাড়া মুমূর্ষু অবস্থায় হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন মাদারীপুর জেলার রাজৈর থানার আমগ্রাম ইউনিয়নের মনোরঞ্জন সরকারের ছেলে মনতোষ সরকার। পাসপোর্টবিহীন বাংলাদেশি রয়েছেন সাতজন। দূতাবাস জানায়, তিউনিসিয়া উপকূলে নৌ-দুর্ঘটনায় উদ্ধারকৃত বাংলাদেশিদের সার্বিক কল্যাণ ও মৃত্যুবরণকারীদের তথ্য নিশ্চিত করতে লিবিয়ার ত্রিপোলিতে অবস্থিত বাংলাদেশ দূতাবাসের প্রথম সচিব (শ্রম) মো. রাসেল মিয়ার নেতৃত্বে একটি দল তিউনিসিয়ার জারজিস শহরে অবস্থান করছেন। নিহত বাংলাদেশিদের বিস্তারিত তথ্য নিশ্চিত এবং স্থানীয় আইনি প্রক্রিয়া শেষে তাদের মৃতদেহ দেশে প্রেরণের জন্য দূতাবাস কাজ করছে। ঢাকায় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের আফ্রিকা অনুবিভাগের মহাপরিচালক এ এফ এম জাহিদ উল ইসলাম সাংবাদিকদের বলেছেন, প্রবাসীকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে মিলে লাশ আনার ব্যবস্থা করা হবে। এদিকে বাংলাদেশ প্রতিদিনের মাদারীপুর প্রতিনিধি জানান, মাদারীপুরের রাজৈরের পাঁচ যুবকের মৃত্যুর খবরে এলাকাজুড়ে শোকের ছায়া নেমে এসেছে। আদরের সন্তানদের হারিয়ে দিশাহারা পরিবার। কোনো সান্ত্বনাই থামাতে পারছে না স্বজনদের আহাজারি। এ ঘটনায় দালালের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি করেছেন স্বজন ও এলাকাবাসী। লাশ দেশে ফিরিয়ে আনার জন্য সরকারের সাহায্য প্রার্থনা করছেন পরিবারের সদস্যরা। পুলিশ বলছে, আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে। স্বজনরা জানান, গত ১৪ জানুয়ারি মাদারীপুরের রাজৈর উপজেলার কয়েকজন যুবক ইতালির উদ্দেশে বাড়ি থেকে বের হয়। ব্যাংক ঋণ ও সুদে এনে দালালদের দেওয়া টাকা পরিশোধ করা নিয়ে দুঃচিন্তায় স্বজনরা। একাধিক স্বজনদের অভিযোগ, মানব পাচারকারী চক্রের সক্রিয় সদস্য গোপালগঞ্জের মুকসুদপুর উপজেলার রাঘদি ইউনিয়নের সুন্দরদী গ্রামের বাদশা কাজীর ছেলে মোশারফ কাজী ইতালি নেওয়ার প্রলোভন দেখিয়ে প্রত্যেকের কাছ থেকে নেয় ১৩-১৫ লাখ টাকা। পরে অতিরিক্ত যাত্রীবোঝাই করে ইঞ্জিনচালিত নৌকায় ইতালি পাঠালে ঘটে এ দুর্ঘটনা। এই কাজে সহযোগিতা করে মোশারফের ছেলে যুবরাজ কাজী।

মাদারীপুরের পুলিশ সুপার মাসুদ আলম জানান, নিহতদের পরিবার মামলা করলে পুলিশ সব ধরনের আইনি পদক্ষেপ নেবে।

সর্বশেষ খবর